আলো
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
আলোর প্রতিসরণ : আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে তির্যকভাবে প্রবেশ করলে দুটি মাধ্যমের ঘনত্বের ভিন্নতার কারণে মাধ্যম দুটির বিভেদ তলে আলোকরশ্মি দিক পরিবর্তন করে। আলোকরশ্মির এই দিক পরিবর্তনের ঘটনাকে বলে আলোর প্রতিসরণ। তবে, আলো যদি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে লম্বভাবে প্রবেশ করে বা আপতিত হয় তাহলে গতিপথের কোনো দিক পরিবর্তন হয় না।
আপতন কোণ ও প্রতিসরণ কোণ : আলোকরশ্মি দুটি মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হওয়ার সময় আপতন বিন্দুতে অভিলম্বের সঙ্গে যে কোণ সৃষ্টি করে তাকে আপতন কোণ বলে। একের দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আলোকরশ্মি দুটি মাধ্যমের বিভেদতলে প্রতিসরিত হওয়ার সময় অভিলম্বের সঙ্গে যে কোণ সৃষ্টি করে তাকে প্রতিসরণ কোণ বলে। একে ৎ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
নির্গত কোণ : দুটি মাধ্যমের বিভেদতলে আলোর প্রতিসরণের পর আলোকরশ্মি যখন দ্বিতীয় মাধ্যম থেকে আবার প্রথম মাধ্যমে নির্গত হয় তখন অভিলম্বের সঙ্গে যে কোণ সৃষ্টি করে তাকে নির্গত কোণ বলে। একে ব দ্বারা প্রকাশ করা যায়।
সংকট কোণ (ক্রান্তি কোণ) : আলোকরশ্মি ঘন স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে হালকা স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করলে যেহেতু প্রতিসরিত রশ্মি আপতন বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়। তাই প্রতিসরণ কোণ আপতন কোণের চেয়ে বড় হয়। এভাবে আপতন কোণের মান ক্রমশ বাড়তে থাকলে প্রতিসরণ কোণও অনুরূপ বাড়তে থাকে। এভাবে কোনো দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের জন্য আপতন কোণের একটি নির্দিষ্ট মানের জন্য প্রতিসরণ কোণের মান ৯০ক্ক হয়। অর্থাৎ প্রতিসরিত রশ্মি বিভেদতল ঘেঁষে চলে যায়। আপতন কোণের এই নির্দিষ্ট মানকে সংকট কোণ বা ক্রান্তি কোণ বলা হয়।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন : আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে আপতিত হলে আপতন কোণ যদি সংকট কোণের চেয়ে বড় হয়, তাহলে আলোকরশ্মি আর প্রতিসরিত না হয়ে বিভেদতল থেকে একই মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। প্রতিফলনের নিয়মানুসারে এই ঘটনাকে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বলে।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের শর্ত : ১. আলোক রশ্মি কেবলমাত্র ঘন থেকে হালকা যাওয়ার সময় পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হয়। ২. ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ অবশ্যই এর মাধ্যম দুটির সংকট কোণের চেয়ে বড় হতে হবে।
অপটিক্যাল ফাইবার : অপটিক্যাল ফাইবার খুব সরু কাচতন্তু। এটি আলোকরশ্মি বহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। আলোকরশ্মি কাচতন্তুর মধ্যে প্রবেশ করে এর দেয়ালে পুনঃপুন অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটে অপরপ্রান্ত দিয়ে বের না হওয়া পর্যন্ত। এভাবে একই সঙ্গে অনেকগুলো সংকেত প্রেরণ করা যায়। সংকেত যত দূরেই যাক না কেন এর শক্তি হ্রাস পায় না।
সাধারণত চিকিৎসা ও টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হয়।
আলোকচিত্রগ্রাহী ক্যামেরা :আলোকচিত্রগ্রাহী ক্যামেরা সংক্ষেপে ক্যামেরা নামে পরিচিত। এই যন্ত্রে আলোকিত বস্তুর চিত্র লেন্সের সাহায্যে আলোক চিত্রগ্রাহী পেস্নটের উপর গ্রহণ করা হয়। এর বিভিন্ন অংশগুলো হলো : ১. ক্যামেরা বক্স ২. ক্যামেরা লেন্স, ৩. রন্ধ্র বা ডায়াফ্রাম ৪. সাটার ৫. পর্দা, ৬. আলোকচিত্রগ্রাহী পেস্নট ৭. সস্নাইড।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: আমরা কখন দেখতে পাই?
উত্তর: যখন চোখে আলো প্রবেশ করে তখন আমরা দেখতে পাই।
প্রশ্ন: আলোর প্রতিসরণের জন্য কী প্রয়োজন?
উত্তর: আলোর প্রতিসরণের জন্য দুটি স্বচ্ছ মাধ্যম প্রয়োজন।
প্রশ্ন: আলোর সরলরৈখিক পথকে কী বলে?
উত্তর : আলোর সরলরৈখিক পথকে আলোকরশ্মি বলে।
প্রশ্ন: স্বচ্ছ মাধ্যম কী?
উত্তর: যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলো বিনা বাধায় চলাচল করতে পারে তাকে স্বচ্ছ মাধ্যম বলে।
প্রশ্ন: আপতন কোণ প্রতিসরণ কোণ অপেক্ষা ছোট হয় কখন?
উত্তর: যখন আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রবেশ করে।
প্রশ্ন: আপতন কোণ প্রতিসরণ কোণ অপেক্ষা বড় হয় কখন?
উত্তর: যখন আলোকরশ্মি হালকা মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে।
প্রশ্ন: অপটিক্যাল ফাইবার কী?
উত্তর : অপটিক্যাল ফাইবার হলো খুব সরু ও নমনীয় কাচতন্তু।
প্রশ্ন: মানবদেহের ভেতরে দেখার জন্য কী ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: মানবদেহের ভেতরে দেখার জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন: অ্যাকুয়াস হিউমার কাকে বলে?
উত্তর: লেন্স ও কর্নিয়ার মধ্যবর্তী স্থান যে স্বচ্ছ জলীয় পদার্থে ভর্তি থাকে তাকে অ্যাকুয়াস হিউমার বলা হয়।
প্রশ্ন: ভিট্রিয়াস হিউমারের কাজ কী?
উত্তর:ভিট্রিয়াস হিউমারের কাজ হলো অক্ষিগোলকের আকার বজায় রাখা।
প্রশ্ন: অক্ষিগোলক কাকে বলে?
উত্তর :চোখের কোটরে অবস্থিত এর গোলাকার অংশকে অক্ষিগোলক বলে।
প্রশ্ন: রেটিনা কী?
উত্তর: অক্ষিগোলকের পেছনে অবস্থিত ঈষদচ্ছ গোলাপি আলোকগ্রাহী পর্দাকে রেটিনা বলে।
প্রশ্ন: হাইপোর রাসায়নিক নাম কী?
উত্তর:হাইপোর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম থায়োসালফেট।
প্রশ্ন: মণি বা তারারন্ধ্র কী?
উত্তর: মণি বা তারারন্ধ্র কর্নিয়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মাংসপেশি যুক্ত একটি গোলাকার ছিদ্রপথ।
প্রশ্ন: লম্বভাবে আলোকরশ্মি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাওয়ার সময় এর গতিপথের দিক পরিবর্তন হয় না কেন?
উত্তর: আপতিত রশ্মি কোনো মাধ্যমের উপর লম্বভাবে পড়লে আপতন কোণ ও প্রতিসরণ কোণ শূন্য হয়।
তাই কোনো আলোকরশ্মি যখন লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে অথবা ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমের উপর লম্বভাবে আপতিত হয় তখন ঐ রশ্মির কোনো দিক পরিবর্তন না করে সরাসরি দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে।
প্রশ্ন: আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘনত্বের মাধ্যমে আপতন কোণ ও প্রতিসরণ কোণের সম্পর্ক দেখাও।
উত্তর: আলোকরশ্মি হালকা থেকে ঘন মাধ্যমে : আপতন কোণ > প্রতিসরণ কোণ।
আলোকরশ্মি ঘন থেকে হালকা মাধ্যমে : আপতন কোণ < প্রতিসরণ কোণ।
আলোকরশ্মি অভিলম্ব বরাবর : আপতন কোণ = প্রতিসরণ কোণ = ০।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়