দোয়েল বাংলাদেশের জাতীয় পাখি। এটি বাংলাদেশের প্রকৃতি, পরিবেশ, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। দোয়েল বাংলাদেশে সৌন্দর্য, শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক। শরীরের উপরের অংশ কালো এবং তলদেশ সাদা, এটি ছোট আকারের পাখি, দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯-২০ সেন্টিমিটার। বাংলাদেশের মুদ্রা, পাসপোর্ট, ডাক ও বিভিন্ন সরকারি নথিতে দোয়েলের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। দোয়েল সাধারণত কীটপতঙ্গ, ছোট ছোট পোকামাকড় এবং ফল খেয়ে জীবনধারণ করে। এটি কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, যা ফসলের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে এবং কৃষিক্ষেত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া দোয়েল পাখি খাদ্য শৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু বর্তমানে শহরের পার্ক এমনকি গ্রামাঞ্চলেও দোয়েল পাখি কদাচিৎ দেখা যায়। দোয়েলের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি পরিবেশের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়। দোয়েলের সংখ্যা কমে গেলে তা পরিবেশ দূষণ বা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত দেয়। দোয়েল পাখি বিলুপ্তির পিছনে রয়েছে উলেস্নখযোগ্য কারণ হলো- পরিবেশ দূষণ: বায়ু, পানি এবং শব্দদূষণ দোয়েলের প্রজনন ও জীবনচক্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহারে এদের খাদ্য উৎসও কমে যাচ্ছে। নগরায়ণ: নগর এলাকা দ্রম্নত বাড়ছে, ফলে গাছপালা কাটা হচ্ছে এবং দোয়েলের টিকে থাকার পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। খাদ্য সংকট: দোয়েল পোকামাকড় ও ছোট ছোট প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে এদের খাদ্যের উৎসও হ্রাস পাচ্ছে। অবৈধ শিকার ও পাচার: অনেক সময় দোয়েল পাখি অবৈধভাবে শিকার বা পাচার করা হয়। বিশেষ করে, এদের সঙ্গীতময় ডাকের কারণে খাঁচায় পোষার জন্য এদের শিকার করা হয়। দোয়েল পাখির বিলুপ্তি পরিবেশের জন্য একটি গুরুতর বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া পরিবেশের ওপর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পাখিটি বিলুপ্ত হলে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের সংখ্যা বেড়ে ফসল এবং উদ্ভিদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। দোয়েল পাখি বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ এবং জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। এর বিলুপ্তি দেশের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক গৌরবের ওপর প্রভাব ফেলবে।
দোয়েল পাখি রক্ষায় করনীয় :১. দোয়েল পাখির প্রাকৃতিক বাসস্থান সংরক্ষণ করা। ২. কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত করা। ৩. বনাঞ্চল বৃদ্ধি করা। ৪. জনসচেতনতা বাড়ানো। ৫. গাছপালা রোপণ ও সংরক্ষণ। ৬. আইনের যথাযথ প্রয়োগ। মোদ্দা কথা হলো, দোয়েল শুধু আমাদের জাতীয় পাখি নয়, এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। এ পাখির সংরক্ষণ শুধু আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষাই নয়, বরং আমাদের পরিবেশের সুস্থতাও নিশ্চিত করবে।
জাফরিন সুলতানা : শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়