সততার পুরস্কার
১. কালাম, আবুল ও হাফিজ একই গ্রামে বাস করে। তাদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। কোনোমতে দিন অতিবাহিত করে। হাজী মকবুল সাহেব তার জাকাতের টাকা দিয়ে আবুলকে একটা রিকশা, কালামকে একটা ভ্যানগাড়ি আর হাফিজকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দিল আর বলল, তোমরা পরিশ্রম করে খাও আর তোমাদের সাধ্যমতো গরিব মানুষের উপকার করো। কিছুদিন পর হাজী সাহেব তাদের পরীক্ষা করার জন্য এক ভিক্ষুককে পাঠালো তাদের কাছে সাহায্য চাইতে। আবুল আর কালাম কোনো সাহায্যই করল না। কিন্তু হাফিজ বিনে পয়সায় ভিক্ষুকের জামাটা সেলাই করে দিল।
ক. স্বর্গীয় দূত কতজন ইহুদিকে পরীক্ষা করেছিলেন?
খ. স্বর্গীয় দূত মানুষের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন কেন?
গ. কালাম ও আবুলের কাজের মাঝে 'সততার পুরস্কার' গল্পের যে দিকটি প্রতিফলিত তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. "হাফিজের কাজের মধ্যেই 'সততার পুরস্কার' গল্পের মূল শিক্ষা নিহিত"্ত কথাটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :
ক. স্বর্গীয় দূত তিনজন ইহুদিকে পরীক্ষা করেছিলেন।
খ. প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি বলেই স্বর্গীয় দূত মানুষের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন।
স্বর্গীয় দূত বলতে এখানে আলস্নাহর দূত বা ফেরেশতাকে বোঝানো হয়েছে। ফেরেশতারা আলস্নাহর হুকুমে কাজ করে থাকেন। আলোচ্য গল্পে তিনজন ইহুদিকে পরীক্ষার জন্য আলস্নাহ এক ফেরেশতাকে পাঠান। ফেরেশতা তখন মানুষের রূপ ধারণ করে ইহুদিদের সামনে আসেন যাতে কেউ তার আসল পরিচয় জানতে না পারে।
গ. কালাম ও আবুলের কাজের মাঝে 'সততার পুরস্কার' গল্পের প্রথম দুই ইহুদির অকৃতজ্ঞ আচরণের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
'সততার পুরস্কার' গল্পের প্রথম দুই ইহুদি তাদের আগের দুরবস্থার কথা অস্বীকার করে এবং ফেরেশতার প্রতি অমানবিক আচরণ করে। উদ্দীপকের কালাম এবং আবুলও ঠিক একই রকম চরিত্রের অধিকারী।
উদ্দীপকের কালাম ও আবুল দরিদ্র ও অসহায় ছিল। হাজী মকবুল সাহেবের সহায়তায় তাদের জীবনে সুদিন আসে। কিন্তু পরে তারা অকৃতজ্ঞ ও অহংকারী হয়ে ওঠে। এ জন্য তারা দরিদ্র ভিক্ষুককে কোনো সাহায্যই করেনি যেমনটি দেখা যায় আলোচ্য গল্পের প্রথম দুই ইহুদির আচরণে। তারাও দরিদ্র বিদেশির রূপধারণকারী ফেরেশতাকে কোনো সাহায্য করেনি।
\হঅর্থাৎ উদ্দীপকের কালাম, আবুল এবং 'সততার পুরস্কার' গল্পের প্রথম দুই ইহুদির আচরণে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া যায়।
ঘ. সততা ও নৈতিক মূল্যবোধের পরিচয় তুলে ধরাই 'সততার পুরস্কার' গল্পের মূল শিক্ষা, যা উদ্দীপকের হাফিজ চরিত্রের মাঝে সার্থকভাবে ফুটে উঠেছে।
'সততার পুরস্কার' গল্পে সততা ও নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যা তৃতীয় ব্যক্তি তথা অন্ধ ইহুদির আচরণে প্রকাশ পেয়েছে। বিদেশি বিপদগ্রস্ত লোকটিকে সাহায্যার্থে পছন্দমতো জিনিস নেওয়ার আন্তরিক অনুরোধ করেছে।
উদ্দীপকের হাফিজ দরিদ্র অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। হাজী সাহেবের দেওয়া সেলাই মেশিন হাফিজের অবস্থা বদলে দিয়েছে। এ জন্য সে সব সময় আলস্নাহর নিকট কৃতজ্ঞ থেকেছে। আর তাই অসহায় দরিদ্র ভিক্ষুক তার কাছে এলে সে ভিক্ষুকের জামাটা বিনে পয়সায় সেলাই করে দিয়ে কৃতজ্ঞতা ও নৈতিকতার পরিচয় দিয়েছে।
