সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বেকারত্ব বেড়েছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

  ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৩১
বেকারত্ব বেড়েছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন
বেকারত্ব বেড়েছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে বেকার সমস্যা। দিনে দিনে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক মানুষ যদি বেকার বা কর্মহীন থাকে তা কতটা উদ্বেগজনক হতে পারে সেটি আমলে নেওয়া দরকার। বলা হয়ে থাকে বেকার মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ব্যক্তির নিজের কাছেও এখন বোঝা। দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারণে হতাশায় ভোগে তরুণরা আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। অনেকেই আবার নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে যে সামাজিক অবক্ষয় চরমে এর প্রধান কারণ বেকারত্ব।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল যে, ২০২৪ সালের শুরুতে দেশে বেকার মানুষ কম থাকলেও বছর শেষে ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা বেড়েছে। খবরে উঠে এসেছে বর্তমানে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজার। ২০২৩ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। মূলত সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, দেশের কর্মে নিয়োজিত বা শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উলেস্নখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় বেকার লোকের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস।

আমরা বলতে চাই, দেশের কর্মে নিয়োজিত বা শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উলেস্নখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় বেকার বাড়লে সেই পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, কৃষি, সেবা এবং শিল্পসহ সব খাতেই কমেছে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী। নারীর চেয়ে উলেস্নখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেশি বেড়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।

লক্ষণীয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই যারা গত সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে একঘণ্টা কাজ করার সুযোগও পাননি এবং গত এক মাস ধরে কাজ খুঁজেছেন, কিন্তু মজুরির বিনিময়ে কোনো কাজ পাননি। বিবিএস এ নিয়ম অনুসারেই বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, বিবিএসের হিসাব অনুসারে, গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে দেশে পুরুষ বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৯০ হাজার, আর নারী বেকার ৮ লাখ ৭০ হাজার। ২০২৩ সালের একই সময়ে পুরুষ বেকার ১৬ লাখ ৪০ হাজার, আর নারী বেকার ছিল ৮ লাখ ৫০ হাজার। সে হিসাবে পুরুষ বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার এবং নারী বেকার বেড়েছে ২০ হাজার। এছাড়া, শ্রমশক্তিতে এখন (তৃতীয় প্রান্তিকে) ৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। অথচ ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এ সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা কমেছে ১৯ লাখ ৫০ হাজার। যেখানে মোট শ্রমশক্তিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার। অন্যদিকে, শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার, আর নারী ১ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জনসংখ্যাবহুল বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি অন্যতম সমস্যা, যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। যখন বেকারত্ব বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ২০২৪ সালের শুরুতে দেশে বেকার মানুষ কম থাকলেও বছর শেষে ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা বেড়েছে এটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের তৎপর থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে