নিজেকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় সংসদের স্পিকার’ ঘোষণা দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক ও দ্য রেড জুলাই সাতক্ষীরা জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদ বিন ফিরোজ।
সোমবার (১৬ জুন) সন্ধ্যা ৭.২৯ মিনিটে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের ব্যক্তিগত আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি নিজেকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ‘স্পিকার’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
মুজাহিদের ফেসবুক প্রোফাইলে আপলোড করা পোস্টে দেখা যায়, জাতীয় সংসদের লোগো সংবলিত একটি ছবি ব্যবহার করে তিনি লিখেছেন, “Started New Job at Bangladesh Parliament-জাতীয় সংসদ”। পোস্টের অবস্থান দেখানো হয়েছে ঢাকা শহরে এবং তার পাশে লেখা হয়েছে ‘স্পিকার’ হিসেবে যোগদানের তথ্য, তাছাড়া লিখেছেন ‘স্বঘোষিত’।
পোস্টের লিংক এখানে: https://www.facebook.com/share/p/1FxodMNNrg/
মুজাহিদ বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেবহাটা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তার এমন পোস্ট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অনেকে এটিকে রসিকতা হিসেবে দেখলেও, অনেকেই বিষয়টিকে ‘ভুল প্রচার’ ও ‘প্রতারণামূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এ বিষয়ে মুজাহিদের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি বা তিনি পরবর্তীতে ‘জাতীয় সংসদের স্পিকার’ পদে চাকুরিতে যোগদানের বিষয়ে ফেসবুকে কোন ব্যাখ্যা দেননি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার নিয়োগ হয় সাংবিধানিক পদ্ধতির মাধ্যমে এবং এই পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন। তাই এধরণের ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর দাবি আইনানুগ অপরাধ।
গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া দাবি আইনের যেসব ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১. ফৌজদারি দণ্ডবিধি (Penal Code, 1860):
ধারা ১৭১ – জনসেবার ভান (Personating a public servant): যদি কেউ নিজেকে সরকারি কর্মচারী (যেমন: জাতীয় সংসদের স্পিকার) হিসেবে ভান করে বা তা প্রতিপাদন করে কোনও কাজ করেন বা করতে চেষ্টা করেন, তাহলে:
সর্বোচ্চ শাস্তি: ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।
ধারা ৪১৬ – ভুয়া পরিচয় গ্রহণ (Cheating by personation): কেউ যদি নিজেকে অন্য ব্যক্তি বা পদে ভান করে কাউকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে কিছু করেন, তাহলে:
শাস্তি: ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।
২. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ (Digital Security Act, 2018):
ধারা ২৫ – মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার: ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে সমাজ বা রাষ্ট্রে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলে:
শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড, বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, বা উভয় দণ্ড।
ধারা ২৯ – মানহানিকর ডিজিটাল কনটেন্ট প্রকাশ: জাতীয় সংসদের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর ভুয়া দাবি পোস্ট করলে:
শাস্তি: সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা।
৩. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (ICT Act) – বিলুপ্ত হলেও প্রাসঙ্গিক:
যদিও এটি বাতিল করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু করা হয়েছে, তবে পূর্ববর্তী মামলায় এ আইনও কার্যকর হয়েছে, যেখানে ভুয়া পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে রাষ্ট্রীয় পদ দাবি করা "অসৎ উদ্দেশ্য প্রমাণে" অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী স্পিকার পদ:
বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৪–৭৫ অনুচ্ছেদে স্পিকারের দায়িত্ব, নির্বাচন ও ক্ষমতা নির্ধারণ করা আছে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদ। কাউকে এ পদের পরিচয় ভান করে দাবি করা শুধু অনৈতিকই নয়, এটি রাষ্ট্রদ্রোহীতার পর্যায়েও পড়তে পারে নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে।
সংক্ষেপে বলা যেতে পারে কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে ভুয়া দাবি করেন তাহলে সেটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ (ধারা ১৭১ ও ৪১৬), ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দণ্ডনীয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাহানিকর কার্যকলাপ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।