রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
স্মরণীয়-বরণীয়

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

  ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (৬ মার্চ, ১৮১২-২৩ জানুয়ারি ১৮৫৯) উনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি কবি, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তিনি সংবাদ প্রভাকর-এর সম্পাদক ছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বাংলা সাহিত্যের যুগসন্ধিক্ষণের কবি হিসেবে খ্যাত। তার হাত ধরেই বাংলা কবিতা জগৎ মধ্যযুগীয় সীমানা অতিক্রম করে আধুনিকতার পথে পা বাড়িয়েছিল। তিনি 'গুপ্ত কবি' নামেও পরিচিত ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ তার পরবর্তী বহু সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে 'গুরু'পদে বরণ করেন। তিনি নানাবিধ পত্র-পত্রিকা সম্পাদনার কাজেও তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপলস্নী (বর্তমানে কাঁচড়াপাড়া) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্য পরিবারে- যা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তার পারিবারিক পদবি দাশগুপ্ত পরিবর্তন করে গুপ্ত করেছিলেন। বয়স যখন দশ তখন তার মা পরলোকগমন করেন। পিতা ২য় বিয়ে করলে এরপর থেকে তিনি কোলকাতার জোড়াসাঁকোতে মামার বাড়িতে বাস করতে শুরু করেন। অকালে প্রয়াণ ঘটে মা শ্রীমতী দেবীর। মাতৃবিয়োগের পর ঈশ্বরচন্দ্রকে কলকাতায় চলে আসতে হয়। আশ্রয় নেন জোড়াসাঁকোয় মামারবাড়িতে। শৈশবকালে লেখাপড়ার প্রতি অমনোযোগিতার কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর অগ্রসর না হলেও, অসাধারণ মেধা ও স্মৃতিশক্তির জোরে ঈশ্বরচন্দ্র নিজ চেষ্টায় বাংলা, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষা শেখেন এবং বেদান্তদর্শনে যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেন। সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশের প্রেরণায় এবং বন্ধু যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুরের আনুকূল্যে ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার সম্পাদনায় নিযুক্ত হয়েছিলেন। প্রায় বারো বছর গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রাচীন কবিদের তথ্য সংগ্রহ ক'রে জীবনী রচনা করেছিলেন। আধুনিক বাংলার সমাজ গঠনে সংবাদ প্রভাকরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যুগসন্ধির কবি হিসেবে পরিচিত, কারণ তিনি সমকালের সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করলেও তার ভাষা, ছন্দ ও অলঙ্কার ছিল মধ্যযুগীয়। মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্রের সাহিত্যাদর্শ যখন লুপ্ত হয়ে আসছিল, তখন তিনি বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে খন্ড কবিতা রচনার আদর্শ প্রবর্তন করেন। ব্যঙ্গ-বিদ্রম্নপই ছিল তার রচনার বিশেষত্ব। ব্যঙ্গ-বিদ্রম্নপের এ ভঙ্গি তিনি আয়ত্ত করেছিলেন কবিয়ালদের কাছ থেকে। স্বদেশ ও স্বসমাজের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্রের অনুরাগ ছিল অত্যন্ত নিবিড়। তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য যে আন্দোলন করেছেন তা আজও স্মরণীয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে