শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

বদলি আতঙ্কে দর্শনা কেরুজ চিনিকলের কর্মীরা

দামুড়হুদা( চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
  ১০ মে ২০২৫, ১৫:২৪
বদলি আতঙ্কে দর্শনা কেরুজ চিনিকলের কর্মীরা
ছবি: যায়যায়দিন

দেশের সর্ববৃহত ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরুজ কমপ্লেক্স। সরকারের লাভ জনক এ প্রতিষ্ঠানটির চিনি কারখানায় ধ্বস নেমেছে ১ যুগেরো আগে। ফি বছর ওই কারখানায় মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয় কর্তৃপক্ষকে। চিনি কারখানা সহ বিভিন্ন বিভাগের লোকসান পুষিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মুনাফা অর্জন হচ্ছে ডিস্টিলারী বিভাগে।

একের পর এক শ্রমিক-কর্মচারিদের অন্য মিলে বদলি, মিলের বন্ডেড ওয়ার হাউজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ ইনচার্জদের আকস্মিক বদলি করে সেখানে অদক্ষ কর্মচারী দিয়ে চালানো হচ্ছে।

বদলি আতংকে শুধুই শ্রমিক-কর্মচারিরাই নয়, এ আতংকে ভুগছেন খোদ নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ। এতে কর্ম উদ্দিপনা হচ্ছে ব্যহত। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নিয়ন্ত্রনাধীন কেরুজ কমপ্লেক্স। চিনি কারখানা, ডিস্টিলারী, খামার, জৈব সার কারখানা সহ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিভাগ। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরুজ কমপ্লেক্সে চিনি কারখানায় ১ যুগেরো বেশী সময় ধরে প্রতি বছর প্রচুর অংকের লোকসান গুনছে। পাশাপাশি লোকসান গুনতে হয়েছে খামার সহ অন্যান্য বিভাগেও। শুধুমাত্র ডিস্টিলারী বিভাগের মুনাফা অর্জনের অর্থ দিয়ে অন্য বিভাগের লোকসান পুষানো হয়ে থাকে।

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ডিস্টিলারী বিভাগে বিলেতি মদ (ফরেণ লিকার) উৎপান হয়েছিলো ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৮ কেস। ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৭৪ কেস বিক্রি হয়েছিলো। অথচ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের একই সময়ে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ২১৯ কেস। ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৭৫৭ কেস বিক্রি হয়েছে। ৮১ হাজার ৫৯৯ কেস উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি টাকার পরিমান ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার। বিক্রয় ঘাটতি ৭৯ হাজার ৯১৭ কেস। যার টাকার পরিমান ১৪৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার। চলতি অর্থ বছর শেষ হতে আর মাত্র ২ মাস বাকি। এ সময়ের মধ্যে উৎপাদন ও বিক্রয় ঘাটতি কোন ভাবেই পুরণ সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিকে কেরুজ চিনিকলে গত ৪ মাসে ৭ জন শ্রমিক-কর্মচারিকে দেশের বিভিন্ন মিলে বদলি করা হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি কেরুজ পারবতিপুর বন্ডেড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ, শ্রমিক নেতা সৌমিক হাসান রূপমকে বদলি করা হয় বন্ধ চিনিকলে পঞ্চগড়ে। ২৪ ফেব্রুয়ারি কেরুজ ডিস্টিলারী বিভাগের সেলস অফিসার, সহকারি ব্যবস্থাপক (বানিজ্যিক) জহির উদ্দিনকে বদলি করা হয়েছে রাজশাহী চিনিকলে। ১৬ এপ্রিল কেরুজ ডিস্টিলারী বিভাগের ফরেণ লিকার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বদলি করা হয়েছে ঠাকুরগাও চিনিকলে। এ ছাড়া গত বুধবার কেরুজ শ্রীমঙ্গল বন্ডেড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ এজাজ আহমেদ বাপ্পিকে বদলি করা হয়েছে জ্বিল বাংলা সুগার মিলে জ্যেষ্ট করনীক (প্রশাসন) বিভাগে। কেরুজ চিনিকলের কারখানা বিভাগের নির্মান শাখার সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলমকে পদায়ন করা হয়েছে শ্রীমঙ্গল বন্ডেন্ড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ হিসেবে। কেরুজ কৃষি খামারের জ্যেষ্ট করনীক কাম স্টোর ক্লার্ক মহিউদ্দিনকে বরিশাল বন্ডেড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া কেরুজ চিনিকলের কৃষি বিভাগের জ্যেষ্ট চেকিং ঋন করনীক ইমতিয়াজুর রহমানকে পদায়ন করা হয়েছে পাবনা বন্ডেড ওয়ার হাউজে। ঢাকা ওয়ার হাউজের ইনচার্জ আব্দুর রশিদ গত ১৫ এপ্রিল চাকরী থেকে অবসর গ্রহন করায় সে স্থানে পদায়ন করা হয়েছে হিজলগাড়ি ফার্মের করনীক হারুন অর রশিদকে। গত ৫ জানুয়ারি সৌমিক হাসান রূপমকে পারবতিপুর ওয়ার হাউজ থেকে বন্ধ পঞ্চগর চিনিকলে বদলি করা হলেও রাতারাতি ওই হাউজে পদায়ন করা হয় রাশিদুল ইসলামকে।

সম্প্রতি পদায়নকৃত ঢাকা, পাবনা, রাজশাহী, শ্রীমঙ্গল, পারবতিপুর বন্ডেড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ হিসেবে যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকই নতুন। মিলের গুরুত্বপূর্ণ ওই সমস্ত হাউজগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রশিক্ষনের। প্রশিক্ষন বিহীন হাউজ পরিচালনা করা হচ্ছে। কয়েকজন ইনচার্জের সাথে আলোচনাকালে তারা বলেন, করপোরশেন কর্তৃক ওয়ার হাউজের জন্য ১৯ জনের সেটাপ রয়েছে। মানা হচ্ছে না সেটাপ নীতি।

এ দিকে মিলের শ্রমিক-কর্মচারিদের কেউ কেউ ফ্যাসিস্টের দোসর বিধায় বদলি ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে বহু কর্মকর্তাওতো দীর্ঘদিন একই চেয়ারে। তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এ ব্যাপারে মিলের শ্রমিক-কর্মচারিরা দুষছেন নেতৃবৃন্দদের। তাদের ভাষ্য মতে আজ নেতৃত্বহীন ইউনিয়ন। অভিভাবকহীন শ্রমিক-কর্মচারিরা। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়ার জন্য কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বহুবার কল দিলেও ফোনে কল ডুকানো সম্ভব হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে