দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক- এই আলোচনা বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এছাড়া, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ আর কার্যকর উদ্যোগের অভাবে দিন দিন এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে এমন আলোচনাও নতুন নয়। ফলে, সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময় নতুন করে ৫৭০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে রোগটিতে চলতি বছর ৫১৪ জনের প্রাণ কাড়ে। আর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৮৮৪ জনে। উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় যে পাঁচজন মারা গেছেন, তার মধ্যে তিনজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আর ঢাকা বিভাগীয় এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দুজন। এছাড়া, এটাও লক্ষণীয়, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ৩০ হাজার ৮৭৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন অক্টোবর মাসে। সে মাসে ১৩৫ জনের মৃতু্য হয়েছিল। এক মাসে সবচেয়ে বেশি মৃতু্য হয়েছে নভেম্বরে, ১৭৩ জন। নভেম্বর মাসে ২৯ হাজার ৬৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বলা দরকার, সম্প্রতি এমন খবর সামনে এসেছে যে, দেশে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। অন্যদিকে, মৃতু্যর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে, ডেঙ্গুসংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। স্মর্তব্য, এডিস মশাবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এছাড়া, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে এডিস মশা জন্ম ও বৃদ্ধি পায়, সেখানে যেমন ধ্বংস করা দরকার, এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এর আগে এমন আলোচনা উঠে এসেছে- বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা দেখভাল ভালোভাবে হয় না। এতে বিভিন্ন জায়গায় এডিসের ঘনত্ব দেখা দেয়। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেহেতু এডিস মশা সংক্রমিত মশা, এতে এক রোগী থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই, সংশ্লিষ্টদের সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বলা দরকার, শুধু ডেঙ্গু নয়, ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী- এটাও এড়ানো যাবে না। অন্যদিকে, গবেষকরা বলছেন, জিকার পাশাপাশি ঢাকা শহরে এখন চিকুনগুনিয়ায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এর অর্থ ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়া- এই তিন রোগে ঢাকা শহরের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া, এটাও মনে রাখা জরুরি যে, এই রোগ তিনটি ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। ফলে, মশা নিধন কার্যক্রম এবং জনসচেতনতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প থাকতে পারে না। এয়াড়াও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে এটাকে সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু সংক্রান্ত উদ্বেগজনক তথ্য নানা সময়েই সামনে এসেছে, বাড়ছে একের পর এক মৃতু্যর সংখ্যা। ফলে, এই উৎকণ্ঠাজনক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জরুরি। একইসঙ্গে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করাও অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। সঙ্গত কারণেই সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এছাড়া, ডেঙ্গু রোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়ানোসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নও অপরিহার্য। যেভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন তথা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।