সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক

নতুনধারা
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

আজ মহান একুশে ফেব্রম্নয়ারি। ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ বাঙালির জাতীয় আত্মপরিচয় ও স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার দাবিকে উচ্চে তুলে ধরার ঐতিহাসিক মাইলফলক দিবস। 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি' রক্তে রাঙানো সেই ২১ ফেব্রম্নয়ারি। আজ চারদিকে ধ্বনিত হবে এই অমর সঙ্গীতের অমিয় বাণী। ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন- বাঙালি জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন তাদের। ভালোবাসা জানাবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রম্নয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিবাদ প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষকাল। এই দিনের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য- বাঙালির জাতীয় আত্মপরিচয় ও স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অপরিসীম।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রম্নয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বস্তুত মহান ২১ ফেব্রম্নয়ারি একদিকে শোকাবহ, অন্যদিকে আমাদের জাতীয় জীবনের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। আর এ কথাও স্মর্তব্য, পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি, যারা ভাষার জন্য এ মাসে জীবন দিয়েছিল।

ভাষা আন্দোলনের বহুমাত্রিক অর্জন আমাদের জানা। ফলে, নানা ধরনের সংকটে বা ব্যর্থতার সুযোগে যেসব অর্জন কার্যত ইতোমধ্যেই ফিকে হয়ে এসেছে- দেশের সচেতন মানুষের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় সাধ্যমতো সেগুলো তুলে ধরা। যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আবার নতুন উৎসাহে হারানো বিজয়গুলো পুনরায় অর্জন করতে পারে এবং তার মাধ্যমে দীক্ষিত হতে পারে। নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে আগামী দিনের জন্য। উলেস্নখ্য, ভাষা আন্দোলনের চেতনার পথ ধরেই সবাই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেন। শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, বাদ্যশিল্পী, ছাত্র ও যুব সংগঠন, নারী সমাজসহ সমগ্রবাঙালি জাতি। যা আমাদের অনন্য অর্জন।

এ কথাও বলা দরকার, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টে। ছয় থেকে সাত মাস যেতে না যেতেই ১৯৪৮ সালের মার্চে বাঙালি তরুণরা 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' বলে মাঠে নেমে পড়লেন। তাদের যে উদ্দীপনা দেশপ্রেম ও ভাষাপ্রেম পরিলক্ষিত হয়, আজ তা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। কারণ ১৯৪৭ সালে মূলত অসাম্প্রদায়িক শক্তির পরাজয় ঘটেছিল, সেখানে ১৯৪৮-এর শুরুতেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ভিত্তিমূলেই আঘাত হানার মাধমে সেই শক্তি আবার জেগে ওঠে। এত দ্রম্নততার সঙ্গে আন্দোলনটির সূচনা হলো যে, ব্যাপক মানুষের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে তা বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির স্বীকৃতির পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে বাংলা সাহিত্যের প্রসারে বাঙালি কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিকদের নতুন নতুন বই লিখতে ও প্রকাশ করতে, বইমেলার প্রচলন হতে, ধীরে ধীরে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটতে। বস্তুত সমাজে এক বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে সমাজদেহ থেকে সাম্প্রদায়িকতা উচ্ছেদ বা হ্রাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আজ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, গড় মাথাপিছু আয় বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে। আমরা বিশাল বিশাল বাজেট পাস করছি তাও সত্য। কিন্তু মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য কি কমেছে? সর্বস্তরে বাংলা ভাষা কি চালু হয়েছে? অমর একুশের দিনে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব প্রশ্ন সামনে চলে আসে স্বাভাবিকভাবেই। ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে এ কথা আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, বাঙালি ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের বিপুল অর্জনের পাশাপাশি আমাদের ব্যর্থতাও রয়েছে। সঙ্গত কারণেই ব্যর্থতা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। সেই লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে