রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে হবে

মারুফ হাসান ভূঞা চট্টগ্রাম
  ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা পেতে ভয়াবহ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত হাসপাতালের অভাব স্পষ্ট দৃশ্যমান। যে কয়েকটি হাসপাতাল কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স রয়েছে, সেগুলোর যাচ্ছে যা অবস্থা। হাসপাতালের রোগী অনুপাতে সিট সংকট রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স স্বল্প পরিমাণে রয়েছে, যা রোগী অনুপাতে অত্যন্ত কম। যার ফলে যারা হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। একদিকে ডাক্তার, নার্সের স্বল্পতা। অন্যদিকে আধুনিক মানসম্মত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের স্বল্পতা। যোগাযোগ ব্যবস্থা তো এতই দুর্বল যে রোগী হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বেই মারা যায়। কিংবা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুব্যবস্থা বা বিকল্প ব্যবস্থা নেয়। যা খুবই মর্মান্তিক একটা বিষয়। দুর্গম পাহাড়ে কেউ অসুস্থ কিংবা আকস্মিক দুর্ঘটনার স্বীকার হলে, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার যে জরুরি ব্যবস্থা থাকার দরকার সেটিও নেয়। অনেকবার খবরের শিরোনামও হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে আকস্মিক অসুস্থ বা দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃতু্য। কিংবা আদিবাসী অসুস্থ রোগীকে অন্য দুইজন কাপড়ে ঝুলিয়ে অথবা কাঁধে করে দুর্গম পাহাড় বেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আজকের আধুনিক দেশের যে দৃশ্যমান প্রচারণা আমরা চারদিক থেকে শুনতে পাই, সে প্রচারণাগুলোর মধ্যে আধুনিকতার স্পর্শ পেয়েছে কোনো কোনো মৌলিক বিষয়গুলো? এখনো যদি হাসপাতালে রোগী বহন করতে হয় কাঁধে কাপড় ঝুলিয়ে কিংবা কাঁধে বহন করে। তাহলে কোন আধুনিকতার স্পর্শের প্রচারণা আমরা দেখছি? হাসপাতালে রোগীর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে সেবাটি এখনো পরিপূর্ণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়নি। এখনো প্রাইভেট হাসপাতালের ওপর নির্ভর হতে হয়। যে নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য যেটি একেবারেই সংকীর্ণ। পার্বত্য চট্টগ্রামের হাসপাতাল সমূহে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার উপযোগী কোনো সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি নেয় বললে চলে, যেগুলো রয়েছে সেগুলো দিয়ে সেবা গ্রহণ করতে রোগীদের আলাদা খরচ বহন করতে হয়। যদিও এই পরিষেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না পেয়ে পাহাড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের শোনবার কেউ নেয়। তাদের ওপর বঞ্চনা যেন 'চাহিবামাত্র বঞ্চনা পেতে বাধ্য থাকিবে' এমন বচনে নির্ভর করছে। একদিকে পাহাড়ি বসতি ধ্বংস করে, পাহাড় কেটে তথাকথিত হোটেল, রেস্তোরাঁ হচ্ছে। আবার সে হোটেলে সহজভাবে ভ্রমণের জন্য রাস্তাও হচ্ছে। কিন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্মত হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে না। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও নিয়োগ হচ্ছে না। কিংবা দুর্গম পাহাড় ও দুর্গম অঞ্চল থেকে রোগী আনা-নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা বা হেলিকপ্টার ব্যবস্থা নেয়। অথচ সেনাবাহিনী কিংবা সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা যদি আহত বা অসুস্থ হয়, ঠিক হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা থাকবে। এই ব্যবস্থার সমালোচনা করছি না, এই ব্যবস্থা সব আদিবাসীর জন্যও যেন চালু থাকে সে প্রত্যাশা করছি। সুতরাং সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে পাহাড়ে স্বাস্থ্যসেবা যাতে সব আদিবাসীর জন্য কার্যকর হয়, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সব হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর করে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে মানসম্মত হাসপাতালের পরিবেশ নিশ্চিত ও পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি দুর্গম পাহাড়ের রোগীদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রস্তুত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সাধারণ আদিবাসীদের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে