সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

যে কারণে মামলা ‘উইথড্রো’ করতে চায় মুরাদনগরের সেই নারী!

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  ২৯ জুন ২০২৫, ২০:৫১
যে কারণে মামলা ‘উইথড্রো’ করতে চায় মুরাদনগরের সেই নারী!
ছবি: যায়যায়দিন

কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। এলাকাবাসীর দাবি ভিকটিমের সঙ্গে ধর্ষক ফজর আলীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল।

সেদিন তাদেরকে হাতেনাতে ধরতে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে একটি চক্র।

ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে সুমনসহ তার সঙ্গীরা। এ ঘটনায় ধর্ষক ফজর আলীসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ধর্ষণ এবং পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিকেলে গ্রেফতারকৃতদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় মামলা তুলে নিতে চাচ্ছেন ভিকটিম।

অপরদিকে বিকেলে ভিকটিম পরিবারকে সান্তনা দিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন জামায়াত বিএনপি এবং এনসিপির নেতৃবৃন্দ। তাছাড়া মানবাধিকার এবং সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ওই পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে পরকীয়ার সূত্র ধরে এক সংখ্যালঘু নারীর ঘরে প্রবেশ করেন ফজর আলী নামের এক যুবক।

ওই নারীর স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী। দীর্ঘদিন যাবত ওই নারীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল ফজর আলীর। এরই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে ফজর আলী। এ সময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ছাত্রলীগের সভাপতি সহ একদল বখাটে চক্র তাদেরকে আটক করে মারধর করেন।

ধর্ষক ফজর আলীকে ব্যাপক মারধর করে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।

রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, এটা একটা পরকীয়ার সম্পর্ক। ফজর আলীর সাথে ওই নারীর দীর্ঘদিন যাবত পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। বৃহস্পতিবার ফজর আলী ওই বাড়ির দিকে রওনা করলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে।

এ সময় ফজর আলী ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করলে ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনসহ তার সঙ্গীরা তাদেরকে হাতেনাতে আটক করে।

প্রথমে ফজর আলীকে বেধড়ক পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এসময় ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা এ ঘটনায় জড়িত সুমনসহ সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, ফজর আলী একটা লম্পট প্রতারক। যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের নেতাদের সাথে মিশে এলাকায় অপকর্ম করে। আওয়ামী লীগের আমলে নানা অপকর্ম করেছে। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। তাকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা দরকার।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, ভিকটিম নারী এবং ফজর আলীর মধ্যে চার বছর যাবত পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। এটা ধর্ষণ বলা যাবে না। তারা পরস্পরের মতামতের ভিত্তিতেই এ কাজটি করেছে। তাদের পরকীয়া ধরার জন্য ছাত্রলীগ নেতা সুমন পেছনে লেগেছিল। দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে তাদেরকে হাতেনাতে ধরেছে।

ধর্ষণের ভিকটিম ওই নারী বলেন, ফজর আলীর সাথে আমার টাকা পয়সার লেনদেন রয়েছে। এনিয়ে আমাদের প্রায়ই যোগাযোগ হতো। সেদিন রাতে যাই হয়েছে আমি আর মামলা চালাতে চাই না। ফজর আলীর উপর ব্যাপক নির্যাতন হয়েছে। শুনেছি সে মৃত্যু শয্যায়। সে মারা গেলে আমি কার বিরুদ্ধে মামলা করব?

তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে ফজর আলী এবং তার ছোট ভাই শাহ পরানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ফজর আলীর সাথে যোগাযোগ থাকার কারণে শাহ পরান আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়েছিল। তিনি বলেন তাদের পরিবারের সাথে আমাদের পূর্বের সম্পর্ক রয়েছে। তাই মামলা করে নিজেদের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি করতে চাই না।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, আমরা মূল ধর্ষক ফজর আলী সহ ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছি। এ ঘটনায় যারাই জড়িত রয়েছে প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা টিম এবং তদন্ত টিম মাঠে কাজ করছে। এমন পৈশাচিক ঘটনার নেপথ্যে যারাই জড়িত রয়েছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে