রমজান মাস মহান আলস্নাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এক বিশেষ অনুগ্রহ। এই মাস আত্মশুদ্ধি, সংযম, ইবাদত ও তাকওয়ার এক অপূর্ব প্রশিক্ষণকাল। এটি শুধু রোজা রাখার মাস নয়, বরং নিজের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার এক সুবর্ণ সুযোগ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং, তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে।" (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
রাসুলুলস্নাহ (সা.) রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষ মনোযোগ দিতেন এবং উম্মতকে এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উপদেশ দিতেন।
রমজানের মর্যাদা সম্পর্কে জানা : রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য না জানলে এ মাসের যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব নয়। সাহাবায়ে কেরামকে রাসুলুলস্নাহ (সা.) রমজানের ফজিলত সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন। প্রত্যেক মুমিনের উচিত রমজানের গুরুত্ব অনুধাবন করা ও অন্যদের সচেতন করা।
চাঁদ দেখে দোয়া পড়া: রমজানের চাঁদ দেখা সুন্নত। রাসুলুলস্নাহ (সা.) চাঁদ দেখার পর বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন-
"হে আলস্নাহ, তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত করো নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আলস্নাহ।" (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ১২৩৬)
চাঁদ দেখে রোজা রাখা : রাসুলুলস্নাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, চাঁদ দেখে রোজা শুরু ও শেষ করতে। তিনি বলেন, "চাঁদ না দেখে তোমরা রোজা পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার করবে না। যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে ৩০ দিন পূর্ণ করবে।" (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৬)
আলস্নাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা : রমজান আলস্নাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এই মাসে উপনীত হওয়ার জন্য মুমিনদের উচিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, "পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমা থেকে অন্য জুমা এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যায় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৩৮)
আলস্নাহর কাছে প্রতিদান আশা করা: রমজানের আমল আলস্নাহর কাছে কবুল হওয়ার আশায় সম্পন্ন করা উচিত। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ইমানসহ সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০১)
বেশি বেশি নেক আমল করা : রমজানে আমলের প্রতিদান বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, "রমজান মাসে একটি ওমরাহ করা একটি ফরজ হজ করার সমান।" (সহিহ বুখারি)
অধিক তাওবা করা : রমজান গুনাহ মাফের মাস। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন,
"তার নাক ধুলায় ধূসর হোক, যার কাছে রমজান মাস এলো অথচ তার গুনাহ মাফ হওয়ার পূর্বেই তা পার হয়ে গেল।" (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৫)
স্থানীয় সময় অনুসারে সাহরি ও ইফতার করা : যে এলাকায় অবস্থান করা হবে, সেই এলাকার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অনুযায়ী সাহরি ও ইফতার করা আবশ্যক।
সদকাতুল ফিতর আদায় করা : রমজান শেষে ঈদের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। আবদুলস্নাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত,
"রাসুলুলস্নাহ (সা.) লোকদের ওপর রমজানের সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব করেছেন। এক 'সা' খেজুর অথবা যব প্রত্যেক মুসলমান- স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ ও নারীর জন্য।" (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ২৫০৩)
রমজানের শিক্ষা জীবনে ধারণ করা : রমজান আত্মশুদ্ধি ও আমলের প্রশিক্ষণকাল। মুমিন এই সময় অর্জিত তাকওয়া, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ সারা বছর ধরে অবলম্বন করবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
\হ"তোমরা সেই (নির্বোধ) নারীর মতো হয়ো না, যে তার পাকানো সুতা শক্ত করে পাকিয়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে।" (সুরা নাহল, আয়াত: ৯২)
রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, "আলস্নাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো- যা ধারাবাহিকভাবে করা হয়, যদিও তা অল্প হয়।" (সুনানে বায়হাকি, হাদিস: ৪২৪০)
পবিত্র মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি, আলস্নাহর নৈকট্য অর্জন ও তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আমরা পরকালীন মুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারি। রাসুলুলস্নাহ (সা.) যেমন রমজান মাসে ইবাদতে অধিক মনোযোগী হতেন, তেমনই আমাদেরও উচিত এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কাটানো। আলস্নাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র মাসের বরকত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম : চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব কে এম আব্দুল কারীম রাহিমাহুলস্নাহ ট্রাস্ট