নিকোলা টেসলা (১০ জুলাই, ১৮৫৬-৭ জানুয়ারি ১৯৪৩) ছিলেন একজন সার্বিয়ান-আমেরিকান উদ্ভাবক, তড়িৎ প্রকৌশলী, যন্ত্র প্রকৌশলী এবং ভবিষ্যতবাদী, যিনি আধুনিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ ও তারবিহীন তড়িৎ পরিবহণ ব্যবস্থা আবিষ্কারের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যে জন্ম ও বেড়ে ওঠা টেসলা ১৮৭০ সালে প্রকৌশল এবং পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেন এবং ডিগ্রি না নিয়েই ১৮৮০ দশকের গোড়ার দিকে নতুন বৈদু্যতিক শক্তি শিল্পের কন্টিনেন্টাল এডিসনে কাজ শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। টেসলা স্বল্প সময়ের জন্য নিউইয়র্ক শহরের এডিসন মেশিন ওয়ার্কসে কাজ করেন এবং পরবর্তী সময়ে নিজ পরিচালনায় কাজ শুরু করেন।
তার ধারণাগুলোর অর্থায়ন ও বিপণনের জন্য অংশীদারদের সহায়তায় টেসলা নিউইয়র্কে বিভিন্ন বৈদু্যতিক এবং যান্ত্রিক ডিভাইস বিকাশের জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছিলেন। ১৮৮৮ সালে ওয়েস্টিংহাউস ইলেক্ট্রিকের লাইসেন্সযুক্ত তার আবিষ্কার বিকল্প কারেন্ট (এসি) আনয়ন মোটর এবং সম্পর্কিত পলিফেজ এসি পেটেন্টগুলো তাকে প্রচুর পরিমাণে অর্থোপার্জন করতে সাহায্য করে এবং পলিফেস সিস্টেমের ভিত্তি হয়ে ওঠে- যা শেষ পর্যন্ত সংস্থাটি বাজারজাত করে।
নিজের নামে পেটেন্ট ও বাজারজাত করতে, টেসলা যান্ত্রিক অসিলেটর/জেনারেটর, বৈদু্যতিক স্রাব নল এবং শুরুর দিকের এক্স-রে ইমেজিংয় নিয়ে একাধিক গবেষণা পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি প্রথম ওয়্যারলেস নিয়ন্ত্রিত নৌকাও তৈরি করেছিলেন। টেসলা একজন উদ্ভাবক হিসেবে সুপরিচিতি পেয়েছিলেন এবং তার গবেষণাগারে তারকা এবং ধনী পৃষ্ঠপোষকদের কাছে তার আবিষ্কার প্রদর্শন করতেন এবং পাবলিক বক্তিতাগুলোতে প্রদর্শনীর জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
১৮৯০-এর দশকজুড়ে, টেসলা তারহীন আলো এবং বিশ্বব্যাপী তারহীন বৈদু্যতিক শক্তি বিতরণের ধারণা সম্ভব করতে নিউইয়র্ক এবং কলোরাডো স্প্রিংসজুড়ে উচ্চ ভোল্টেজ, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির বৈদু্যতিক গবেষণা করেন। ১৮৯৩ সালে, তিনি তার ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে ওয়্যারলেস যোগাযোগের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। টেসলা তার অসমাপ্ত ওয়্যারডেনক্লাইফ টাওয়ার প্রকল্পে, আন্তঃমহাদেশীয় ওয়্যারলেস যোগাযোগ এবং পাওয়ার ট্রান্সমিটারে তার চিন্তাগুলোকে বাস্তবে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন, তবে তার কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রকল্পের তহবিল শেষ হয়ে যায়। ওয়ার্ডেনক্লাইফের পরে, টেসলা ১৯১০ এবং ১৯২০-এর দশকে বিভিন্ন আবিষ্কারের জন্য একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং বিভিন্ন মাত্রার সাফল্য পান। তার উপার্জিত অর্থের বেশিরভাগ গবেষণা কাজে ব্যয় করে, শেষ জীবনে নিউইয়র্কের বিভিন্ন হোটেলে দিনযাপন করতেন তিনি এবং মরণোত্তর তার অনেক হোটেল বিল বকেয়া ছিল। ১৯৪৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে মারা যান। মৃতু্যর পর টেসলার অনেক গবেষণা ১৯৬০ সালের আগ পর্যন্ত রহস্যময় থেকে যায়। ১৯৬০ সালে জেনারেল কনফারেন্স অন ওয়েট অ্যান্ড মেসারস টেসলার সম্মানে চৌম্বকীয় প্রবাহের ঘনত্বের এসআই ইউনিটটির নামকরণ টেসলা করে। ১৯৯০-এর দশক থেকে টেসলার জনপ্রিয়তা পুনরায় বাড়তে থাকে।