আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করেছে। এছাড়া জানা গেছে, নন-এসি হোটেলের ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। অন্যদিকে বিমান ভ্রমণ, সিগারেট, এলপিজি, পোশাক, রেস্তোরাঁর খাবারসহ একাধিক পণ্য ও সেবায় কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে সরকার। ফলে দেশে এরই মধ্যে ১১ শতাংশ ছাড়ানো মূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হতে পারে এমন শঙ্কা ওঠে এসেছে। অন্যদিকে সরকারের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা এমনটি খবরে ওঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণ বারবার আলোচনায় এসেছে। ফলে একাধিক পণ্য ও সেবায় কর বৃদ্ধিতে যদি দেশে এরই মধ্যে ১১ শতাংশ ছাড়ানো মূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হতে পারে বলে যে শঙ্কা ওঠে আসছে তা এড়ানোর সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, ব্যবসায়ীরা বলছেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ঘিরে প্রায় ৪-৫ মাস ধরে ব্যবসায় মন্দা ভাব দেখা গেছে। ব্যবসা বাণিজ্য যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তখনই কর বাড়ানোর মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। মূল্যস্ফীতির মূল ওয়েটের ইন্ডিকেটরগুলো হলো চাল, ডাল এগুলো; সেটা উলেস্নখ করে বলেছেন, যে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হচ্ছে, এগুলো মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ। বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এসব জানান।
আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন ধরনের আলাপ আলোচনা আসছে তা সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় রেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন। টু্যরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলছেন, এমনিতেই পর্যটন খাতের ১২টা বেজে রয়েছে। তারপর উড়োজাহাজের টিকিটের দাম বাড়লে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এছাড়া জানা যায়, বর্তমানে তৈরি পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনে কিছু সংশোধন আনতে যাচ্ছে সরকার। যেন ওষুধ, গুঁড়াদুধ, সিগারেট, বিমানের টিকিটসহ ৬৫ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি মূসক ও শুল্ক আরোপ হতে পারে। ফলে বাজেটের আগেই এসব পণ্য ও সেবার দাম এক দফা বাড়তে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আমরা বলতে চাই, দাম বৃদ্ধির যে শঙ্কা এবং জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এটাও জানা যাচ্ছে রাজস্ব আদায়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় যোগ হচ্ছে বাড়তি করের বোঝা। ওষুধ, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টি, মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার, বিমানের টিকিটসহ সিগারেট এবং তামাক রয়েছে বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ক-করের তালিকায়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, উচ্চমূল্যস্ফীতির বিষয় যেমন আলোচিত, তেমনি নিত্যপণ্যের দামসহ নানা কারণে জনসাধারণের ওপর চাপ বাড়ছে এটাও অজানা নয়। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। দেশে এরই মধ্যে ১১ শতাংশ ছাড়ানো মূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হতে পারে এমন শঙ্কাকেও এড়ানোর সুযোগ নেই। সঙ্গতকারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।