বিশেষজ্ঞরা পলিথিনকে পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান নিয়ামক ও পাইপলাইন হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এছাড়া, এই আলোচনায় বারবার সামনে এসেছে যে, নিষিদ্ধ হওয়ার ২০ বছর পরও উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। অথচ অতিমাত্রায় পলিথিন ও পস্নাস্টিক ব্যবহারের কারণে মানব শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যানসারসহ নানা রোগ। এক্ষেত্রে বলা দরকার, সুপারশপে পলিথিন নিষিদ্ধের পর গত ১ নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের কাঁচাবাজারেও পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। কিন্তু পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সাত দিন পেরোলেও তা কার্যকর হয়নি। বরং বাজারে এখনো অবাধে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ এ পণ্যটি- এমন তথ্যই সামনে আসছে।
প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, কারখানার বাইরে তালা লাগিয়ে ভেতরে দেদার তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। যদিও আগের মতো ২৪ ঘণ্টাই সচল রাখা হচ্ছে না কারখানাগুলো। দিনের অধিকাংশ সময় কারখানা বন্ধ থাকছে। রাত যত গভীর হচ্ছে, কারখানাগুলোয় ততই বেশি উৎপাদন বাড়ছে পলিথিনের। বাজারে পলিথিনের চাহিদা বাড়ায় দামও বাড়ছে পালস্না দিয়ে। এছাড়া, নিষিদ্ধ এই পণ্যটিকে ঘিরে এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে ছোট বড় নানা ধরনের সিন্ডিকেট। তারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার পলথিনি নিষিদ্ধ করলেও বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলেননি। ফলে, নিরুপায় হয়ে তারা পলিথিনি ব্যবহার করছেন। এমন বক্তব্যও খবরে উঠে এসেছে যে, সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে। তবে তা কাগজে কলমে। বাস্তবে কোনো দিনই পলিথিন নিষিদ্ধ করে বাজার থেকে তুলতে পারবে না। কারণ, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে এমন কোনো ব্যাগ বা হালকা বহনযোগ্য কিছু দিতে হবে। যার দাম কম ও সহজলভ্য হবে। তবেই পলিথিনের ব্যবহার কমবে। তাছাড়া পলিথিনের ব্যবহার কমবে না।
আমরা মনে করি, পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। একইসঙ্গে এর যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে এটা আলোচনায় এসেছিল যে, মানুষ যদি পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে তাহলে উৎপাদনও বন্ধ হবে। এজন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। ফলে, এই দিকগুলো বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন- পলিথিন ক্ষতিকর। এটি সত্য। তারাও চান পলিথিন নিষিদ্ধ থাক। এমনকি পলিথিন দেশ থেকে উঠে যাক। কিন্তু তাহলে বিকল্প হিসেবে সরকার এমন কিছু বাজারে ছাড়ুক, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। অন্যদিকে, পলিথিনের চেয়েও ভয়াবহ জিনিস হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, চিপস, চানাচুরসহ এ জাতীয় নানা খাবার। এসব খাবার প্যাকেটজাত করতে যে পলিথিন ব্যবহৃত হয়, তা ৫০ বছরেও পচে না। অথচ চিপস, চানাচুর বা বিস্কুট কোম্পানিগুলোয় এমন ক্ষতিকর পলিথিনের প্যাকিং না করার ব্যাপারে তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। যেটি বৈষম্যমূলক- বলেও মন্তব্য করেন।
আমরা মনে করি, যে বিষয়গুলো উঠে আসছে তা আমলে নিয়ে এর যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, মানুষ সচেতন না হলে যেমন পলিথিন বন্ধ হবে না, তেমনি আইনগত পদক্ষেপও জরুরি। ফলে, সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পাটের ব্যবহার বাড়ানোসহ সার্বিক উদ্যোগ জরুরি। সুপারশপে পলিথিন নিষিদ্ধের পর রাজধানীসহ সারাদেশের কাঁচাবাজারেও পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। কিন্তু যদি তা কার্যকর না হয় তবে এটি এড়ানোর সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পলিথিনের আশঙ্কাজনক ব্যবহার আমলে নিতে হবে এবং পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে- এটিকে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক- এমনটি কাম্য।