রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্ব শ্রমবাজারে পিছিয়ে পড়ছে দেশ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

  ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিশ্ব শ্রমবাজারে পিছিয়ে পড়ছে দেশ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

বিশ্ব শ্রমবাজার পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কথাও বলা দরকার, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে, দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। প্রসঙ্গত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। যখন এটা সামনে আসছে যে, বিশ্ব শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ- তখন তা সার্বিকভাবেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওযা দরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিদেশে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী পাঠানো কমে গেছে। বিশেষ করে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ থেকে ২০২৪ সালে রপ্তানির হার ক্রমেই কমেছে। বিশ্ব শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়লেও এর বিপরীতে স্বল্প দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী রপ্তানি বেড়েছে। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। বিশ্ব শ্রমবাজার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ করে তার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়াও জরুরি। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, দক্ষতা উন্নয়নে পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও নীতিমালার অভাবে এ প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। আর এটাও আলোচনায় এসেছে, এ কারণে হারাতে হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা। প্রবাসী শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।

আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে কয়টি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্যে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উলেস্নখযোগ্য। ফলে, এই খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নেও সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি দেশকে আরও অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে দক্ষ জনশক্তির বিষয়টি আমলে নিয়েও এ ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। শ্রমবাজারে পিছিয়ে পড়ার কারণগুলো বিচার করতে হবে সেই মোতাবেক উদ্যোগী হতে হবে। দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি যত বেশি বাড়বে, ততই নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হবে বলেই আমরা মনে করি।

উলেস্নখ্য, সর্বশেষ ২০২৪ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যান ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা দুই লাখ ১৪ হাজার ৪৪ জন- যা মোট শ্রমবাজারের ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। পেশাজীবী হিসেবে পাড়ি জমিয়েছেন ৪১ হাজার ৬২১ জন- যা মোট শ্রমবাজারের চার দশমিক ৫৯ শতাংশ। স্বল্প দক্ষ কর্মী হিসেবে বিদেশে গেছেন চার লাখ ৯১ হাজার ৪৮০ জন বা ৫৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ মোট জনশক্তি রপ্তানির অর্ধেকের বেশি স্বল্প দক্ষ হিসেবে বিদেশে গেছেন। এছাড়া, আধা-দক্ষ কর্মী হিসেবে বিদেশে গেছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ১২৮ জন বা ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মূলত রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চের (রামরু) এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে রামরুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। অন্যদিকে, একই সময়ে স্বল্প দক্ষ শ্রমিক রপ্তানির সংখ্যা আগের চার বছরের চেয়ে বেড়েছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ থেকে বিদেশের শ্রমবাজারে স্বল্প দক্ষ বা অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অন্যদিকে, দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি ক্রমেই কমছে- যা এড়ানো যাবে না। এক্ষেত্রে বলা দরকার, অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা তিন বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ করে শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছেন। তাদের অধিকাংশই স্বল্প দক্ষ বা অদক্ষ যাচ্ছেন। ফলে, এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না। প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করাও আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে