সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

শীতকালীন রোগ শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

  ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শীতকালীন রোগ শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই যে কোনো ধরনের রোগ বেড়ে গেলে তা যেমন শঙ্কার, তেমনি এটাও মনে রাখা দরকার যে, দেশে চিকিৎসক থেকে শুরু করে নানা ধরনের সংকট বিদ্যমান। ফলে, যখন জানা যাচ্ছে, শীতকালীন রোগ বাড়ছে- যার ৮০ শতাংশই শিশু। তখন সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। তথ্যমতে, অনেক শিশুর ভিড় শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউটে। বেশিরভাগই আসছে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে। এসব শিশুর অভিভাবকরা বলছেন, শীতের শুরু থেকেই তাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা কমবেশি লেগেই আছে। তিন-চার দিন ধরে ঢাকায় শীত জেঁকে বসায় সেই সমস্যা আরও বেড়েছে। আর এমন অবস্থায় শীতের সময়টাতে শিশুদের সুস্থ রাখতে ঠান্ডা বাতাস ও ধুলোবালি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। বাইরে যেতে মাথা ঢেকে রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরার কথা বলছেন তারা।

আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি অবস্থার সার্বিক মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, ঢাকায় তিন দিন পর গত শনিবার কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্যের দেখা মিলেছে। এদিন রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিন শীতের অনুভূতি কমে আসতে পারে। তবে শীত থাকবে মাসজুড়েই। ফলে, একদিকে শীতকালীন রোগ; অন্যদিকে, নতুন বছরের শুরুতে তীব্র শীতের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রাও। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই শীতে ঢাকার বাতাস 'অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ' পর্যায়ে থাকছে। ফলে, ধুলোবালি আর শীতে শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। শিশু হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, হাসপাতালটিতে মোট রোগীর সংখ্যা কমলেও বর্তমানে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগী।

সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, শীতের রোগবালাই থেকে সুরক্ষার ব্যাপারে এক চিকিৎসক বলছেন, 'ঠান্ডার সময় তো ঠান্ডা লাগবেই। শীতের সময় ধুলাবালি উড়ে বেশি। ধুলা আর ঠান্ডা মিলে শ্বাসকষ্ট উঠে যায়। ছোট শিশুদের বাইরে বের করা যাবে না। বের হলেও মাথা ঢেকে দিতে হবে, মাস্ক পরবে। ঠান্ডা কাটিয়ে নিয়ে নরমাল পানি খাওয়াতে হবে, আর উষ্ণ পানিতে গোসল করাতে হবে।' ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে।

এটাও আমলে নেওয়া দরকার, শীত তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ছয়শ থেকে সাতশ'র মতো শিশু। এমন অবস্থা যে, হাসপাতালের সামনে তাঁবু গেড়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্তদের। আইসিডিডিআর,বির তথ্য বলছে, শনিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৬৭ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। অন্যদিকে, শুক্রবার ৬৪৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসেন। ২০২৫ সালের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি চিকিৎসা নেন ৮৫০ জন। গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৬৭ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। অন্যদিকে, শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ৬৪৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নেন। ২০২৫ সালের প্রথম দিন, ১ জানুয়ারি চিকিৎসা নেন ৮৫০ জন। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৮০ শতাংশই শিশু।

সর্বোপরি বলতে চাই, শীতকালীন রোগ বাড়ছে- যার ৮০ শতাংশই শিশু; এটা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া খেয়াল রাখা দরকার, প্রতি বছর শীত এলেই ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে বলেও জানা যায়। গরম ও শীতকালের ডায়রিয়া ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এই শীতকালে যে ডায়রিয়া হচ্ছে তার বড় কারণ ভাইরাল ইনফেকশন বলেও জানা গেছে। যেখানে আগত রোগীদের স্টুল টেস্ট করে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে রোটাভাইরাসের কারণে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। শীতকালীন রোগের বেশিরভাগ রোগী শিশু- যা এড়ানোর সুযোগ নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে