সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

নবম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
নবম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
নবম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

অধ্যায়-২

ঘ. জামানের ভ্রমণকৃত প্রথম দেশটির ভাস্কর্যের সাথে অর্থাৎ প্রাচীন মিশরীয় ভাস্কর্যের উপর ধর্মচেতনার প্রভাব রয়েছে। সভ্যতার ইতিহাসে মিশরীয়দের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্ময়কর। প্রাচীন মিশরের সভ্যতা বিকাশে ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূূমিকা ছিল। ধর্মীয়চেতনা মিশরীয়দের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। মিশরীয় স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় ধর্মের প্রভাব স্পষ্ট। উদ্দীপকে জামান পিরামিড দেখেছিল, যা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের নিদর্শন ছিল। প্রাচীন বিশ্বসভ্যতায় মিশরীয়দের মতো ভাস্কর্য শিল্পে অসাধারণ প্রতিভার ছাপ আর কেউ রাখতে সক্ষম হয়নি। ব্যাপকতা, বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় ভাবধারায় প্রভাবিত বিশাল আকারের পাথরের মূর্তিগুলো ভাস্কর্য শিল্পে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। প্রতিটি ভাস্কর্য মানুষ অথবা জীবজন্তুর; সবই ধর্মীয় ভাবধারা, আচার-অনুষ্ঠান, মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রতিটি শিল্পই ছিল আসলে ধর্মীয় শিল্পকলা। সর্বশ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য হচ্ছে গিজার অতুলনীয় স্ফিংক্স। স্ফিংক্স হচ্ছে এমন একটি মূর্তি, যার দেহটা সিংহের মতো, কিন্তু মুখ মানুষের। মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিডটি হচ্ছে ফারাও খুফুর পিরামিড। মন্দিরগুলোতে মিশরীয় ভাস্কর্য স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন প্রতিফলিত হয়েছে। আলোচনার প্রেক্ষিতে আমারও মত যে, প্রাচীন মিশরীয় ভাস্কর্যে ধর্মীয় চেতনার প্রভাব ছিল।

প্রশ্ন: শাহনাজ পারভিন একটি গ্রন্থে, একটি সভ্যতা সম্পর্কে আলোচনায় জানতে পারে মহাকবি হোমারের ইলিয়ড ও ওডিসি মহাকাব্যে বর্ণিত চমকপ্রদ কাহিনীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সত্যকে খুঁজে বের করার অদম্য ইচ্ছা উৎসাহিত করে তোলে প্রত্নতাত্ত্বিকবিদদের। আর তারা সন্ধান পায় মহাকাব্যের ট্রয় নগরীসহ একশত নগরীর ধ্বংসস্তূপের।

ক. মিশরীয় সভ্যতার উদ্ভাবিত কাগজের নাম কী?

খ. চিকিৎসাশাস্ত্রে মিশরীয় সভ্যতায় অবদান ব্যাখ্যা কর?

গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সভ্যতার ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত সভ্যতার যে স্পার্টানদের ধারণা পাওয়া যায় তাদের প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. মিশরীয় সভ্যতার উদ্ভাবিত কাগজের নাম প্যাপিরাস।

খ. মিশরীয় সভ্যতার লোকেরা চোখ, দাঁত, পেটের রোগ নির্ণয় করতে জানত। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করার বিদ্যাও তাদের জানা ছিল। তারা হাড় জোড়া লাগানো, হৃদপিন্ডের গতি ও নাড়ির স্পন্দন নির্ণয় করতে পারত। এভাবে সুপ্রাচীনকালে মিশরীয় সভ্যতা চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিল।

গ. উদ্দীপকে গ্রিক সভ্যতার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। নিচে এ সভ্যতার ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়কাল ব্যাখ্যা করা হলো। গ্রিক দেশটি আড্রিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর ও ঈজিয়ান সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। গ্রিক সভ্যতার সঙ্গে দু'টি সংস্কৃতির নাম জড়িত। একটি 'হেলেনিক' অপরটি 'হেলেনিস্টিক'। গ্রিক উপদ্বীপের প্রধান শহর এথেন্সকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে 'হেলেনিক সংস্কৃতি'। অপরদিকে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াকে কেন্দ্র করে গ্রিক ও অগ্রিক সংস্কৃতির মিশ্রণে জন্ম হয় নতুন এক সংস্কৃতির। ইতিহাসে এ সংস্কৃতি 'হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি' নামে পরিচিত। আধুনিক নগর সভ্যতার সূচনা করেছিল গ্রিকরা।

ঘ. উদ্দীপকের গল্প গ্রিক সভ্যতার ইঙ্গিতবাহী। এই সভ্যতায় নাগরিকশ্রেণি স্পার্টাদের ধারণা পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিসে যে অসংখ্য নগররাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল তার একটি ছিল স্পার্টা। স্পার্টানদের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সমরতন্ত্র দ্বারা তারা প্রভাবান্বিত ছিল। মানুষের মানবিক উন্নতির দিকে নজর না দিয়ে সামরিক শক্তি সঞ্চয়ের দিকে তাদের দৃষ্টি ছিল বেশি। খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দে দীর্ঘ যুদ্ধের পর ডোরীয় যোদ্ধারা স্পার্টা দখল করতে সক্ষম হয়েছিল। এই পরাজিত অধিবাসীদেরকে ভূমিদাস বা হেলট বলা হতো। এরা সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করত। ফলে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা আর বিদ্রোহ দমন ছাড়া স্পার্টার রাজাদের মাথায় আর কোনো চিন্তা ছিল না। স্পার্টানদের জীবন স্পার্টা রক্ষার জন্যই নিয়োজিত ছিল। স্পার্টার সমাজ তৈরি হয়েছিল যুদ্ধের প্রয়োজনকে ঘিরে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের জন্য নাগরিকদের প্রস্তুত করা ও যুদ্ধ পরিচালনা করা। সামরিক দিকে অত্যধিক মনোযোগ দেওয়ার কারণে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তারা ছিল অনগ্রসর। স্পার্টা ছাড়াও গ্রিকদের আরেকটি নগররাষ্ট্র ছিল এথেন্স।

প্রশ্ন: দশম শ্রেণির ছাত্র সাজিদ ঢাকা শহরে ধনী ও দরিদ্রদের আলাদা জীবন ও বসবাসের স্থানে বৈষম্য দেখে ব্যথিত হয়। তার উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতার কথা মনে পড়ে যায়। সে ভাবে, সর্বযুগেই কি এ উপমহাদেশে বৈষম্য ছিল?

ক. বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক কে?

খ. গ্রিকদের ধর্ম সম্পর্কে ধারণা দাও।

গ. সাজিদের মনে পড়ে যাওয়া সভ্যতার শিল্প সম্পর্কে বর্ণনা কর।

ঘ. উদ্দীপকের সাজিদের অভিজ্ঞতার সূত্রে উক্ত সভ্যতার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক হচ্ছেন থুকিডাইডেস।

খ. গ্রিকদের বারটি দেবদেবী ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির পূজা ছাড়াও তারা বীর যোদ্ধাদের পূজা করত। জিউস ছিল দেবতাদের রাজা। অ্যাপোলো ছিলেন সূর্য দেবতা, পোসিডন ছিলেন সাগরের দেবতা এবং এথেনা ছিলেন জ্ঞানের দেবী। বারোজনের মধ্যে এই চারজন ছিলেন শ্রেষ্ঠ। রাষ্ট্রের নির্দেশে পুরোহিতরা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতেন।

গ. সাজিদের উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা তথা সিন্ধু সভ্যতার কথা মনে পড়ে যায়। সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের শিল্প সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই মৃৎশিল্পের কথা বলতে হয়। তারা কুমারের চাকার ব্যবহার জানত এবং তার সাহায্যে সুন্দর মাটির পাত্র বানাতে পারত। পাত্রগুলোর গায়ে অনেক সময় সুন্দর সুন্দর নকশা আঁকা থাকত। তাঁতিরা বয়নশিল্পে পারদর্শী ছিলেন। ধাতুর সাহায্যে আসবাবপত্র, অস্ত্র ও অলংকার তৈরি করা হতো। তারা তামা ও টিনের মিশ্রণে ব্রোঞ্জ তৈরি করতে শিখেছিল। কারিগররা রূপা, তামা, ব্রোঞ্জ প্রভৃতির তৈজসপত্র তৈরি করত। তাছাড়া সোনা, রূপা, তামা ইলক্ট্রাম ও ব্রোঞ্জ ইত্যাদি ধাতুর অলংকার তৈরিতে তারা পারদর্শী ছিল। অলংকারের মধ্যে আংটি, বালা, নাকফুল, গলার হার, কানের দুল, বাজুবন্দ ইত্যাদি ছিল উলেস্নখযোগ্য। সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা লোহার ব্যবহার জানত না। ধাতু ছাড়া দামি পাথরের সাহায্যে অলংকার নির্মাণ শিল্পেরও বিকাশ ঘটে। হাতির দাঁতসহ অন্যান্য হস্তশিল্পেরও দক্ষ কারিগর ছিল।

ঘ. সাজিদের ঢাকা শহরে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দেখে উপমহাদেশের প্রাচীনতম সিন্ধু সভ্যতার কথা মনে পড়ে যায়। সিন্ধু সভ্যতার যুগে মানুষ সমাজবদ্ধ পরিবেশে বসবাস করত। সেখানে একক পরিবার পদ্ধতি চালু ছিল। সিন্ধু সভ্যতার যুগে সমাজে শ্রেণিবিভাগ ছিল। সব লোক সমান সুযোগ-সুবিধা পেত না। সমাজ ধনী ও দরিদ্র দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। কৃষকরা গ্রামে বসবাস করত। শহরে ধনী এবং শ্রমিকদের জন্য আলাদা-আলাদা বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া গেছে। উদ্দীপকে সাজিদের অভিজ্ঞতাও তদ্রম্নপ। সিন্ধু সভ্যতার জনগণের রাজনৈতিক জীবন ও শাসনপ্রণালি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। মহেঞ্জোদারো হরপ্পার নগর বিন্যাস প্রায় একই রকম ছিল। এগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখে নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় যে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উঁচু ভিত্তির উপর শহরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। শহরগুলোর এক পাশে উঁচু ভিত্তির উপর একটি করে নগরদুর্গ নির্মাণ করা হতো। চারদিক থাকত প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। নগরের শাসনকর্তারা নগর দুর্গে বসবাস করতেন। প্রশাসনিক বাড়িঘরও দুর্গের মধ্যে ছিল। নগরের ছিল প্রবেশদ্বার। দুর্গ বা বিরাট অট্টালিকা দেখে মনে হয় একই ধরনের কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে নগর দু'টিতে প্রচলিত ছিল। এই প্রশাসন জনগণের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করত। সিন্ধু সভ্যতার সমাজব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। পোশাক-পরিচ্ছদের জন্য তারা মূলত সুতা ও পশম ব্যবহার করত। মহিলারা খুবই শৌখিন ছিল। তাদের প্রিয় অলংকারের মধ্যে ছিল হার, আংটি, দুল, বিছা, বাজুবন্দ, চুড়ি, বালা, পায়ের মল ইত্যাদি। তারা নকশা করা দীর্ঘ পোশাক পরত। সমাজের পুরুষরাও অলংকার ব্যবহার করত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে