রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

দেশে ৩ কোটি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

  ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দেশে ৩ কোটি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হলে সামগ্রিক অর্থেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়। খবরে প্রকাশ, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন ঘটনার কারণে গত বছর বাংলাদেশে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রথমবারের মতো প্রকাশিত জাতিসংঘের শিশু তহবিল-ইউনিসেফের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে- বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন ঘটনার কারণে দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত 'লার্নিং ইন্টারাপটেড :গেস্নাবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশনস ইন ২০২৪' শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

প্রসঙ্গত, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার উপায় নেই, কিন্তু যথার্থ প্রস্তুতি নিয়ে মোকাবিলার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। যেহেতু আবহাওয়াজনিত কারণে শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, তাই এই ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় সেই দিক বিবেচনায় রাখতে হবে। করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ইউনিসেফের ঢাকা কার্যালয় থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে গত বছর তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যা ও খরার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে ৭৭টি দেশের অন্তত ২৪ কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ছিল দক্ষিণ এশিয়া। বাংলাদেশও এ তালিকা থেকে বের হতে পারেনি।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের এপ্রিল ও মে মাসে দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ শিশুদের মধ্যে পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করেছিল। সারাদেশে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া, মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে কিছু জেলায় শিশুদের স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। জুনে হয় তীব্র বন্যা। এ কারণে সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ছিল ৭০ লাখ। অন্যদিকে, বন্যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সিলেট জেলায়। সেখানে ছয় লাখের বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়েছে।

লক্ষণীয়, চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির প্রবণতা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন তা আরও বাড়িয়ে তুলছে। জলবায়ু পরিবর্তনে নানা সংকট তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের শিশুদের শিক্ষা ক্ষেত্রেও। এটা এড়ানো যাবে না- চরম তাপমাত্রা ও অন্যান্য জলবায়ুজনিত সংকট শুধু শিশুদের স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমই ব্যাহত করে না। এর প্রভাবে শিশুদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকলে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

জলবায়ু ঝুঁকি সূচক অনুযায়ী, জলবায়ু ও পরিবেশগত সংকটের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা। তাই, এটা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এছাড়া, নিয়মিত দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে শিখন দারিদ্র্য দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। স্কুলগামী শিশুদের প্রতি দুইজনে একজন তার ক্লাস অনুযায়ী যতটুকু পড়তে পারার কথা, তা পারছে না। এছাড়া, বাল্যবিয়েসহ নানা সংকটও বিদ্যমান।

সর্বোপরি, দেশে শিশুদের শিক্ষা পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শিশুদের সুরক্ষার জন্য স্কুল ও শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পরিকল্পনার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং শিক্ষায় জলবায়ুকেন্দ্রিক বিনিয়োগ লক্ষণীয়ভাবে কম। এই তথ্য গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। শিশুর সুরক্ষা ও শিক্ষার বিস্তারে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে