বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

সপ্তম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
সপ্তম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা

১ম অধ্যায়

আজ যেগুলো বাস্তব, অতীতে সেগুলো ছিল মানুষের স্বপ্ন। আর আজ যা কল্পবিলাসী মনের স্বপ্ন, আগামীতে তা হয়ত বাস্তব হবে। বর্তমানে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে কথা বলা যায় এবং ভিডিওতে চিত্র দেখা যায়।

কিন্তু একসময় তা কল্পনা করাও কঠিন ছিল। তেমনিভাবে আজ যে কাজগুলো মানুষ করে সেই কাজগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট দিয়েও করানো গেলে মানুষ তখন অতীতের পেশা বদল করে নতুন নতুন পেশার দিকে ধাবিত হবে।

বর্তমানে আইওটি প্রযুক্তিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত যেকোনো যন্ত্র যেমন- টেলিভিশন, বাতি, পাখা ইত্যাদিকে যেভাবে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমনি এমন একদিন আসবে যখন এক গ্রহে বসে অন্য গ্রহের চলমান কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পৃথিবীর মানুষ ভিনগ্রহবাসীদের সাথে প্রযুক্তির সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করবে। তখন নতুন নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাবে মানুষের জীবনধারা এবং পেশা।

অভিজ্ঞতা-১

মূল বই: পৃষ্ঠা ৪২ ও ৪৩

উত্তর : প্রযুক্তি ও পেশা সম্পর্কে আমি আমার কল্পিত ধারণা/অনুমান লিখলাম :

ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তি (আইওটি) : থিংস অর্থ কোনো বস্তু। ইন্টারনেট অব থিংস মানে হলো ইন্টারনেটের সহায়তায় কোনো বস্তু বা ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি টেলিভিশনকে যেভাবে রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তেমনি ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তির মাধ্যমে রিমোটের মতো ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে নির্দিষ্ট বস্তু বা ডিভাইস যেমন- টিভি, ফ্রিজ, এসি, বাতি, পাখা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এধরনের প্রযুক্তিকে ইংরেজিতে ওহঃবৎহবঃ ড়ভ ঞযরহমং ঞবপযহড়ষড়মু বা আইওটি বলা হয়।

আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি (অৎঃরভরপরধষ ওহঃবষষরমবহপব ঞবপযহড়ষড়মু) : ইংরেজি আরটিফিসিয়াল অর্থ হচ্ছে কৃত্রিম। আর ইন্টেলিজেন্স অর্থ বুদ্ধি। এ হিসেবে আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি মানে হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোবট ও অন্য যন্ত্রদের কৃত্রিমভাবে বুদ্ধিমান করা হয়। মানুষ যেমন যেকোনো নতুন কাজ পরিবেশ থেকে পর্যবেক্ষণ করে নিজে নিজে শিখে কিংবা কেউ শিখিয়ে দিলে তা শিখে নিতে পারে; ঠিক তেমনিভাবে আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি রোবট বা ডিভাইসকে শিখিয়ে দেওয়া হয় একটি নির্দিষ্ট কাজ কীভাবে করতে হবে। ফলে উক্ত রোবট বা ডিভাইসটি মানুষের মতো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কৃত্রিম বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করতে পারে। একটি রোবট কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইনপুট সংযুক্ত করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

ইন্টারনেট অব থিংস এবং সাইবার সিকিউরিটি প্রযুক্তি : ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তিতে আমরা বাসায় থাকা যেকোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কাছে কিংবা দূরে যেকোনো জায়গায় বসে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এছাড়া এরূপ প্রযুক্তি ডিভাইসে বিদ্যমান বিভিন্ন তথ্যের আপডেট মেসেজ বা মেইলের মাধ্যমে প্রদান করে থাকে। যেমন- ফ্রিজের ভেতরে কী খাবার আছে, কী নেই; এসি চলছে কিনা, বাতি বন্ধ করতে হবে কিনা ইত্যাদি।

আবার সাইবার সিকিউরিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে সংঘটিত কোনো অপরাধ, চুরি কিংবা প্রতারণা প্রতিরোধ এবং অপরাধীকে ধরার জন্য কাজ করে থাকে।

