সিরিয়ার বিদ্রোহীরা বহু বছরের শাসন শেষে বাশার আল-আসাদের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ আগেও এটি ছিল অচিন্তনীয়। ২০০০ সালে বাবার মৃতু্যর পর ক্ষমতায় এসেছিলেন আসাদ এবং একনাগাড়ে ২৪ বছর দেশ শাসন করেছেন- তার বাবার মতোই শক্ত হতে। উত্তরাধিকার সূত্রেই তিনি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং দমনপীড়নমূলক রাজনৈতিক কাঠামো পেয়েছেন, যেখানে বিরোধীদের প্রতি কোনো ধরনের সহনশীলতা ছিল না। প্রথম দিকে একটি প্রত্যাশা ছিল যে, তিনি হয়তো ভিন্ন হবেন- আরও খোলামেলা, তুলনামূলক কম নিষ্ঠুর। কিন্তু সেগুলো বেশি দিন টিকেনি।
২০১১ সালে তার সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন নৃশংসভাবে দমনের জন্য তাকে সবসময়েই মনে রাখা হবে। ওই ঘটনাই সিরিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। এই যুদ্ধে পাঁচ লাখেরও অধিক মানুষ মারা যায় এবং শরণার্থীতে পরিণত হয় অন্তত ৬০ লাখ মানুষ। রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতা নিয়ে তিনি বিদ্রোহীদের দমন করে নিজেকে রক্ষা করেছিলেন। রাশিয়া তার বিমানশক্তি ব্যবহার করেছিল আর ইরান তার সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছিল সিরিয়ায়। পাশাপাশি ইরান সমর্থিত লেবাননের হেজবুলস্নাহ তাদের প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের মোতায়েন করেছিল। কিন্তু এর কিছুই এবার ঘটেনি। তার সহযোগীরা নিজেদের বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। তারা আসাদকে কার্যত পরিত্যাগ করেছে। অথচ তার সেনারা এদের সহযোগিতা ছাড়া অক্ষম। কিছু ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের থামাতে কার্যত তারা ছিল অনিচ্ছুক। এই বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থি জঙ্গি গ্রম্নপ হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে 'সবচেয়ে কার্যকর' ভূমিকা পালন করেছে এইচটিএস ও এর প্রধান জোলানি।
\হগত সপ্তাহে প্রথমে তারা আলেপ্পো দখল করে, কার্যত কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই। এটি সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এরপর তার কয়েকদিন পরেই হামা, হোমস শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখলে নেয়। অন্যদিকে, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকেও এগিয়ে আসছিল বিদ্রোহীরা। ফলে, অভিযানের একপর্যায়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দামেস্ক। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্রোহী যোদ্ধারা রাজধানীতে প্রবেশ করে, যা ছিল আসাদের ক্ষমতার কেন্দ্র। সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তবে আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যকে বদলে দিতে যাচ্ছে। সিরিয়ায় এই পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বড় ধরনের ধাক্কা খেল।
অনেকে বিশ্বাস করেন, বিদ্রোহীদের এবারের অভিযান তুরস্কের আশীর্বাদ ছাড়া হয়নি। তারা অবশ্য সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহীদের সমর্থন দিলেও এইচটিএসকে সমর্থনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। কমপক্ষে ত্রিশ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী তুরস্কে অবস্থান করছে। এটা স্থানীয়ভাবে এখন স্পর্শকাতর ইসু্যতে পরিণত হয়েছে।
এর আগে, তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেন। বাশার আল-আসাদের পালানোর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আল-আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান হলো। সে সঙ্গে সিরিয়ায় নতুন যুগের সূচনা হলো। এবার হয়তো দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসবে। শরণার্থীরা ফিরতে পারবেন নিজবাস ভূমিতে।