বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

রমরমা কোচিং বাণিজ্যে দিশেহারা অভিভাবক

মাহমুদুল হক
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রমরমা কোচিং বাণিজ্যে দিশেহারা অভিভাবক
রমরমা কোচিং বাণিজ্যে দিশেহারা অভিভাবক

শিক্ষায় অস্বস্থিা কাটছে না। অভিভাবক, ছাত্র, শিক্ষার্থী মোটেও স্বস্তিতে নেই। বিগত দিনে একাধিকবার শিক্ষায় সিলেবাস পরিবর্তন-পরিমার্জন অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিতভাবে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর জবরদস্তি ছিল অসহনীয়। তবুও তালিজোড়া দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা চলে আসছে। ছিল না পরীক্ষা পদ্ধতি অটো পাস সিলেবাসে পাঠদানের মতো চেপ্টার খুঁজে পায়নি শিক্ষকরা। সেসব বিষয়ে অভিভাবকদের অভিযোগ বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। শিক্ষাব্যবস্থা প্রাইমারি থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে চলে আসছিল। স্কুল ছিল, টিচার সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধাদি ছিল। ছিল না পাঠদান পদ্ধতি। টিচাররাও অভিযোগ করেছিল কী পড়াব? কী শিক্ষা দিব? পড়াবার মতো কিছু নেই।

এখন নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সরকার সংস্কারে হাত দিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংস্কার কর্মসূচি চলছে। শিক্ষাব্যবস্থায়ও সংস্কার শুরু হয়েছে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে সেই সংস্কার কার্যক্রমে সুফল অভিভাবক শিক্ষার্থীরা দেখছে না। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একাধিক লেখা প্রবন্ধ নিবন্ধ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লেখাপড়ার গুণগত মান ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়- এসব বিষয় এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি, হচ্ছ্‌েও না। দেশে সরকারি-বেসরকারি এমপিওভুক্ত ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অসংখ্য। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের কাছে থাকলেও সেখানেও অভিযোগ পাওয়া যায়। সেই অভিযোগের কিছু কিছু সমাধানও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়। প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন দৌরাত্ম্যকভাবে যত্রতত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মোটেও সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে না। অলিতে-গলিতে বাসা-বাড়ির ছাদের ওপর বিলাসি চমকপ্রদক নাম রেখে চাকচিক্ক বাহারি পোশাক-আশাক ড্রেস এবং বইয়ের সীমাহীন বোঝা আর ব্যাগ তুলে দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষার নামে অমানবিক ও শিশুচরিত্র অধিকার পরিপন্থি শিক্ষা নামক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ৯০% প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পর্যাপ্ত পরিবেশ নেই। আলো-বাতাস নেই, জানালা নেই, খেলার মাঠের সুযোগ নেই। এর মধ্যেও গাদাগাদি করে শিশুদের ভর্তি করায়। স্কুল বেতন, কোচিং ফি, বইখাতা, ব্যাগ, ড্রেস ইত্যাদি বিষয় সামাল দিতে অভিভাবককে হিমসিম খেতে হয়। বাহারি ধরনের জাতীয় আন্তর্জাতিক শব্দ দিয়ে স্কুলের নাম রাখা হয়। সেখানে টিচার হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ করা হয় না। তাদের নিয়োগ বেতনভাতা কোনো ধরনের সিস্টেমের মধ্যে দেওয়া হয় না।

এক ধরনের চাপের মধ্যে মানসিকভাবে বেকারত্ব দূর করার ইচ্ছা নিয়ে বেশির ভাগ প্রাইভেট স্কুল-কলেজে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা সময় পার করে থাকে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী থেকে হাজার থেকে পনেরো শত টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন নিয়ে থাকে। প্রতিবছর ভর্তি ফি ১০ হাজার, ১৫ হাজার, ৩০ হাজার পর্যন্ত কোনো কোনো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে নিতে দেখা যায়। সমাজে কতিপয় শ্রেণির কাছে টাকার অভাব নেই। সেসব মানুষের সন্তানরা ওইসব প্রাইভেট স্কুলে লেখাপড়া করতে লাইন ধরে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম যাই হোক না কেন, স্কুল টাইমের আগে পড়ে কোচিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের থেকে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য করছে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এই সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোটেও শৃঙ্খলা দেখছি না। কোচিংয়ের নামে ক্লাস না করে শিক্ষার্থীদের টাকার বিনিময় কোচিং করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সব ক্ষেত্রে এই বাণিজ্য এখন চোখে পড়ার মতো শুরু হয়েছে। ছাত্ররা অভিভাবককে কোচিং বাণিজ্যের টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের চাপ সৃষ্টি করে কোচিংয়ের জন্য। নতুন করে দেশব্যাপী প্রাইভেট ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্যের ব্যবসা শুরু হতে দেখছি। এক একজন শিক্ষার্থী থেকে চার হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত কোচিং ফি নির্ধারণ করছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবার এই চাপ সহ্য করতে পারছে না। কোচিং বাণিজ্য গাইড বুক বাণিজ্যের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি ২০২৫ টার্গেট করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য ও ভর্তি বাণিজ্য কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ চায় অভিভাবক।

মাহমুদুল হক

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে