দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয়। বিশ্বব্যাপী ১৯ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাল্যবিয়ে হয় ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয় ৫১ শতাংশ মেয়ের আর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয় ১৬ শতাংশ মেয়ের। তবে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নতি হচ্ছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে হয়েছে ৬৯ শতাংশ। ২০২২-এ কমে হয়েছে ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ ১৫ বছরে বাংলাদেশে এ খাতে উন্নতি হয়েছে ১৮ ধাপ।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) আয়োজিত চার দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনের শেষ দিনে বাল্যবিয়ে সেশনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাল্যবিয়ে কমাতে মেয়েদের ক্ষমতায়ন ও সামাজিক নিয়মের হস্তক্ষেপ বিষয়ক এক গবেষণা তুলে ধরেন আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট।
গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশের পর সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয় নেপালে। ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় ৩৩ শতাংশ মেয়ের। আর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয় ৮ শতাংশ নারীর। তৃতীয় অবস্থানে আফগানিস্তান। এ দেশে ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় ২৮ শতাংশ মেয়ের। আর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয় ৪ শতাংশের। ভুটানে ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় ২৬ শতাংশ মেয়ের। আর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয় ৬ শতাংশের। ভারতে ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় ২৩ শতাংশ মেয়ের। আর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয় ৫ শতাংশের। পাকিস্তানে ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় ১৮ শতাংশ মেয়ের। আর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয় ৪ শতাংশের। শ্রীলঙ্কায় ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় ১০ শতাংশ মেয়ের। আর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয় ১ শতাংশের। মালদ্বীপে বাল্যবিয়ে হয় মাত্র ২ শতাংশের। এখানে উলেস্নখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের প্রচলন বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ। ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়।
বাল্যবিয়ে রোধে ও কন্যাশিশু-কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে সরকারকে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে নারী ও কন্যাশিশুদের জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মহামারির কারণে মার্চ থেকে মানুষ, বিশেষ করে নারীরা স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। সেই সঙ্গে বেড়েছিল নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি। যার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে।
মনে রাখতে হবে বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। এর ফলে, দেশের কন্যাশিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গিয়ে মৃতু্য ডেকে আনে। অনেকেই অত্যাচার নির্যাতনে মারা যায় কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। স্থানীয় প্রশাসন ও কাজীদের বাল্যবিয়ে বন্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। বাল্যবিয়ে রোধে সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেলে জাতীয় উন্নয়নে এর বড় প্রভাব পড়বে। সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়াই সমীচীন।