অরক্ষিত রেলক্রসিং যে মৃতু্যফাঁদে পরিণত হয়েছে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও রেলক্রসিংয়ে মৃতু্যর ঘটনা কমছে না। এছাড়া, এ কথাও বলা দরকার যে, অবৈধ রেলক্রসিংয়েও প্রতি বছর মারা যাচ্ছে একের পর এক মানুষ। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক এবং শঙ্কার তা অনুধাবন করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, অবৈধ রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের দায় কার? এ নিয়ে যত মতভেদই থাকুক না কেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েরও করণীয় রয়েছে। দেশের বৈধ-অবৈধ সব রেলক্রসিং কতটা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবেদনের দিকে তাকালেও তা স্পষ্ট হয়। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবক্ষেণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
উলেস্নখ্য, সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় পাত্রী দেখতে যাচ্ছিলেন এক পরিবারের সাতজন। শীতের দুপুরে তারা উচ্ছ্বসিত থাকলেও মুহূর্তে তা রূপ নেয় বিষাদে। হঠাৎ ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে খাদে পড়ে যায় মাইক্রোবাস। এতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। গত মঙ্গলবার ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকার রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রেলপথে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে বলেই জানা যাচ্ছে। তথ্য মতে, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে গেরদা এলাকার রেলগেটে উঠতেই মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয় ট্রেন। এতে গাড়িটি খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনজন। আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেলে নেওয়ার পর আরও দু'জনের মৃতু্য হয়।
আমরা বলতে চাই, এমন হৃদয়বিদারক মৃতু্য কতটা ভয়ানক তা অনুধাবন করা জরুরি। এইভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা মানুষের মৃতু্য কতটা উদ্বেগজনক সেটি যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই, তেমনি এ কথাও বলা দরকার, অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে মৃতু্যর বিষয়টি বারবার সামনে আসছে। শুধু এবারের ঘটনাই নয়, এর আগেও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে মৃতু্য এবং এর ভয়াবহতা সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, এবারের ঘটনাটি আমলে নিতে হবে, এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, মাইক্রোবাসটি রেললাইনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী থেকে ফরিদপুর হয়ে ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দেয়। গাড়িটি প্রায় ১০০ গজ ঠেলে নিয়ে যায় ট্রেন। একপর্যায়ে রেললাইনের পাশে একটি পিলারে ধাক্কা লেগে পাশের খাদে পড়ে যায়। জানা যাচ্ছে যে, রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানের সড়কে দু'পাশে রেলের জমি দখল করে বেশ কয়েকটি দোকান গড়ে উঠেছে। রয়েছে কয়েকটি গাছ। গেরদার দিক থেকে মুন্সীবাজারের সড়কটি সোজাসুজি চলে গেছে। দু'পাশে দোকান থাকায় এবং হুইসেল না দেওয়ায় ট্রেন আসা-যাওয়ার বিষয়টি দেখা ও বোঝা যায় না। এছাড়া, এটাও জানা গেছে, রেলক্রসিংটি অরক্ষিত। কোনো গেট নেই। দোকানের কারণে হুইসেল না দিলে ট্রেন আসছে কিনা বোঝা যায় না। এবারের ঘটনার সময়ও ট্রেনটি কোনো হুইসেল দেয়নি; তবে দুর্ঘটনা দিয়েছে- এমন মতও উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সচেতনতাসহ যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধ করতে হবে। একের পর এক দুর্ঘটনায় তরতাজ প্রাণ যাবে এটা হতে পারে না। বলা দরকার, ফরিদপুর রেলের স্টেশন মাস্টার জানিয়েছেন, মুন্সীবাজার রেলক্রসিং রেল বিভাগের অনুমোদিত নয়। তবে এ ক্রসিংটি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে গেট ও গেটম্যান দেওয়ার জন্য তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করবেন বলেও জানিয়েছেন।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দুর্ঘটনায় মৃতু্যর যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা এড়ানোর সুযোগ নেই। অন্যদিকে রেলক্রসিংয়ে মৃতু্যর ঘটনা এবারই নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে, আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। পাত্রী দেখতে যাওয়ার সময় এক পরিবারের সাতজনের ৫ জনই প্রাণ হারিয়েছে- এরকম ঘটনা কতটা মর্মান্তিক এবং ভয়াবহ তা অনুধাবন করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নিরাপদ রেলক্রসিং নিশ্চিত করাসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এবারের ঘটনা আমলে নিয়ে এর পুনরাবৃত্তি রোধে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।