'সততার পুরস্কার' গল্পের তৃতীয় ইহুদি এবং উদ্দীপকের হাফিজের মনোভাব একই ধরনের। নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন হলেও তারা অতীতকে ভুলে যায়নি। দরিদ্র অসহায়কে সহায়তা করে তারা নৈতিকতার পরিচয় দিয়েছে। আর এটিই হচ্ছে 'সততার পুরস্কার' গল্পের মূল শিক্ষা। এ বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।
মিনু
২. খাদিজা সারা সকাল মিসেস সালমার বাসায় কাজ করে, তাকে খালাম্মা বলে ডাকে। সে মিসেস সালমার যাবতীয় কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করে। দিবা শাখার একটি স্কুলেও সে পড়ে। পড়ালেখায় সে পিছিয়ে নেই। শুধু প্রকৃতির কোনো কিছুর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠেনি; সে সময়ই বা তার কোথায়? তার নিজের জীবন আর কাজ নিয়েই সে ব্যস্ত। প্রকৃতিতে নয়, নিজের কাজেই সে শান্তি খুঁজে পায়। খাদিজা তার কাজ দিয়ে, কথা দিয়ে মিসেস সালমাকে এমন করে নিয়েছে যে মিসেস সালমাও খাদিজাকে পরিবারের অন্য সদস্যের মতোই মনে করে।
ক. মিনু কার বাড়িতে থাকত?
খ. ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের খাদিজা ও মিনুর মধ্যে যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায় ্ত তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'খাদিজার শিক্ষা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক, আর প্রকৃতি হচ্ছে মিনুর পাঠশালা'- কথাটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :
ক মিনু দূরসম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে থাকত।
খ. ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরে একটি বিশেষ দিক অর্থাৎ মনকে বোঝানো হয়েছে।
প্রত্যেক মানুষেরই পাঁচটি ইন্দ্রিয় আছে। লেখক এই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরে মানুষের ভেতরে এক প্রকার অদৃশ্য অনুভূতির কথা বলেছেন। সে অনুভূতির উৎস হলো মানুষের মন বা হৃদয়। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে এই মনকেই বোঝানো হয়েছে।
গ. শারীরিক অক্ষমতা এবং মানসিক অবস্থার বিচারে উদ্দীপকের খাদিজা ও মিনুর মধ্যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
'মিনু' গল্পের মিনু বাক্ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ে। বাবা-মা না থাকায় দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় থাকে। সে বাড়ির সকল কাজ মনোযোগ দিয়ে করে। তার কোনো সঙ্গী না থাকায় প্রকৃতির সঙ্গেই গড়ে উঠেছে সখ্য। যে স্বপ্ন দেখে তার বাবা একদিন ফিরে আসবে। আর এই স্বপ্নই তাকে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
উদ্দীপকের খাদিজা যে বাসায় কাজ করে, সেই বাসার সে সদস্যের মতো হয়ে উঠছে। সে স্কুলে পড়ে, নিজের জীবন ও কাজ নিয়েই তার ব্যস্ততা। পারিবারিকভাবেও সে সবার সাথে মিশে গেছে, কিন্তু মিনু তা পারেনি। কাজ আর আত্মভাবনায় ডুবে থাকে মিনু। বন্যার তেমন দুঃখ না থাকলেও মিনুর মধ্যে বাবার জন্য প্রতীক্ষার কষ্ট লক্ষ্য করা যায়। তাই দুজনের মধ্যে অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়