বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি জাতীয় রূপান্তর ও বিশ্বব্যাপী সুনাম বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি

যদি বিএনপি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট পায় এবং এই কর্মসূচি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি বাংলাদেশের অবস্থানকে টেকসই উন্নয়নের জন্য অবদানকারী দেশ হিসেবে ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করবে। এটি একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের আহ্বান- একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে যাত্রা।
মো. বেনজীর শাহ শোভন
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি জাতীয় রূপান্তর ও বিশ্বব্যাপী সুনাম বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি
বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি জাতীয় রূপান্তর ও বিশ্বব্যাপী সুনাম বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি

বাংলাদেশ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, অর্থনৈতিক সাম্য এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য জাতীয় আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সুনাম বৃদ্ধির প্রয়াস একীভূত করতে হবে। বিএনপির ৩১-দফা কর্মসূচি একটি সাহসী রূপরেখা হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছে, যা কেবল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইসু্যগুলো সমাধানই করে না বরং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রম্নতি জোরদার করে। যদি এটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেটের মাধ্যমে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এ কর্মসূচি বাংলাদেশকে রূপান্তরিত করতে পারে এবং বাংলাদেশের সুনাম বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির একটি উপায় হতে পারে।

শাসনব্যবস্থা ও সামাজিক সম্প্রীতির প্রতি অঙ্গীকার

৩১-দফা কর্মসূচিতে জাতীয় অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে শাসনব্যবস্থার সংস্কারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন (দফা ১), নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন (দফা ৩) এবং বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা শক্তিশালীকরণ (দফা ১০) এসডিজি ১৬ (শান্তি, ন্যায়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান)-এর সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ পদক্ষেপগুলো জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং শাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে, জাতীয় সম্প্রীতি কমিশন গঠন (দফা ২) এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ (দফা ১৬) এসডিজি ১০ (বৈষম্য হ্রাস)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সামাজিক সম্প্রীতি স্থাপন করবে।

অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করা

বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথ অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো এবং সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করার মধ্যে নিহিত। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি (দফা ১৭), যুব উন্নয়ন (দফা ২৩) এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (দফা ২৬) এসডিজি ৮ (শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি), এসডিজি ১০ (বৈষম্য হ্রাস) এবং এসডিজি ১ (দারিদ্র্য দূরীকরণ)-এর সঙ্গে সুসংগত। বেকার ভাতা প্রদান (দফা ২৩), নারীর ক্ষমতায়ন (দফা ২৪) এবং অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন (দফা ১৫) টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করবে। এই পদক্ষেপগুলো শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নত করবে না, বরং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এবং ন্যায্যতার বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে।

জ্ঞাননির্ভর ও স্থিতিশীল জাতি গঠন

শিক্ষা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ এসডিজি ৪ (গুণগত শিক্ষা) এবং এসডিজি ৯ (শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো)-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অঙ্গীকার (দফা ২৫) এবং প্রযুক্তি ও মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ (দফা ৩০) বাংলাদেশকে একটি অগ্রগামী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা : অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ভিত্তি

নগর এবং গ্রামীণ পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। ৩১-দফা কর্মসূচির আওতায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন (দফা ২৮), পরিবেশবান্ধব নগর উন্নয়ন (দফা ৩১) এবং জ্বালানি খাতের উন্নয়ন (দফা ১৮) এসডিজি ১১ (টেকসই শহর ও সম্প্রদায়), এসডিজি ৯ এবং এসডিজি ৭ (স্বল্পমূল্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি আধুনিক ও টেকসই শহর তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

গ্রামীণ অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি অবকাঠামোর উন্নয়ন (দফা ২৭), কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং পরিবহণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে নগরাঞ্চলের ওপর চাপ হ্রাস পাবে এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত হবে। সমানভাবে উন্নয়নশীল গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের চাপ কমাবে।

জলবায়ু কার্যক্রম ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতায় নেতৃত্ব দেওয়া

বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিবেশগত বিষয়গুলোতে নেতৃত্ব দেওয়ার একটি নৈতিক ও বাস্তবিক বাধ্যবাধকতা অনুভব করে। জলবায়ু কার্যক্রম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (দফা ২৯) এবং টেকসই কৃষি (দফা ২৭) এসডিজি ১৩ (জলবায়ু কার্যক্রম), এসডিজি ১২ (দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন) এবং এসডিজি ১৫ (স্থলজীবন)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি (দফা ১৮) এবং পরিবেশবান্ধব নগরায়ন (দফা ৩১) একটি পরিবেশগত ভারসাম্যপূর্ণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে।

বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব শক্তিশালীকরণ

বিদেশ নীতিতে জাতীয় স্বার্থ অগ্রাধিকার দেওয়া (দফা ১৯) এসডিজি ১৭ (লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অংশীদারিত্ব)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মতো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার দায়িত্বশীল বৈশ্বিক অবস্থানকে সুসংহত করতে পারে।

উপসংহার : পরিবর্তনের একটি রূপরেখা

বিএনপির ৩১-দফা কর্মসূচি শুধু একটি রাজনৈতিক ইশতেহার নয়, এটি জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পাশাপাশি বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় অবদান রাখার একটি বিস্তৃত কাঠামো। শাসন সংস্কার, অর্থনৈতিক সাম্য, নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা, পরিবেশগত দায়িত্ব এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের ওপর ফোকাস করে এই পরিকল্পনা জাতীয় আকাঙ্ক্ষা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রম্নতির মধ্যকার ফারাক ঘুচিয়ে উভয়ের লক্ষ্যে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করে।

যদি বিএনপি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট পায় এবং এই কর্মসূচি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি বাংলাদেশের অবস্থানকে টেকসই উন্নয়নের জন্য অবদানকারী দেশ হিসেবে ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করবে। এটি একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের আহ্বান- একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে যাত্রা।

মো. বেনজীর শাহ শোভন :পরিকল্পনাবিদ, সদস্য, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পস্ন্যানার্স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে