সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৩ নাবিকের ভাগ্য নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

নতুনধারা
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

২৩ নাবিকের ভাগ্য নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা- এমন পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, খবরে উঠে এসেছে যে, ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী 'এমভি আবদুলস্নাহ' জাহাজ জিম্মি করে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদসু্যরা। আর জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে জিম্মি করে গুলি ছুড়ে ভয় দেখাচ্ছে তারা। টাকা না দিলে একজন একজন করে গুলি করে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নাবিকদের পরিবারে যেমন বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, তেমনি নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আলোচনায় আসছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

বলা দরকার, নাবিকদের উদ্ধার এবং এই ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উদ্যোগী হতে হবে। এছাড়া আগামীতেও নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাবিকদের স্বজনরা চট্টগ্রামে জাহাজটির মালিকপক্ষের কার্যালয়ে ছুটে এসে নাবিকদের উদ্ধারের আকুতি জানিয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও মালিকপক্ষ- জিম্মি নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে। আমরা মনে করি, নাবিকদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় তৎপরতা ও পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে স্মর্তব্য যে, বেশ কয়েক বছর স্তিমিত থাকলেও সম্প্রতি নতুন করে ব্যাপক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে সোমালি জলদসু্যদের- যা এড়ানোর সুযোগ নেই।

গত মঙ্গলবার এই জলদসু্যরা বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই করে ২৩ জন নাবিককে জিম্মি করেছে। মূলত লোহিত সাগরে হুতিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো বেশি ব্যস্ত থাকার সুযোগে ভারত মহাসাগরের গালফ অব এডেনে তারা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। জানা যায়, ইতালিয়ান ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে ১৯৬০ সালে সোমালিয়ার জন্ম। ১৯৯১ সালে সামরিক শাসনের উৎখাতের পর নৈরাজ্যের মধ্যে পড়ে দেশটি। পরের দুই দশকের বেশি সময় যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বস্ত সোমালিয়াতে কার্যকর কোনো সরকার ছিল না। এই সময়টাতে আফ্রিকার মধ্যে দীর্ঘতম উপকূল সমৃদ্ধ দেশটির জলসীমার নিরাপত্তায় কোনো কোস্টগার্ড বা বাহিনী ছিল না। আর এতে এই অঞ্চলে বিদেশি মাছ ধরা নৌযানের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়তে থাকে। এতে স্থানীয় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। ফলে, তারা দসু্যবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমরা মনে করি, সোমালিয়া জলদসু্যদের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে ভাবতে হবে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী হতে হবে। কেননা একের পর এক জাহাজ জিম্মি, নাবিকের নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি তৈরি হবে এটা কাম্য হতে পারে না।

আমলে নেওয়া দরকার, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ 'এমভি আবদুলস্নাহ' ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদসু্যদের কবলে পড়ার পর ফিরে আসছে 'এমভি জাহান মণি'র স্মৃতি। কেননা, ১৩ বছর আগে ওই ঘটনায় সোমালি জলদসু্যরা 'এমভি জাহান মণি'র ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করেছিল। নানাভাবে দেনদরবার ও দর কষাকষি শেষে দসু্যদের সঙ্গে সমঝোতায় ১০০ দিন পর মুক্তি মেলেছিল তাদের। ফলে এবার জলদসু্যর কবলে পড়া 'এমভি আবদুলস্নাহ'র ২৩ নাবিককে মুক্ত করার চেষ্টার ক্ষেত্রে জাহান মণির অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছে মালিকপক্ষ। আমরা বলতে চাই, যখন এই আলোচনাও সামনে আসছে যে, জিম্মি মুক্তির ক্ষেত্রে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলদসু্যদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা এবং মুক্তির বিভিন্ন শর্ত নির্ধারণ করে মুক্তিপণের বিষয়টির সুরাহা করা- তখন এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। সতর্কতার সঙ্গে যেমন নাবিকদের উদ্ধার করার চেষ্টা চালাতে হবে, তেমনি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নাবিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়কে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ২৩ নাবিকের ভাগ্য নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। যা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া জাহাজ জিম্মি করে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদসু্যরা অন্যদিকে জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে জিম্মি করে গুলি ছুড়ে ভয় দেখাচ্ছে- ফলে এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে