সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

এক বছরে নিহত ৮৫৩৪ জন সড়ক কবে নিরাপদ হবে?

  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
এক বছরে নিহত ৮৫৩৪ জন সড়ক কবে নিরাপদ হবে?

প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর খবর জানা যায়- যা কতটা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই- ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে; তখন সার্বিক পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা অনুধাবন করা জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্র্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সদ্য সমাপ্ত বছরে বিভিন্ন যানবাহনের দুর্ঘটনায় সড়কে প্রাণ গেছে ৮ হাজার ৫৪৩ জনের। এছাড়া, বিদায়ী বছরে রেল ও নৌপথ মিলিয়ে দুর্ঘটনায় মোট ৬৯৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। আর দুর্ঘটনার এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে।

আমরা বলতে চাই, এক বছরে উলিস্নখিত সংখ্যক মৃতু্য কতটা উদ্বেগ এবং শঙ্কার তা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। তথ্য মতে, গত বছরে ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত ও ১২ হাজার ৬০৮ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ২ হাজার ৩২৯টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৫৭০ জন নিহত ও ৩ হাজার ১৫১ জন আহত হয়েছে- যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬.৬২ শতাংশ, নিহতের ৩০.০৮ শতাংশ ও আহতের ২৪.৯৯ শতাংশ। এছাড়া, গত বছর রেলপথে ৪৯৭টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত, ৩১৫ জন আহত হয়েছে। আর নৌপথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিন। একইসঙ্গে সড়ককে নিরাপদ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন। এছাড়া, রেল ও নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কার্যকর উদ্যোগ নিন। আমলে নেওয়া দরকার, প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার অর্ধেকই মোটর সাইকেল, নসিমন-করিমন ও ইজিবাইকের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া, চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে, ফিটনেসহীন যানবাহন সড়কে চলছে, আইনের অপপ্রয়োগ চলছে, বিআরটিএ রাজস্ব আদায়ে ব্যস্ত, ট্রাফিক বিভাগ জরিমানা আদায়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার যাবতীয় উপাদান সড়কে বিছিয়ে রাখা হয়েছে এসবও আলোচনায় আসছে। যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা।

আমরা বলতে চাই, শুধু এই চিত্রই নয়, প্রতিনিয়ত সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। রেল পথ নৌপথেও দুর্ঘটনা থেমে নেই। ফলে, যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগেও সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে তাও কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিনিয়ত সড়কে যে দুর্ঘটনার বীভৎস চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই; তেমনি এটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার, এর আগে বারবার এমন বিষয় সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাবসহ বিভিন্ন কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। ফলে, সার্বিক বিষয় আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

সর্বোপরি বলতে চাই, পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়কের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়, যেখানে প্রতিনিয়তই মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এছাড়া, মনে রাখা দরকার, নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে- যা কাম্য হতে পারে না। দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে