উত্তর:
ক. কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির অনুপাতে ভারসাম্য থাকলেই তাকে কাম্য জনসংখ্যা
বলে।
খ. জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে সরাসরি প্রভাব পড়ে ভূমির উপর। একটি দেশের ভূমি সীমিত হওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। বেশি খাদ্য উৎপাদনের জন্য ভূমি অধিক ব্যবহার হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তথা অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে অধিক ফসল চাষের প্রয়োজন হয়।
এতে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। ফলে মাটিতে যে সকল অণুজীব, ক্ষুদ্রজীব বাস করে তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এভাবে মাটির জৈব উপাদান হ্রাস পেয়ে মাটির উর্বরতা হ্রাস পেতেই থাকে।
গ. জনাব মিজানের পরিবারের মতো অবাধ অভিবাসনের সামাজিক ফলাফল ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী হয়ে থাকে। নিজের ইচ্ছায় বাসস্থান ত্যাগ করে আপন পছন্দমতো স্থানে বসবাস করাকে অবাধ অভিবাসন বলে।
জনাব মিজান কানাডাতে বসবাস করছেন ত্রিশ বছর। তার আত্মীয় পরিজনের অনেকে সেখানে বসবাস করেন। সুতরাং তার অভিবাসন হচ্ছে অবাধ অভিবাসন। অভিবাসনের ফলে সামাজিক, আচার আচরণের আদান-প্রদান হয়। সামাজিক অনেক রীতিনীতি একদেশ থেকে অন্যদেশে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগের বিস্তারও ঘটে থাকে। বিভিন্ন শ্রেণির জনগণের মধ্যে ভাব, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আদান- প্রদান হয়। ফলে জনগণের গুণগত পরিবর্তন সম্ভব হবে। গ্রাম ও শহর এলাকার মধ্যে পার্থক্য কমে আসে। তবে অধিকভাবে অন্যকালচার রপ্ত করার কারণে নিজের দেশের সামাজিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন হয়। উদ্দীপকেযেমন দেখা যায় মিজান সাহেবের সন্তানরা কানাডায় অভিবাসিত হওয়ার কারণে নিজ দেশের কৃষ্টি ও শিষ্টাচার সম্পর্কে উদাসীন। এভাবে আবাধ অভিবাসনে সামাজিক পরিবর্তন সূচিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত অবাধ অভিবাসনের জনবৈশিষ্ট্যগত ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অভিবাসনের ফলে উৎস স্থলে জনসংখ্যা কমে এবং গন্তব্যস্থলের মোট জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়। শিক্ষিত, যুবক ও পেশাজীবী অভিবাসন করলে গন্তব্যস্থলে জনসংখ্যার কাঠামোগত পরিবর্তন হয়। এর ফলে উভয় স্থানের জনসংখ্যার নারী-পুরুষ অনুপাত ও নির্ভরশীলতার অনুপাত ব্যাপক পরিবর্তিত হয়। অনেক সময় শিক্ষিত ও মেধাবী শ্রেণির লোক অভিগমন করে আর দেশে ফিরে আসে না এতে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অনেক দেশে জনসংখ্যা কম থাকায় তারা অন্যদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়ে জনসংখ্যার ভারসাম্য আনে, এতে তাদের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। যেমন- অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত। উন্নয়নশীল দেশসমূহ যেমন : বাংলাদেশ শ্রম বাজারে জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
৪. ঢাকা থেকে রংপুরগামী বাসের সাথে একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন মারা যায়। প্রতি বছরই এরকম অসংখ্য কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে যার হিসাব একটি নির্দিষ্ট বছরের শতকরা বা হাজারে পাওয়া যায়।
ক. অকাল মৃতু্য কী?
খ. মৃতু্যহার জানা প্রয়োজন কেন?
গ. উদ্দীপক অনুসারে জনসংখ্যার কী পরিবর্তন ঘটে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনাটি কী কী বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে বলে তুমি মনে কর।
উত্তর :
ক. পরিণত বয়সের পূর্বেই মারা যাওয়াকে অকাল বা অস্বাভাবিক মৃতু্য বলে।
খ. মানুষ মরণশীল। মরণশীলতা জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকেই শুধু প্রভাবিত করে না, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে
থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিমাপ করা, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য মৃতু্য হার জানা বিশেষ প্রয়োজন।
গ. উদ্দীপকে ঢাকা থেকে রংপুরগামী বাসের সাথে একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন মারা যায়। এ ঘটনার মাধ্যমে জনসংখ্যা পরিবর্তন প্রক্রিয়ার নিয়ামক মৃতু্যহার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। স্থূল মৃতু্যহার মরণশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। নির্দিষ্ট কোনো বছরে মৃতু্যবরণকারীদের মোট সংখ্যাকে ওই বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ কওে স্থূল মৃতু্যহার নির্ণয় করা হয়।
স্থূল মৃতু্যহার : (কোনো বছরে মৃতু্য বরণকারী মোট সংখ্যা/ বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা)* ১০০০
কোনো স্থান বা দেশের মৃতের সংখ্যা এবং মোট জনসংখ্যার তথ্য পাওয়া গেলে স্থূল মৃতু্যহার নির্ণয় করা যায়। তবে মৃতু্যহার নির্ণয়ের জন্য বয়স
নির্দিষ্ট মৃতু্যহার গুরুত্বপূর্ণ। যা বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন সংখ্যার মৃতু্যহার নির্দেশ করে। এই হার থেকে বার্ধক্য ও অকালমৃতু্য প্রভৃতি বোঝা যায়।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনা মরণশীলতা বা মৃতু্যহার নির্দেশ করে। মৃতু্যহারের নিম্নোক্ত বিষয়গুলো :
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ : ঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ অস্বাভাবিক মৃতু্যর অন্যতম কারণ। যেমন : আমাদের দেশে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লাখ লোক মারা যায়।
২. যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ : যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে মৃতু্যহার বৃদ্ধি পায়। কুয়েত, আফগানিস্তান, ইরাক যুদ্ধে মৃতু্যহার অনেক বেশি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ লোক শহিদ হয়।
৩. রোগ ও দুর্ঘটনা : সংক্রামক, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, ক্যান্সার, রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত রোগ, আঘাত বা দুর্ঘটনা প্রভৃতি কারণে মৃতু্যহার বৃদ্ধি পায়। মানুষের স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক দুইভাবেই মৃতু্য হতে পারে। আবার
অঞ্চলভেদে মরণশীলতার পার্থক্য রয়েছে। অনুন্নত দেশগুলোতে মৃতু্যহার অনেক বেশি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মৃতু্যহার কিছুটা কমে এসেছে। আবার নারী-পুরুষের মৃতু্যহারেও পার্থক্য দেখা যায়।
৫. ডিভি লটারি পেয়ে ফরহাদ বাংলাদেশ থেকে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। সেখানে সে স্থায়ীভাবে বাস করছে।
ক. উদ্বাস্তু কী?
খ. কোনো দেশের জনসংখ্যা সংকোচন কীভাবে কার্যকর করা যায়?
গ. ফরহাদের অভিবাসন কোন ধরনের অভিবাসন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ফরহাদের এই অভিবাসন কী ফলাফল বয়ে আনবে?
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়