রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের দায় ও করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, দরিদ্র দেশগুলোকে গ্রিন এনার্জির দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, এই যে জলবায়ু পরিবর্তন তার দায় সবার- কারো কম তো কারো বেশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব জাতি এবং রাষ্ট্রসমূহ একই সারিতে দাঁড়িয়ে যদি নিজ নিজ দায়িত্বটুকু পালন করে তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব।
মুখলেসুর রাহমান
  ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের দায় ও করণীয়

কোনো একটি জায়গায় বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়ার যে গড়-পড়তা ধরন, তাকেই বলা হয় জলবায়ু। আবহাওয়ার সেই চেনাজানা ধরন বদলে যাওয়াকেই বলা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। পৃথিবী গরম হয়ে পড়ছে এবং তার ফলে দ্রম্নত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার বহুদিনের চেনাজানা আচরণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশ, প্রকৃতি ও অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ায় উত্তর মেরুর জমাট বাঁধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রম্নত গলে যাচ্ছে। ফলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকূলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

এছাড়া সাইবেরিয়ার মতো অঞ্চলে মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেনের মতো ক্ষতিকারক গ্রিন হাউস বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বেড়ে যাবে, পৃথিবীর উষ্ণতা আরো বাড়বে এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে।

আর প্রকৃতি তাদের চিরচেনা আবহাওয়া বদলের জেরে অনেক প্রাণী নতুন জায়গায় চলে যাবে বা যাওয়ার চেষ্টা করবে।

কিন্তু জলবায়ুর এই পরিবর্তন এত দ্রম্নত হারে ঘটছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যেমন, বরফ গলতে থাকায় মেরু ভালস্নুক বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালস্নুক ও পেঙ্গুইন পাখিও বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

পাশাপাশি, আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ বিপন্ন হবে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর পানি গরম হয়ে যাচ্ছে।

ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমন্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানির এসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আগামী ২৫ বছরে বিশ্ব অর্থনীতির আয় কমবে ১৯%। উলেস্নখযোগ্য, এই উষ্ণায়নের জন্য যে সমস্ত দেশ কম দায়ী, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক বছর বিশ্ব অর্থনীতিকে ৩৮ লাখ কোটি ডলার করে মূল্য দিতে হবে বলে দাবি করা হলো জার্মানির পোট্‌সডাম ইনস্টিটিউিট ফর ক্লাইম্যাট রিসার্চের (পিআইকে) বিজ্ঞানীদের করা এক সমীক্ষায়। তাদের দাবি, মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আগামী ২৫ বছরে বিশ্ব অর্থনীতির আয় কমবে ১৯%। বিশ্বের ১৬০০টি অঞ্চলের গত ৪০ বছরের জলবায়ু হিসেবে দেখে রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে। সাময়িক পত্রিকা 'নেচার'-এ প্রকাশিত হয়েছে রিপোর্টটি। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ন কোটজ বলেন, 'অতীতের নিঃসরণের কারণে ২০৪৯ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হবে ১৯%। যা বিশ্বের জিডিপির ১৭% কমার সমান।' রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, আগামী আড়াই দশকে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। তাদের আয় কমবে ২২ শতাংশের কাছাকাছি। সমীক্ষক দলের আর এক সদস্য লিওনি ওয়েঞ্জ জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে না আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্সসহ উন্নত দেশগুলোও। কার্বন নিঃসরণের জেরে ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে আগামী দিনে ক্ষতি হবে তার প্রায় ছ'গুণ বেশি।

এখন আসা যাক এই যে জলবায়ু পরিবর্তন আসলে দায় কতটুকু আমাদের, প্রথমেই একটা বিষয় বলে নেয়া যাক, জলবায়ু পরিবর্তনের পুরোপুরি দায়ভার আমাদেরই মানে এ ধরণিতে বসবাসকারী মানুষকেই নিতে হবে। 'পুরোপুরি' বলছি এর কারণ

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক সৃষ্ট কারণসমূহের দায়ভার খুবই যৎসামান্য।

\হজলবায়ু ও পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সব সময়ই একটি বড় বিতর্কের বিষয় হচ্ছে, কে বা কারা অধিক কার্বন নিঃসরণ ও জলবায়ুর ক্ষতির জন্য দায়ী। উন্নত দেশগুলো এজন্য হালের শিল্পোন্নত ও অধিক জনসংখ্যার দেশ চীন-ভারতকে দায়ী করে থাকে। তাদের যুক্তি এদের জনসংখ্যা বেশি, ভোগও বেশি- সুতরাং, এরাই পরিবেশ বিপর্যয়ে অধিক দায়ী।

অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বক্তব্য- শিল্পবিপস্নবের পর উন্নত দেশগুলো প্রচুর জ্বালানি ব্যবহার করে মুনাফার নামে পরিবেশ ও জলবায়ুর অধিক ক্ষতি করেছে এবং সে কাজটি করা হয়েছে কয়েকশ বছর ধরে তেল-গ্যাস-কয়লা পোড়ানোর মাধ্যমে। চীন-ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিল্পায়নের ইতিহাস ৫০-৬০ বছরের। পশ্চিমারা সে কাজ করে এসেছে তিনশ-চারশ বছরের অধিক সময় ধরে। অতএব, পরিবেশ বিপর্যয়ের দায় তাদেরই অধিক নিতে হবে।

উন্নয়নশীল দেশগুলো পরিবেশ রক্ষার প্রবল চাপের মধ্যে পড়ে এখন শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়ছে, আর্থিক দিক থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রার ছকে রাখতে যে ক্ষতিপূরণ ও সহযোগিতার কথা ছিল তা করা হয়নি।

উন্নয়নশীল দেশগুলো যখন উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে, তখন পরিবেশ রক্ষার কথা বলে তাদের পেছনে ফেলার চেষ্টা চলছে। প্রতিযোগিতা ও রপ্তানি বাণিজ্যে চাপে পড়াতে তারা জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বলছে। এমন ভাবনা-ক্ষতির কথা কেন অনেক আগে থেকে আসেনি ইত্যাদি।

এ আলাপ-বিতর্ক যৌক্তিক হলেও দিনশেষে এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী সভ্য দাবি করা মানুষই।

এখন আসা যাক, এই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা কি করতে পারি :

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে তা থেকে অধিক মাত্রায় কার্বন-ডাই গ্যাস নির্গত হয়। প্রতিনিয়ত আমরা জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে তেল, গ্যাস বিশেষ করে কয়লা ব্যবহার করি। বায়ুমন্ডলে নিঃসরিত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস সূর্য থেকে আগত তাপ আটকে রেখে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

অপরদিকে তেল নিষ্কাশনের সময় প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো হয়- যা থেকে ব্যাপক মাত্রায় মিথেন গ্যাস নির্গত করে। মিথেন গ্যাস তাপমাত্র বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করে।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মিথেন গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করা গেলে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন বহুলাংশে রোধ করা সম্ভব।

বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে অবশ্যই পুরো বিশ্বকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। একই সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর বিকল্প হিসেবে ভিন্ন পরিবেশবান্ধব উপায় বের করতে হবে এবং বর্জ্য পদার্থ বিনষ্টকরণের জন্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। কারণ স্তূপীকৃত বর্জ্য পদার্থ থেকেও প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হয়।

জলবায়ু পরিবর্নতন রোধে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির যে কোনো খাতের তুলনায় বিদু্যৎ ও তাপশক্তি উৎপাদন খাত জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রভাবিত করে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে সমগ্র বিশ্ব নেতাদের একযোগে কাজ করতে হবে। সভ্যতার উন্নতির ধারায় প্রতিয়িনত বিদু্যৎ ও তাপের ব্যবহার বাড়বে কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে একদিকে বিদু্যৎ বা তাপের চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে, পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না। এর ফলে, আমাদের বিদু্যৎ ও তাপ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নির্ভরতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। তবে পুরোপুরি জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা থেকে ক্লিন এনার্জি তথা ডিকার্বোনাইজেশন প্রযুক্তি নির্ভরতার দিকে ঝুঁকতে হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক লক্ষ্য ও চাহিদা বিবেচনায় এমন পদক্ষেপ কঠিন হবে। অন্যদিকে, বায়ু ও সৌরশক্তির ব্যবহারের ফলে জ্বালানি চাহিদা মিটতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব নেতাদের প্রস্তাবিত নিট জিরো বাস্তবায়নে নবায়নযোগ্য তথা বায়ু ও সৌরশক্তির ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। তবে এই পথ এতটা সহজ নয়। কারণ বাতাসের গতিবেগ কম হলে বিদু্যৎ উৎপাদন কম হবে। এক্ষেত্রে আমাদের উন্নত ব্যাটারি উদ্ভাবনের পথে হাঁটতে হবে যেন প্রয়োজনীয় শক্তি তথা বিদু্যৎ সঞ্চয় এবং প্রয়োজন মাফিক তার ব্যবহার করা যায়। পেট্রোল ও ডিজেলের ব্যবহার সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সমৃদ্ধ হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রতিনিয়ত সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে নতুন নতুন বাহনের ব্যবহার বাড়ছে। আর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পেট্রোল, ডিজেল, অকটনেরে মতো জ্বালানি। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অবশ্যই যানবাহনে ডিজেল ও পেট্রোলের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। এসব জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে ইলেক্ট্রিক যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি হতে পারে একটি সমাধান। তবে ইলেক্ট্রিক যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি যথেষ্ট জটিল কাজ। এক্ষেত্রে হাইড্রোজেন জ্বালানি হতে পারে যানবাহনের উৎকৃষ্ট জ্বালানি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত হাইড্রোজেন জ্বালানি আগামীতে পরিবেশবান্ধব পরিবহণ খাতের স্বপ্ন দেখাতে পারে। পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা বিমানের জন্য নতুন, বিশুদ্ধ জ্বালানি উৎপাদনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। যদিও পরিবেশবাদীরা মনে করেন, আকাশপথে দূষণ কমাতে দেশগুলোর বিমানের সংখ্যা কমাতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বৃক্ষরোপণের হার বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে বৃক্ষরোপণের চেয়ে উৎকৃষ্ট পদ্ধতি আর হতে পারে না। প্রয়োজনের তাগিদে গাছ কাটা হলেও দেশগুলোকে বৃক্ষ রোপণের হার বাড়াতে হবে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, 'বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হলে বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস দূর করতে হবে'। বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড দূর করতে গাছের বিকল্প নেই। গাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদন করতে বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে। পরিবেশবাদী এবং বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে বৃক্ষনিধন বন্ধ করার দাবির পেছনে এটি একটি বড় যুক্তি।

\হগ্রিন হাউস গ্যাস সূর্য থেকে আগত তাপ পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রতিফলিত হওয়ার পর মহাশূন্যে বিলীন হওয়ার পথে বাধা। এর ফলে, পৃথিবী হিট থাকে।

তবে গ্রিন হাউস গ্যাসের মাত্রা অধিক হলে পৃথিবী অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়। ফলে পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবন ধারণ ব্যাহত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রিন হাউস লবায়ু পরিবর্তন রোধে বায়ুমন্ডল থেকে গ্যাস দূর করতে হবে। বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বা অন্য কোনো গ্রিন হাউস গ্যাস কৃত্রিমভাবে দূর করা গেলে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অথবা গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার পর এর উৎস থেকে অন্য স্থানে সম্প্রসারণ রোধ করা গেলে পরিবেশে এসব গ্যাসের প্রভাব অনেকাংশে রোধ করা যায়। ইতোমথ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বায়ুমন্ডল থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস দূর করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে টেক্সাসের 'কার্বন ইঞ্জিনিয়ারিং' এবং সুইজারল্যান্ডের 'ক্লাইমওয়ার্কস' অন্যতম। তারা একটি রাসায়নিক পদার্থের ফিল্টারের ভেতর দিয়ে বিশাল ফ্যানের সাহায্যে বায়ুমন্ডলে বাতাস নির্গত করে বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। অন্য একটি পদ্ধতি হলো, কার্বন বন্দি ও সংরক্ষণ। এই পদ্ধতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উৎস যেমন কয়লার জ্বালানি পস্ন্যান্ট থেকে বিশেষ যন্ত্র গ্যাস শোষণ করে এবং শোষণকৃত গ্যাস ভূগর্ভের অভ্যন্তরে পতিত করা হয়। তবে এ সব প্রযুক্তি বেশ জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ। সবশেষে দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ২০২০ সালের মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়। যদিও নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গেলেও উন্নত রাষ্ট্রগুলো গরিব দেশগুলোকে অর্থ সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

\হবিশেষজ্ঞদের মতে, দরিদ্র দেশগুলোকে গ্রিন এনার্জির দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, এই যে জলবায়ু পরিবর্তন তার দায় সবার- কারো কম তো কারো বেশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব জাতি এবং রাষ্ট্রসমূহ একই সারিতে দাঁড়িয়ে যদি নিজ নিজ দায়িত্বটুকু পালন করে তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব।

মুখলেসুর রাহমান : নবীন কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে