প্রশ্ন: যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে মোট ভূমির শতকরা ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। 'অ' দেশটিতে এর পরিমাণ মাত্র ১৭%। তথাপি বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ক. বনজসম্পদ কাকে বলে?
খ. পরিবেশ রক্ষায় বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. মানচিত্র এঁকে 'অ' দেশটির বনাঞ্চলের অবস্থান চি?িহ্নত কর।
ঘ. অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্দীপকের 'অ' দেশটির বনজ সম্পদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. বনভূমি থেকে যে সম্পদ পাওয়া যায় তাকে বনজ সম্পদ বলে।
খ. পরিবেশ রক্ষায় বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ-
১. জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মাটি বা ভূমিক্ষয় রোধ, ভূমিধস রোধ, বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি, আবহাওয়া আর্দ্র রাখা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
২. উপকূলীয় অঞ্চলের বনভূমি সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
গ. 'অ' দেশটি বাংলাদেশকে নির্দেশ করে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে দেশটির বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৭%, যা বাংলাদেশের বনাঞ্চলের শতকরা পরিমাণ। নিচে বাংলাদেশের একটি মানচিত্রে বনাঞ্চলের অবস্থান চিহ্নিত করা হলো :
ঘ. 'অ' দেশ তথা বাংলাদেশের বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যথা :
১. পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ : মানুষ তার দৈনন্দিন প্রয়োজনে কাঠ, বাঁশ, বেত, মধু, মোম প্রভৃতি বন থেকে সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়াও জীবজন্তুর চামড়া ও ভেষজ দ্রব্য বনভূমি থেকে সংগ্রহ করা হয়।
২. নির্মাণের উপকরণ : মানুষ বনভূমি থেকে তার ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য কাঠ, বাঁশ, বেত ইত্যাদি যাবতীয় উপকরণ সংগ্রহ করে।
৩. শিল্পের উন্নতি : কাগজ, রেয়ন, দিয়াশলাই, ফাইবার বোর্ড, খেলনার সরঞ্জাম প্রভৃতির উৎপাদন কাজে বনজ সম্পদ ব্যবহৃত হয়ে শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। কর্ণফুলী কাগজকল, খুলনার নিউজপ্রিন্ট কারখানা বনজ সম্পদের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
৪. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : বনভূমি থেকে কাঠ সংগ্রহ করে তা দিয়ে রেললাইনের স্স্নিপার, মোটরগাড়ি, নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ ইত্যাদির কাঠামো, বৈদু্যতিক খুঁটি, রাস্তার পুল প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়।
৫. সরকারের আয়ের উৎস : বনজ সম্পদ সরকারের আয়ের একটি উৎস। যেমন : বনজ সম্পদ বিক্রি ও এর উপর কর ধার্য করে সরকার রাজস্ব আয় বাড়িয়ে থাকে।
৬. কৃষি উন্নয়ন : বনভূমি দেশের আবহাওয়াকে আর্দ্র রাখে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে যা কৃষি উন্নয়নে সহায়ক।
৭. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : বনের বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া, দাঁত, শিং, পশম এবং কিছু জীবন্ত বন্য জন্তু রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
সুতরাং বনভূমির পরিমাণ কম হলেও বাংলাদেশ বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ সম্পদ সংরক্ষণে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: জনাব আসিফ ঢাকার একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি। তিনি তার ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানায় গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করেছেন। সরকার সার ও বিদু্যৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে। ফলে গ্যাসের ওপর চাপ পড়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কয়লার মোট মজুত প্রায় ২,৭০০ মিলিয়ন টন। এখন তিনি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহারের কথা ভাবছেন।
ক. বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলনযোগ্য ও সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ কত ট্রিলিয়ন ঘনফুট?
খ. গ্যাস ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহ ব্যাখ্যা কর।
গ. জনাব আসিফ তার কারখানায় কেন গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করছেন?
ঘ. বাংলাদেশের কয়লার মজুতের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আসিফের সিদ্ধান্তের পক্ষে তোমার যুক্তি উপস্থাপন কর।
উত্তর:
ক. বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলনযোগ্য সম্ভাব্য ও প্রমাণিত মজুতের পরিমাণ ২৭.০৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
খ. প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ। এ সম্পদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে এ সম্পদের গুরুত্ব অন্যান্য খনিজ সম্পদের চেয়ে বেশি। শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। প্রাকৃতিক গ্যাস সারশিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কীটনাশক, ওষুধ, রাবার, পস্নাস্টিক, কৃত্রিম তন্তু প্রভৃতি তৈরির জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
গ. জনাব আসিফ তার কারখানায় গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করেছেন। কেননা- গ্যাসভিত্তিক উৎপাদনে খরচ কম। এছাড়া গ্যাসের ব্যবহার নানাবিধ। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। তদুপরি গ্যাস সিলিন্ডারে মজুত করে ব্যবহার করা যায়। যন্ত্রচালিত সামগ্রীতে গ্যাসের ব্যবহার সুবিধাজনক। সুতরাং জনাব আসিফ উৎপাদন খরচ বিবেচনা করে বহুমুখী ব্যবহারের লক্ষে তার কারখানায় গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করেছেন।
ঘ. দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আবিষ্কৃত মোট কয়লার মজুত প্রায় ২,৭০০ মিলিয়ন টন। এদেশের সবক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহার করার ফলে গ্যাসের চাপ বাড়ছে। তাই জনাব আসিফ সিদ্ধান্ত নিলেন দেশে প্রচুর পরিমাণ কয়লা মজুত থাকায় তিনি গ্যাসের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহার করবেন। আসিফের এ সিদ্ধান্ত সঠিক কারণ গ্যাস ও কয়লার ব্যবহারিক গুরুত্ব একই। এছাড়া দেশে প্রচুর পরিমাণ কয়লা মজুত রয়েছে এবং বর্তমানে উন্নতমানের কয়লার সন্ধানও পাওয়া গেছে। শক্তির অন্যতম উৎস কয়লা। কয়লা থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন করা যায়। শিল্পক্ষেত্রে শিল্পের কাঁচামাল, উপজাত ও শক্তি হিসেবে কয়লা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যায়। কয়লা খনির নিকট বিভিন্ন প্রকার শিল্পের সন্নিবেশ ঘটানোও সম্ভব। আবার জ্বালানি হিসেবেও তা ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন : কয়লা দ্বারা ইট পোড়ানো হয়। সুতরাং কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহারিক ক্ষেত্র প্রায় একই। তাই ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে জনাব আসিফ কয়লা ব্যবহার করলে গ্যাসের ওপর চাপ হ্রাস পাবে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়