শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

বাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা পোশাক খাতের সংকট নিরসন করুন

  ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা পোশাক খাতের সংকট নিরসন করুন

তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি খাত। এই খাতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা শঙ্কাজনক। সাম্প্র্রতিককালে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে গার্মেন্টস বন্ধ হওয়া, উৎপাদন হ্রাসসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এবারে জানা গেল, শ্রম অসন্তোষ, ডলার সংকট, উচ্চ সুদহার, গ্যাস-বিদু্যৎ সংকটে ভুগছে দেশের পোশাক খাত। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে পোশাক শ্রমিকরা নিয়মিতই মাঠে নামছেন। নানামুখী সমস্যায় কমেছে উৎপাদন। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত সংকট সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

আরো উদ্বেগজনক তথ্য হলো, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রপ্তানিকারকরা সময় মতো উৎপাদন, রপ্তানি, কাঁচামাল আমদানি এবং পরিবহণ সংকটে পড়ছেন। কয়েকটি আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ড এ দেশ থেকে কার্যাদেশ সরিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলো লাভবান হচ্ছে। নানাভাবেই এই আশঙ্কা উঠে আসছে যে, বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে আরো বাধার মুখে পড়তে পারে। যা এড়ানোর সুযোগ নেই। আমলে নেওয়া দরকার দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে পোশাক খাতের অবদানকে। তাই এই খাতে যে কোনো ধরনের সংকট তৈরি হলে সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাসহ দেশের পোশাক খাতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করে দ্রম্নত কার্যকরী পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

উলেস্নখ্য, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা। এরপর এই পোশাকশিল্পই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। দেশের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে কেবল গত বছরই ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২৩-এর তথ্যানুযায়ী, ২০০৫ সালে বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অংশ ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ, কিন্তু গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০০০ সালে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছিল। গত ২২ বছরে রপ্তানির পরিমাণ উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং গত বছর পোশাক রপ্তানি থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এছাড়া, গত দুই দশকে পোশাক খাতের এই সম্প্রসারণের পেছনে কয়েকটি উদ্যোগ ছিল। যার ফলে চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিও বেড়েছে।

অন্যদিকে গত এক বছরে তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল শিল্পের ১৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ৭৬টি, নিট খাতে ৫০টি এবং টেক্সটাইল খাতের ১৪টি কারখানা রয়েছে। এক বছরে ১৪০টি কারখানার মোট ৯৪ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন বলে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, এক বছরে সংগঠনটির সদস্যভুক্ত ৭৬টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানায় কাজ করা ৫১ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে ৫৮ কোটি মার্কিন ডলারের। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৯ কোটি ডলার বা ৩৩ শতাংশ।

সর্বোপরি, পোশাক খাতে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সমাধানের বিকল্প নেই। কারখানা বন্ধের ঘটনাও সার্বিকভাবে নেতিবাচক। এছাড়া, শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে বাংলাদেশে কারখানা বন্ধ বা চাকরি হারানো এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। পোশাক খাতের সার্বিক সংকট মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে