চার দিনের মাথায় সাতসকালে আবারও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো বাংলাদেশ। মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ভূ-কম্পনটির উৎপত্তিস্থল চীনের তিব্বতে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। ভূ-কম্পনটি বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, ভারত, ভুটানে অনুভূত হয়েছে। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া দপ্তর বলছেন, ঢাকা থেকে ৬১৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে চীনের একটি স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এর আগে ৩ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প হয়। ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। ইন্ডিয়ান পেস্নট ও ইউরেশিয়া পেস্নটের বিস্তৃতি এ অঞ্চলে। ইউরেশিয়া ও ইন্ডিয়ান টেকটোনিক পেস্নটের ফল্টে বড় ধরনের আঘাতের কারণে এর আগেও এ অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। ২০১৫ সালে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল নেপাল। ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল আরও একটি শক্তিশালী আফটার শক হয়। ১৯৩৪ সালের পর নেপালে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল এটি। এতে ৮ হাজার ৬৬৯ জন নিহত হয়। বহু স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৫৩ জন নিহত ও আহত হয়েছে আরও ৩৮ জন। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৬২ জন আহত হয়েছে।
চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টার জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে ভূমিকম্পটি অনুভূূত হয়। এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল)। এদিকে তিব্বত ছাড়াও নেপাল এবং ভারতের বেশ কিছু অংশেও ভূমিকম্প অনুভূূত হয়েছে। প্রধান ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনে অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলে ভূমিকম্প বেশ সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিগাতসে শহরটি তিব্বতের অন্যতম পবিত্র শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীনের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, ভবন ধসে পড়েছে। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর কয়েক দফা আফটার শক (পরাঘাত) অনুভূূত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও তলস্নাশি অভিযানে কাজ শুরু করেছে চীনের বিমান বাহিনী। সেখানে বেশ কিছু ড্রোনও মোতায়েন করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে পানি এবং বিদু্যৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে নেপালেও ভূমিকম্প আঘাত হানলেও সেখানে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে ২০১৫ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় ৯ হাজার মানুষ নিহত এবং আরও ২০ হাজার মানুষ আহত হয়। শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতের শিগাতসে শহর। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯। চীনের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টার জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে ভূমিকম্পটি অনুভূূত হয়। এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল)। এদিকে নেপালেও শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূূত হয়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে ভূমিকম্পটি অনুভূূত হয়েছে। ভয়ে-আতঙ্কে লোকজন নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল চীনের তিব্বতের পার্বত্য সীমান্তে নেপালের লোবুচের কাছে। ভূমিকম্পের সময় কাঠমান্ডুর লোবুচে থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বের ভবনগুলো কেঁপে উঠেছে।
এদিকে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের প্রভাবে বাংলাদেশেও ভূমিকম্প অনুভূূত হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূূত হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। রাজধানী ঢাকা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূূত হয়েছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টার পর এ ভূকম্পন অনুভূূত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অনুভূূত হওয়া ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার। সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫। 'ঢাকা থেকে ৪৮২ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের একটি স্থানে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এর প্রভাবে ঢাকাসহ বেশ কিছু স্থানে ভূকম্পন অনুভূূত হয়েছে'।
গত বছরের ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প দেখা দেয়। এর আগে ৪ ফেব্রম্নয়ারি রাত ৭টা ৫৩ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে ৪৫ সেকেন্ডেরও বেশি সময় কেঁপেছিল রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশ। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৪২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা। দেশের কোথাও থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে না লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। ভূমিকম্পের কম্পনে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পরে সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব আমাদের মন থেকে মুছে যায়। আমরা সব ভুলে যাই। প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেয়ে কম্পিত হলেও আমরা তেমন শঙ্কিত হই বলে মনে হয় না। ভূমিকম্পপরবর্তী অবস্থা মোকাবিলায় কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও আমরা দৃঢ়ভাবে ভাবি না। রিখটার স্কেলে ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্প একটি মাঝারি মানের শক্তিশালী ভূমিকম্প। কম্পনটি উৎপত্তিস্থলের ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে ৯০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়। যে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগটির ভয়াবহতা থেকে সৃষ্টিকর্তা আমাদের রক্ষা করেছেন। তা না হলে এ মাত্রার একটি কম্পন সারাদেশে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারত। ভূমিকম্পটি যদি ভূগর্ভের এতটা গভীরে না হয়ে ২০ কিলোমিটারের মধ্যেও হতো। সেক্ষেত্রেও এটি ভয়ংকর ধ্বংসলীলা ঘটাতে পারত। খোদা না করুন, এমন যদি কিছু ঘটেই যায়। তা মোকাবিলা করার আমাদের কি কোনো নূ্যনতম প্রস্তুতি আছে? প্রায় সবাই সমস্বরেই বলবেন- না, একদম না। তাই বসে থাকার কোন অবকাশ নেই।
দুর্যোগটি রোধ করার কোনো উপায়ই যখন মানুষের হাতে নেই। তাই এখনই ভূমিকম্পপরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ভূমিকম্পের কথা আলোচনা করতে গেলেই আমাদের মনে রাখতে হবে যে বর্তমানে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডটি বিগত পাঁচশ' বছরে প্রায় এক ডজন বার ভয়ংকরভাবে এ দুর্যোগটির দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ কারণে দেশের মানুষের এর বীভৎসতা, ভয়াবহতা ও ধ্বংসলীলার ব্যাপকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে। অবশ্য মাঝেমধ্যে ছোটখাটো কম্পন যে কত হাজার বার হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। গত ৪ ফেব্রম্নয়ারি রাতের ভূকম্পনটিকেও বিশেষজ্ঞরা এক ভয়ংকর বিপর্যয়ের আগাম সংকেত বলেই মনে করছেন। ভূমিকম্প এমনই এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা বলে-কয়ে আসে না। ঝড়-তুফান-বন্যা ঠেকাতে না পারলেও এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটা সুযোগ থাকে। পূর্বাভাস পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে সর্বনাশা সর্বগ্রাসী ভূমিকম্পের সংহার থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় থাকে না।
একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে রাজধানী ঢাকাসহ আক্রান্ত অঞ্চলে কী প্রলয়ঙ্করী ঘটনা ঘটতে পারে। সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য সবারই জানা আছে। তারপরও একশ্রেণির লোক শহর-নগর-বন্দরে অপরিকল্পিতভাবে বিশাল দালানকোঠা ও অট্টালিকা নির্মাণ করেই চলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে বড় বড় হাউজিং কোম্পানি নালা-ডোবা-খাল ভরাট করে নরম মাটিতে দৃষ্টিনন্দন আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণে ব্যস্ত রয়েছে। সুউচ্চ ও সুন্দর বিল্ডিং নগরীর শোভাবর্ধন করলেও তা মাটির নিচে চাপ সৃষ্টি করে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চরম উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে। আর সে জন্যই দেশে দালানকোঠা নির্মাণে কেউ নিয়মনীতির তেমন একটা তোয়াক্কা করছে না। বিল্ডিংকোড মেনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে খুব কম বাড়িই নির্মিত হয়। একদিকে আইন অমান্য করা; অন্যদিকে, নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে মমারাত্মক কারচুপি।
বেশির ভাগ দালানকোঠায়ই ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেই। তবে নির্মিত বিল্ডিংয়েও ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা সংযোজন করা যায়। বিষয়টির প্রতি কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ৭ মাত্রার মতো শক্তিশালী ভূমিকম্পেও যে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে নিউজিল্যান্ড। গত সেপ্টেম্বর মাসে ওই দেশটির একটি শহরে প্রচন্ড ভূমিকম্পে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গত ১২ জানুয়ারি ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্র হাইতির ২০০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদসহ লাখ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়। এই মহাপ্রলয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার লোক নিহত ও ৩ লক্ষাধিক লোক আহত হন। ১০ লাখ লোক হন গৃহহীন। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে গত ২৭ ফেব্রম্নয়ারি চিলিতে সংঘটিত ৮.৮ মাত্রার ভয়াবহতম ভূমিকম্পে মাত্র এক হাজার লোক নিহত হন। যদিও প্রায় বিশ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছিল। গত ৪০ বছরে চিলিতে কমপক্ষে এক ডজনবার ৭ বা ততধিক মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলেও নিয়মকানুন মেনে মজবুত ভিতের ওপর বিল্ডিং নির্মাণ করায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অবিশ্বাস্যভাবে কম হয়।
অথচ আমাদের দেশে বিষয়টির প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দেওয়ার লোক নেই। তাই আজ সবার মনেই ঢুকেছে প্রচ- ভয়। স্বাধীনতা লাভের ৪৪ বছর পরও আমরা সবকিছুতে গা-ভাসিয়ে ফাঁকিবাজি করে দায়সারাভাবে চলতে থাকব কিনা। সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে। আমাদের এ অঞ্চলটি তেমন ভূমিকম্পপ্রবণ নয়। ভূমিকম্প হলেও তা খুব ভয়াবহ হয় না। শত শত বছরের পুরনো রেকর্ড কিন্তু তা বলে না। বিভিন্ন তথ্য ও রেকর্ড থেকে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০ থেকে ৩৫টি মৃদু ভূকম্পন হয়। বিগত কয়েকশ' বছরে আমাদের দেশসহ এ অঞ্চল ও তার আশপাশ এলাকায় বেশ কিছু ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে ১৫৪৮, ১৬৪২ ও ১৬৬৩ সালে সিলেটে; ১৭৬২, ১৭৭৫ ও ১৮৮২ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে এবং ১৮৮০ সালে পাবনায়। ১৮৬৯ সালের ৬ জানুয়ারির ভূমিকম্পে সিলেটের সার্কিট হাউস, কোর্ট ও চার্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই রংপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটিকে 'দ্য বেঙ্গল আর্থকোয়েক' বলা হয়ে থাকে। তবে ১৮৯৭ সালের ১২ জুনের ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী। দালানকোঠা বিধ্বস্ত হয়। বহ্মপুত্র নদের গতিপথের পরিবর্তন হয়। বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, কুমিলস্না, ঢাকা, দিনাজপুর, রংপুর ও ময়মনসিংহে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৭৮২ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে গঙ্গা নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়।
বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতার দিক থেকে ঢাকা মহানগরীকে সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। ইরান রয়েছে প্রথম স্থানে। ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বহুতল ভবন নির্মিত হওয়ায় রাজধানী ঢাকাকেই এখন ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ে এ নগরী এক বিশাল ধ্বংস স্তূপে পরিণত হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বু্যরো ঢাকা শহর এলাকায় ৩ লাখ ২৬ হাজার ভবনের ওপর এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে, ৭ থেকে সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৭২ হাজার ভবন সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়বে। আরও ৮৫ হাজার ভবন আংশিকভাবে ধসে পড়বে। তবে অনেকেই বলেন, ৭ মাত্রা নয়, সাড়ে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পেই রাজধানী ঢাকার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে। পুরান ঢাকার অবস্থা কী রূপ ধারণ করতে পারে তা কল্পনাই করা যায় না। গত বছরের ২ জুন রাতে বেগুনবাড়িতে অননুমোদিত একটি পাঁচতলা ভবন পাশের টিনের বাড়িতে পড়ে ২৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা তো এখনো রাজধানীবাসী ভুলে যায়নি। ঢাকায় সর্বশেষ ভয়ংকর ভূমিকম্প হয়েছিল ১১৩ বছর আগে ১৮৯৭ সালে। হাজার মানুষের মৃতু্য ছাড়াও তৎকালীন ঢাকার বহু ঘরবাড়ি ও দালানকোঠার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। শতাধিক আকাশচুম্বী বিশাল অট্টালিকাসহ হাজার হাজার বহুতল ভবনের বর্তমান ঢাকা মহানগরীর সঙ্গে তখনকার ঢাকার কোনো তুলনাই চলে না। তখন নিশ্চয়ই পুরান ঢাকায় সর্বসাকুল্যে হাজারখানেক পাকা বাড়িও ছিল না। রাজধানী ঢাকায় কোনো প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প হলে গ্যাস-বিদু্যৎ বিস্ফোরণে আগুন লেগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ও অন্যান্য বিপদ মিলে যে কী ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সৃষ্টিকতা যেন, তা শুধু আমাদের কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ রাখুন, বাস্তবে তা যেন কখনোই না ঘটে। তারপরও সরকারকে জনগণের মধ্যে এ দুর্যোগের ভয়াবহতা ও ভূমিকম্পের সময় তাদের করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকম্পের সময় নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের রক্ষার্থে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
অনেকেই মনে করছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ঢাকা শহরে অবিলম্বে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও জরুরি ভিত্তিতে সংগ্রহ করা দরকার। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। এরকম সর্বনাশা দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার পর উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য আমাদের অভিজ্ঞ জনবল এবং প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রাদিরও তীব্র সংকট রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে তারা আন্তরিকভাবে মনে করেন, সরকার এ উদ্যোগকে আরও কার্যকর করে তা বাস্তবায়নে যুদ্ধাবস্থার মতো জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যাতে ভূমিকম্পপরবর্তী জরুরি পরিস্থিতি যথাযথভাবে মোকাবিলা করা যায়।