শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

ভাঙতে হবে বাজার সিন্ডিকেট

দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বরত সব প্রতিষ্ঠানকে একত্র করে শক্তিশালী একটি বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে বাজার সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব বিলীন ও নিত্যপয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে ফিরবে সচ্ছলতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সহনীয় মূল্যই পারে মানুষকে স্বস্তি দিতে।
ফারজানা ইসলাম
  ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ভাঙতে হবে বাজার সিন্ডিকেট

ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হয়। এরপর দায়িত্ব হাতে নেন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু চোখে পড়ছে না সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজার সিন্ডিকেট সংস্কারের বিষয়টা। এখানেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণ।

বিগত সরকার পরিবর্তনের পর কিছুদিন সিন্ডিকেট না থাকায় কিছুটা দাম কমেছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। তবে মাস যেতে না যেতেই ঘুরতে শুরু করেছে পরিস্থিতি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে হাত বদল হয়েছে বাজার সিন্ডিকেটের। তাই আবারও আগের মতোই বাড়তে শুরু করেছে দ্রব্যমূল্যে। কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে মূল্য।

বর্তমানে চালের দাম পূর্বের তুলনায় দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে- যা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। কারণ তাদের উপার্জনের সিংহভাগই ব্যয় হয় চাল কেনার পেছনে। পাশাপাশি ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, আলু, পিঁয়াজ ও মরিচ ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের অগ্নিমূল্য তো রয়েছেই।

অভিযোগ আছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে দিতে হচ্ছে চাঁদা, পাশাপাশি বাজারেও নানাভাবে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যার ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। আবার অনেক সময় ব্যবসায়ীরা বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। অর্থাৎ পণ্যের উৎপাদনে কোনো ঘাটতি না থাকালেও বা সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকার পরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য গুদামজাত করে সংকটের কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করেছেন সেসব পণ্য। এতে ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সিন্ডিকেট এখন একটি নিয়মিত এবং আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সিন্ডিকেট এমন একটি জোট- যা বড় কোনো ব্যবসায়িক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একসঙ্গে কাজ করে। এ দেশে সিন্ডিকেট বহু পুরনো একটি বাজার রোগ। যার চিকিৎসা শুধু পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকিতে সম্ভব নয়। বিশেষ করে রমজান, ঈদ, পূজা বিভিন্ন ধরনের পালা পর্বনকে সামনে রেখে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া- যা পরবর্তী সময়ে বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ সরবরাহ থাকা শর্তেও কমতে চায় না সেই বর্ধিত মূল্য।

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে আবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬। এই আইনের আওতায় যেসব পণ্য রয়েছে সেসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে সরকারের। এসব কিছুর পরেও যেন লাগাম টানতে পারছে না বাজার সিন্ডিকেটের।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত কনজু্যমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি বলেছেন, বাজারমূল্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা এক সঙ্গে কাজ না করলে বাজারের এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।

তাই এই সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রয়োজন দলগতভাবে কাজ করা। পণ্য আমদানি কারক থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবার কার্যক্রমের প্রতি লক্ষ্য রাখা। নিত্যপয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে কে কোথায় কীভাবে কারসাজি করছে, পণ্য গুদামজাত করছে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সে সবকিছুর ওপর নজর রাখতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করলে অনেক গোপন তথ্যই ওঠে আসতে পারে, যা দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক হবে।

দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বরত সব প্রতিষ্ঠানকে একত্র করে শক্তিশালী একটি বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে বাজার সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব বিলীন ও নিত্যপয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে ফিরবে সচ্ছলতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সহনীয় মূল্যই পারে মানুষকে স্বস্তি দিতে।

ফারজানা ইসলাম : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে