সপ্তম অধ্যায়
গ. কক্সবাজারের উখিয়াতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় গ্রহণ হলো বলপূর্বক অভিগমন। রোহিঙ্গারা মুসলমান এবং আরাকান রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তা সত্ত্বেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের সেদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে তারা চাকরি, শিক্ষা, অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রে আরাকান রাজ্যের সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায় থেকে পিছিয়ে পড়ে।
মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বৌদ্ধ অধিবাসীদের নিপীড়ন, নির্যাতন চরমে ওঠায় রোহিঙ্গারা গত নব্বই দশক থেকে এদেশে অভিগমন হতে বাধ্য হয়। ফলে আরাকানে বাস করা রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে কক্সবাজারের উখিয়াতে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। গৃহযুদ্ধ,
সাম্প্রদায়িক বৈষম্য বা যুদ্ধের কারণে অভিগমন বলপূর্বক অভিগমনের অন্তর্ভুক্ত। তাই কক্সবাজারের উখিয়াতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় গ্রহণ হলো বলপূর্বক অভিগমন।
ঘ. রোহিঙ্গাদের অভিগমন ওই অঞ্চলের সার্বিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ। জনসংখ্যা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। ফলে রোহিঙ্গাদের আগমনে ওই অঞ্চলের
ভূমি ও কৃষিজমির ওপর চাপ পড়বে। এসব রোহিঙ্গারা বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে নানা পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলে ওই অঞ্চলে মজুরির হারে পরিবর্তন আসবে। বেকারত্ব বাড়বে। বাণিজ্যিক লেনদেনে ভারসাম্য নষ্ট হবে। অর্থনৈতিক উৎপাদন কমে উন্নয়ন ধারা বিঘ্নিত হবে। সামাজিক রীতিনীতি, আচার-আচরণের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এলাকায় বিভিন্ন রোগের বিস্তার ঘটবে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ওই অঞ্চলের বনভূমি ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।
চুরি, রাহাজানি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। এভাবে সেখানে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির জোগান দিতে গিয়ে বাংলাদেশে সরকারকে হিমশিম খেতে হবে। সুতরাং রোহিঙ্গাদের অভিগমন ওই অঞ্চলের সার্বিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
২. জারিন রাজশাহীতে বাবা-মায়ের সাথে বসবাস করে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে জারিন তার পছন্দমতো চাকরি পায় এবং বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করে।
ক. সাধারণ জন্মহার কাকে বলে?
খ. জনসংখ্যা পিরামিড বলতে কী বোঝায়?
গ. জারিন কোন প্রকৃতির অভিবাসন করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জারিনের পরিবারের অভিবাসনের ফলে ঢাকা ও রাজশাহীর জনবৈশিষ্ট্য গত ফলাফলে কী পরিবর্তন ঘটবে? বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. কোন নির্দিষ্ট এক বছরের প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মোট সংখ্যাকে সাধারণ জন্মহার বলে।
খ. উন্নয়নশীল দেশসমূহের জনসংখ্যা কাঠামো সাধারণত পিরামিড সদৃশ্য হয় যাকে জনসংখ্যা পিরামিড বলে। নারী-পুরুষের বয়সভিত্তিক বিন্যাস গ্রাফে প্রকাশ করলে ত্রিভূজ বা পিরামিড সদৃশ নকশা তৈরি হয়। তাকে জনসংখ্যা কাঠামো বলে। উলম্ব অক্ষে বয়স এবং অনুভূমিক অক্ষে বামে পুরুষ ও ডানে নারীর সংখ্যা বা শতকরা হার স্তম্ভ স্থাপন করা হয়।
গ্রাফের এ বিন্যাস উন্নত, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। তবে সবক্ষেত্রেই সাধারণভাবে জনসংখ্যা কাঠামোর এরূপ উপস্থাপনকে জনসংখ্যা পিরামিড বলে।
গ. জারিনের অভিবাসন অবাধ প্রকৃতির। নিজের ইচ্ছায় বাসস্থান ত্যাগ করে আপন পছন্দমতো স্থানে বসবাস করাকে অবাধ অভিবাসন বলে।
উদ্দীপকের জারিন রাজশাহী থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে পছন্দমতো চাকরি পেলে বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করে। অর্থাৎ সে স্বেচ্ছায় রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় অভিবাসী হয়।
সুতরাং তার এই রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ অভিবাসন নিঃসন্দেহে অবাধ প্রকৃতির অভিবাসন।
ঘ. জারিনের পরিবারের অভিবাসনের ফরে ঢাকা ও রাজশাহীর জনবৈশিষ্ট্য গত ফলাফলে বেশ পরিবর্তন ঘটবে। অভিবাসনের ফলে উৎসস্থলে জনসংখ্যা কমে এবং গন্তব্য স্থলের মোট জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়। সুতরাং জারিনের পরিবারের অভিবাসনে রাজশাহীর জনসংখ্যা
কমবে এবং ঢাকার জনসংখ্যা বাড়বে। এর ফলে ঢাকা ও রাজশাহীর জনসংখ্যায় নারী-পুরুষ অনুপাত ও নির্ভরশীলতার অনুপাত ব্যাপক পরিবর্তন হবে। আবার জারিন নিজে উচ্চশিক্ষিত বিধায়, সে ঢাকা চলে গেলে ঢাকার জনকাঠামো তার সেবায় উপকৃত হবে এবং সেখানকার জনবৈশিষ্ট্য পরিশীলিত হবে। অন্যদিকে রাজশাহীর জনকাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের উৎকর্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৩. জনাব মিজান কানাডাতে বসবাস করছেন ত্রিশ বছর। তার আত্মীয় পরিজনের অনেকেই সেখানে বসবাস করে। তারা বিত্তশালী হলেও তাদের সন্তানেরা দেশের কৃষ্টি ও শিষ্টাচার সম্পর্কে উদাসীন। বিষয়টি মিজান সাহেবকে চিন্তিত করে তুলছে।
ক. কাম্য জনসংখ্যা (ঙঢ়ঃরসঁস চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ) কী?
খ. মাটির উর্বরতা হ্রাসে অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব উলেস্নখ কর।
গ. জনাব মিজানের পরিবারের মতো এ ধরনের অভিবাসনের সামাজিক ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত অভিবাসনের জনবৈশিষ্ট্যগত ফলাফল বিশ্লেষণ কর।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়