ডিজিটাল মার্কেটিং : সাধারণ অর্থে মার্কেটিং হচ্ছে কোনো পণ্যের প্রচারণা করা এবং ওই পণ্য কিনতে গ্রাহককে আগ্রহী করে তোলা। এই অর্থে ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে অনলাইন মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা করা ও গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এরূপ প্রযুক্তিতে অনলাইন মাধ্যমে একটি পণ্য নিয়ে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালানো হয়। ফলে অনলাইনে থাকা নির্দিষ্ট মানুষের কাছে তার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছে যায়।

থ্রিডি মুভি সিস্টেম (৩উ গড়ারব ঝুংঃবস): যে সিস্টেমে আমাদের দুই চোখ মস্তিষ্কে একই বস্তুর দুটি ছবি পাঠায় এবং তা জীবন্ত করে দেখায় তাকে থ্রিডি মুভি সিস্টেম বা ত্রিমাত্রিক সিনেমা বলে। এক্ষেত্রে ছবি দুটি সামান্য ভিন্ন হয়ে থাকে। যখন মস্তিষ্কে একটির ওপর আরেকটি ছবি আপতিত হয় তখন থ্রিডি রূপলাভ করে। মূলত এই ধারণাকে কাজে লাগিয়েই থ্রিডি মুভি (৩উ গড়ারব) বা গেম (এধসব) বানানো হয়।

অভিজ্ঞতা-২

মূল বই : পৃষ্ঠা ৫১

গল্পে এমন বেশ কয়েকটি প্রযুক্তির কথা আমরা জেনেছি যে, প্রযুক্তিগুলো অদূর ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। পাশাপাশি গল্প থেকে প্রযুক্তিটি সম্পর্কে যেটুকু ধারণা পেয়েছি, তার আলোকে মানবকল্যাণে কোন কোন ক্ষেত্রে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে তা কল্পনা করি এবং দলে আলোচনা করে এখানে সাজিয়ে লিখি।

(জীবন ও জীবিকা বই : পৃষ্ঠা ৫১)

উত্তর : মানব কল্যাণকর গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি :

১. বিগ ডাটা প্রযুক্তি : বিগ ডাটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুদীর্ঘ অতীতের সংরক্ষিত তথ্যের বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য আগাম বার্তা ও তথ্য প্রদান করা যায়। এতে মানুষ আগাম ব্যবস্থা নিতে পারে। যেমন- নদী ভাঙনের গতিবিধির রেকর্ড দেখে নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেওয়া। বিগ ডাটা প্রযুক্তির সাহায্যে বিশাল পরিধির তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ, সন্ধান, স্থানান্তর, হালনাগাদকরণ এবং তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়। সরকারি কাজে, পণ্য উৎপাদনে ব্যাংকিং খাতে, শিক্ষা খাতে, স্বাস্থ্য খাতে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগ ডাটার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

২. অপমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি : এ প্রযুক্তির সাহায্যে বাস্তব জগতে যা কিছু ঘটছে সেটা অনুভবের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতের নতুন তথ্যের সন্ধান পাওয়া যাবে। এ প্রযুক্তি রাস্তায় বের হলে দিকনির্দেশনা দিবে এবং গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। ভয়েস কমান্ডের মতো সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে জটিল অস্ত্রোপচারের মতো জটিল কাজেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়।

৩. সাইবার সিকিউরিটি : এর মাধ্যমে সাইবার হ্যাকিং ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৪. ইন্টারনেটযুক্ত রোবট : এই রোবট বাসাবাড়ির কাজ করে। রান্না এবং ঘর গোছানো থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করতে পারে। কেননা এরূপ রোবটের গায়ে ইন্টারনেট যুক্ত থাকে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হয়।

৫. আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) যুক্ত ফ্রিজ : এটি ফ্রিজের ভেতরের খাবার শেষ হয়ে গেলে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে নোটিফিকেশন দেয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী যেকোনো জায়গা থেকে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৬. ডিজিটাল মার্কেটিং : কম খরচে অধিকসংখ্যক মানুষের নিকট বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়া যায়।

অনলাইন বা ডিজিটাল যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় ও বিক্রয় করা সম্ভব হয়।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে