সাম্প্রতিক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনলেই একটা নির্দিষ্ট জায়গার নাম মাথায় আসে আর সেটা হচ্ছে মোহাম্মদপুর। যেখানে দিনদুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। ঢাকায় ছিনতাই এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দন্ডবিধির ৩৮৩ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে তার নিকট কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানত কিংবা জামানত হিসেবে ব্যবহারযোগ্য সিলমোহরভুক্ত কোনো বস্তু প্রদানে বাধ্য করে, তাহলে সে ব্যক্তি বলপূর্বক আদায়ের দোষে দোষী অর্থাৎ ছিনতাইকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারেরও বেশি ছিনতাই, চুরি ও অপহরণ করে একটি চক্র। পুলিশের খাতায় নাম উঠলেও ছিনতাইকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। ছিনতাইয়ের কাজও চালিয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। এই অপরাধ দমনে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী ভূমিকা রাখছে? ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পুলিশের ভূমিকা দেখতে চান। কিন্তু পুলিশ বলছে, ছিনতাই বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ পথচারীদেরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ তাদের। ঢাকা শহরে ছিনতাইকারীদের বিভিন্ন চক্র রয়েছে। যেমন- মলম পার্টি। তারা যাত্রীদের টার্গেট করে, ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তির চোখে মলম লাগিয়ে দেয়, ওই ব্যক্তি কিছুক্ষণ চোখে দেখে না। অজ্ঞান পার্টি আছে, যারা বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে সক্রিয় থাকে। বর্তমানে হ্যান্ডশেক পার্টি ঢাকা শহর, সেই সঙ্গে অন্যান্য জনবহুল শহরে সর্বত্র দেখা যায়। তারা নির্দিষ্ট কিছু লোককে টার্গেট করে। পরে তাদের একা পেলে ছুরি বা পিস্তল দেখায়। অসহায় লোকটি প্রাণ বাঁচানোর জন্য সব দিয়ে দেয়। ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন কায়দায় ছিনতাই করে থাকে। যখন কেউ নির্জন রাস্তা দিয়ে একা একা রিকশায় যাচ্ছেন, তখন আরেকটি রিকশায় দুইজন তরুণ অন্য রিকশাটির পাশে এসে একা যাত্রীর দুই পাশে দুই তরুণ দাঁড়িয়ে ওই যাত্রীকে নিচুগলায় বলে, 'চিলস্নাচিলিস্ন করবেন না, আমাদের সঙ্গে ছুরি, পিস্তল আছে। টাকা, মানিব্যাগ, মোবাইল যা আছে, সব দিয়ে দেন। যাত্রী প্রাণভয়ে বাধ্য হয়ে সব দিয়ে দেয়। ছিনতাইকারীরা শুধু টাকা, মোবাইল ও গহনা ছিনিয়ে নেয় না, বাধা দিতে গেলে প্রাণহানিও ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা কেউ বিশিষ্ট নাগরিক, কেউ সাধারণ মানুষ। পুলিশের হিসাবেই রাজধানী ঢাকায় ছয় হাজারের বেশি ব্যক্তি ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। যাদের মধ্যে এক হাজার ৭৩৭ জন ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ সূত্র বলছে, ঢাকায় সাধারণত পথ আটকে অস্ত্রের মুখে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এলাকাভিত্তিক ছিনতাই বেশি হয়। বাড্ডা, মিরপুর, শাহবাগ, মগবাজার, রমনা, মালিবাগ রেলগেট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা, গুলিস্তান, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায়ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। রাজধানী শহরের ১৪ বছরের ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কিছু ঘটনায় বিচার হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। অধিকাংশ ছিনতাইকারী বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের পুলিশ সদর দপ্তরের এক পরিসংখ্যান থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ৯ মাসের হিসাব অনুযায়ী-রাজধানীতে ৮৮ ভাগ ছিনতাকারীর বিচার হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ছিনতাইয়ের ঘটনাকে 'হারানোর ঘটনা' উলেস্নখ করে জিডির অন্যতম কারণ। এতে অপরাধীদের খুব সামান্যই আইনি ব্যবস্থার মধ্যেও আসে। অজ্ঞাত আসামি উলেস্নখ করে মামলা করায় সাক্ষীও পাওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া প্রযুক্তির যোগ হওয়া সত্ত্বেও মামলার তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহারে ঘাটতি রয়েছে। এমন অবস্থা থেকে বের হতে ছিনতাইয়ের অপরাধগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের কথা বলছেন তারা। পাশাপাশি ছিনতাইয়ের অপরাধকে 'ছিনতাই' নামে মামলা হওয়া উচিত। কর্তৃপক্ষের নজরদারি জোরদার করা প্রয়োজন। এই অপরাধ দমন করা অসম্ভবের কিছু না। পুলিশ কর্মকর্তাদের সক্রিয় হতে হবে, সেই সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট দল গঠন করতে হবে, যারা বিভিন্নভাবে ছিনতাই দমনে কাজ করবে। যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ছিনতাইকারী সদস্যদের দ্রম্নত আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাই ছিনতাই দমনে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি, সেই সঙ্গে জনসাধারণের সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই।
সাকিবুল হাছান
\হশিক্ষার্থী
ঢাকা কলেজ, ঢাকা