শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ জরুরি

  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ জরুরি

যদি পণ্যমূল্যের দাম অসহনীয় হয়ে ওঠে বা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না থাকে, তবে তা কতটা উদ্বেগজনক বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, ভয়েস অব আমেরিকার এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ মনে করেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ পারফর্ম করছে অথবা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। তথ্য মতে, ৪৪.৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন চাল, মাছ, সবজি, ডিম, মাংস, তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ পারফর্ম করেছে। এক-চতুর্থাংশের কম উত্তরদাতা অর্থাৎ ২৩.৮ শতাংশ মনে করেন বর্তমান সরকার আগের সরকারের তুলনায় ভালো করছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩০.৮ শতাংশ মনে করেন পরিস্থিতি আগে যা ছিল তাই আছে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ে নারী এবং পুরুষ উত্তরদাতাদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। পুরুষ উত্তরদাতাদের ৩১.৩ শতাংশ মনে করেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভালো করছে। অন্যদিকে, নারী উত্তরদাতাদের মাত্র ১৬.৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভালো করছে। জানা যায়, বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের এক হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়।

আমরা মনে করি, যখন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার ভালো করছে না- জরিপে ৪৪.৭ শতাংশ মানুষের এমন ধারণা উঠে আসছে তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং দেশের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৭২ শতাংশ। এই হার অক্টোবর মাসে এসে দাঁড়িয়েছে ১০.৮৭ শতাংশে। এর মধ্যে দেশে একটি গণ-অভু্যত্থান এবং সরকার পরিবর্তন হয়ে গেছে। যদিও মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০২৪-এর জুলাই-এ সৃষ্টি হয়নি, সে মাসেই ছিল এ পর্যন্ত বছরের সবচেয়ে উঁচু হার অর্থাৎ ১১.৬৬ শতাংশ বলেও জানা যায়।

লক্ষণীয়, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে ইউক্রেন-রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর বিশ্ব জ্বালানি বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর ফলে, আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য আসে বড় ধাক্কা। বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যায়, বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ কমতে থাকে এবং দেশের আমদানি করার সক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়া, আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা নেয়ার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ অব্যাহত থাকে। সেপ্টেম্বর যদিও মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে, কিন্তু অক্টোবরে তা পুনরায় ১১ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়। উলেস্নখ্য যে, অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, এখানে রাজনৈতিক এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলি প্রভাব ফেলেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ডিরেক্টর বলছেন, 'বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পতনের ফলে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থাও প্রভাবিত হয়েছে। ফলে, অভ্যন্তরীণ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।'

আমরা বলতে চাই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। উলেস্নখ্য, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন চাল, আলু, চিনি, তেল, পেঁয়াজ ইত্যাদির ওপর আমদানি কর কমানো হয়েছে। এছাড়া, এটাও আলোচনায় এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিসংখ্যান আগের তুলনায় আরও স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য হলেও, প্রশাসনের পদক্ষেপে কোনোু নতুনত্ব নেই। জীবনযাত্রা প্রায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলেও আলোচনায় আসছে। ফলে এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে কী কী করা দরকার- সেটিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না থাকলে, বাজার অস্থিতিশীল হলে জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়ে, দিশেহারা পরিস্থিতি তৈরি হয়- যা কাম্য হতে পারে না। এছাড়া, কোনো অসাধু চক্র বা অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ক্রেতাদের জিম্মি করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে