মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসায় অবহেলা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

নতুনধারা
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
চিকিৎসায় অবহেলা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসা খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য বিরাজ করছে। একদিকে মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না; অন্যদিকে, ভুল চিকিৎসা ও ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ভুল চিকিৎসায় বা চিকিৎসা অবহেলায় প্রায়ই রোগীর মৃতু্য ঘটছে। অবশ্য বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।

আমরা জানি, একজন চিকিৎসকের কাছে যখন একজন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন, তখন লিখিত থাকুক বা না থাকুক উভয়ের মধ্যে একটি অলিখিত সুনির্দিষ্ট চুক্তির সৃষ্টি হয়। সেখানে অর্থের বিনিময়ে বা বিনিময় ছাড়াই সেবা প্রদানের বিষয়টি মুখ্য হয়ে ওঠে। এই চুক্তি বলবৎ থাকা অবস্থায় চিকিৎসকের অবহেলার কারণে যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে এ বিষয়ে তার আইনি প্রতিকার লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। আইনি পরিভাষায় 'মেডিকেল নেগলিজেন্স' বা চিকিৎসায় অবহেলা বলতে মূলত চিকিৎসক ও রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত অন্য ব্যক্তিদের অবহেলাকেই বোঝায়।

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে বিশ্বের অনেক দেশে টর্ট আইনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে টর্ট আইনে বিচারের জন্য আদালতে ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই সাধারণত ফৌজদারি আদালতে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি চেয়ে বা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে হয়। চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়ে আমাদের দেশে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই। এ কারণে কোন কোন কাজগুলো চিকিৎসায় অবহেলা হিসেবে গণ্য হবে এবং অবহেলার প্রমাণ পেলে কখন ফৌজদারি মামলা করা যাবে, কী পরিমাণ শাস্তি বা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সেসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। এ কারণে এসব মামলার ক্ষেত্রে অন্য আইনগুলোতে থাকা অবহেলা ও ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত বিধান এবং আদালতের নজিরের ওপর নির্ভর করতে হয়।

চিকিৎসা অবহেলার কারণে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভুক্তভোগী মামলা করতে পারবেন। অধস্তন আদালত ছাড়াও সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে হাইকোর্টে রিট করা যাবে। এসব মামলায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কিছু নজির রয়েছে। তবে রোগীর ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। তাই চিকিৎসায় অবহেলা ও এর ফলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি আদালতের বিবেচনাপূর্ণ এখতিয়ারের ওপর নির্ভর করে।

চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর প্রতি অবহেলা করবেন না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নিজের বুদ্ধিমত্তা ও পেশাগত দক্ষতা প্রয়োগ করেই তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করার পরও কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেটা ভিন্ন কথা। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের অবহেলা ও উদাসীনতায় ভুল চিকিৎসায় মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েছেন অনেক রোগী। দোষী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএমডিসিকে আরও ক্ষমতায়নের পাশাপাশি রোগীদের সুষ্ঠু আইনের তদারকি বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে