বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

জাতীয় পেনশন স্কিম

উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক
  ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জাতীয় পেনশন স্কিম

আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা অনিশ্চিয়তায় শ্লথ হয়ে পড়েছিল সর্ববৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী জাতীয় পেনশন স্কিম। তবে জানা যাচ্ছে, নতুন অন্তর্র্বর্তী সরকারের ইতিবাচক বার্তা পাওয়ার পর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিগত সরকারের আলোচিত এই প্রকল্পে আবারও গ্রাহকের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করছে। যা জানিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। আমরা মনে করি, এটি ইতিবাচক। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য বলেছেন, 'গত ৫ আগস্টের পরে অনেকে হয়তো মনে করেছিল যে, এই স্কিম থাকবে কি থাকবে না, আমি আর টাকা জমা দেব না। এজন্য কিছু ডিফল্টিং কেইস হয়েছিল। কিন্তু আমরা যখন আবার গিয়ে বললাম যে, নতুন সরকার এই কর্মসূচি চালাবে, তখন গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি কেটে যাওয়া শুরু হয়েছে।'

আমরা বলতে চাই, যখন নতুন সরকার এই কর্মসূচি চালাবে আর গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি কেটে যাওয়া শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে তখন তা আশাব্যঞ্জক। যা আমলে নিয়ে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। উলেস্নখ্য সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে আর্থিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসতে নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে গত বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। শুরুতে 'প্রবাস', 'প্রগতি', 'সুরক্ষা' ও 'সমতা' স্কিম চালু করা হয়েছিল। গত জুলাইয়ে সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য 'প্রত্যয়' স্কিম চালু করতে গিয়ে ধাক্কা খায় কর্তৃপক্ষ। অংশীজনদের বিরোধিতার মুখে ওই প্যাকেজ চালু করা যায়নি। এটাও আলোচনায় আসছে যে, এটা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ। আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রয়োজন সব সময় রয়েছে। সুতরাং, এই কর্মসূচি কখনো অপ্রাসঙ্গিক হবে না। জাতীয় পেনশন কর্মসূচি আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এটা একটি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি। সুতরাং, এটা কোনোভাবেই স্থবিরও হবে না।

আমরা মনে করি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রয়োজন, যার ফলে, এর বাস্তবায়নে মানুষ যেন যথাযথ সুবিধা পায় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জানা যায়, 'গত ৫ আগস্টের পর সদস্যদের চাঁদা জমা দেওয়ার পরিমাণ একেবারেই কমে গিয়েছিল। এছাড়া চাঁদার টাকা বিলম্বে দেওয়ার নিয়ম পেনশন স্কিমেই রয়েছে। যারা অনিশ্চিয়তার কারণে চাঁদা দেননি তারা ইতোমধ্যেই দুই মাসের টাকা একসঙ্গে দেওয়া শুরু করেছেন। অন্যদিকে, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রবণতার ক্ষেত্রে জানা যাচ্ছে, একটা বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। গত জুন মাসেও দৈনিক ৫ হাজারের মতো নতুন লোক পেনশন স্কিমে যুক্ত হচ্ছিলেন। জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তা কমতে শুরু করে। অগাস্টে সরকার পতনের পর প্রায় এক মাস ধরে নতুন এনরোলমেন্ট ড্রাস্টিকভাবে কমে যায়। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই বলেও জানা যায়। এখন নতুন লোক যুক্ত হওয়ার পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে বলেও জানা যাচ্ছে। ফলে সামিগ্রক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এই স্ক্রিমের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ জারি রাখতে হতে হবে।

বলা দরকার, গত বছর পেনশন স্কিম চালু হওয়ার পরই অনেক আগ্রহ নিয়ে এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ভবিষ্যতের সঞ্চয় বাড়াতে, সরকারি এই সেবায় যুক্ত হলেও এখানে আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এক্ষেত্রে বলা দরকার, আলোচনায় এসেছে যে, স্কিমের বড় একটা দুর্বলতা হচ্ছে এখানে বীমা সুবিধা নেই। দেশে প্রচলিত অনেক ডিপোজিট স্কিমে বীমা সুবিধা রয়েছে। পেনশন স্কিমে বীমা সুবিধা চালু করলে তাতে জনগণের আগ্রহ আরও বাড়বে। পাশাপাশি গ্রাহকের মৃতু্যর পর নমিনির জন্য ৭৫ বছর বয়সের যে সীমা রাখা হয়েছে তা আমৃতু্য করে দেওয়ার দাবিও সামনে এসেছে। ফলে, এই দিকগুলো বিবেচনায় নিয়েও করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি কেটে যাওয়া শুরু হয়েছে- এটিকে সামনে রেখে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। জাতীয় পেনশন স্কিম ঘিরে অনিশ্চয়তা কাটছে- এটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে