সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানব পাচার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানব পাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। নানাভাবে মানব পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি তিউনিসিয়ার কাছে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত হয়েছেন ৯ জন। ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই বাংলাদেশি। ৮ বাংলাদেশির পরিচয় জানা গেছে। নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে মাদারীপুর জেলার ৫ জন এবং গোপালগঞ্জের ৩ জন। ওই নৌকা থেকে আরও ২৭ জন বাংলাদেশিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা মুমূর্ষু। এর আগে ১৭ ফেব্রম্নয়ারি শনিবার লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এক ফেসবুক পোস্টে জানায়, লিবিয়া উপকূল থেকে ৫২ জনের একদল অভিবাসী সাগর পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ১৫ ফেব্রম্নয়ারি তিউনিসীয় উপকূলে তাদের বহনকারী নৌকাটিতে অগ্নিকান্ড ঘটে। পরবর্তী সময়ে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী নৌকাটি থেকে ৯ অভিবাসীর মৃতদেহ এবং ৪৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। নৌকার আরোহীদের মধ্যে মিশর, পাকিস্তান ও সিরিয়ার নাগরিকও ছিল।

বাংলাদেশ থেকে ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা অন্তত ১৮টি রুট ব্যবহার করে। তারা বিভিন্ন দেশে বসে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। জানা গেছে, দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিদেশে লোক পাঠানোর বৈধ লাইসেন্স নেই। প্রশাসনের নজরদারি ও স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাবে দালালরা বিদেশে পাঠানোর নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ইউরোপের কোনো দেশে পাঠাতে একেকজনের কাছে থেকে নেওয়া হয় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রধান টার্গেট এলাকার বেকার যুবক। টাকা নিয়ে প্রথমে তাদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠানো হয়। সেখানে দালাল চক্রের আরেক গ্রম্নপ তাদের দু-তিন দিন দুবাইয়ে রাখে। সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। সুবিধামতো সময়ে দালালরা নৌকা বা ট্রলারে করে তাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে দুই-একজন ইতালিতে যেতে পারলেও বেশিরভাগই সাগরে নিখোঁজ হন বা মারা যান। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে, এর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।

মনে রাখতে হবে, মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল-আকাশপথে প্রতিদিন মানব পাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশিরভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথে মারা যাচ্ছে।

আমরা মনে করি, মানব পাচার ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে পাচারকারীদের শনাক্ত ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। মানব পাচার বন্ধ করতে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে