পবিত্র কুরআনে আলস্নাহ বলেন, 'পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন' (সূরা আলাক : ১)। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সর্বপ্রথম নাযিলকৃত শব্দটিই ছিল পড়। পড়ার মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জন হয়, শিক্ষা হয়। পড়তে হলে, শিখতে হলে অবশ্যই শিক্ষকের দরকার। মানব জাতিকে শিক্ষার জন্য, হেদায়েতের জন্য আলস্নাহ তায়ালা রিসালাতের দায়িত্ব দিয়েছিলেন নবী-রাসূলগণকে। নবী-রাসূলগণ যুগে যুগে মানব জাতিকে ইসলামের শিক্ষা দিয়েছেন। যদি শুধু বই পড়েই শিক্ষা হত, তবে তো আলস্নাহ আলস্নাহ কিতাব নাযিল করেই দায়িত্ব শেষ করতেন। এই অসংখ্য নবী-রাসুলকে শিক্ষক হিসেবে দুনিয়ায় পাঠাতেন না। অন্যান্য ধর্মেও বহু সাধক, মহাপুরুষ যুগে যুগে মানুষকে কল্যাণের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আজ থেকে কয়েকশ বছর পূর্বে সাধক লালন সাইজি বলে গেছেন- 'ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার সর্বসাধন সিদ্ধ হয় তার।'
চরণ দুটিতে লালন বলেছেন বইপুস্তক পড়ে প্রাপ্ত জ্ঞানের চাইতে গুরু বা শিক্ষকের সংস্পর্শে থেকে অর্জিত জ্ঞানই আসল ও কার্যকরী জ্ঞান। যেকোনো "সাধন" বা প্রচেষ্টায় "সিদ্ধ" বা সফল হতে হলে গুরুর সাক্ষাতে বা সংস্পর্শে তা করতে হয়। বইপুস্তকে যে জ্ঞান থাকে তা কেবলই অক্ষরবদ্ধ শুষ্ক জ্ঞানমাত্র। গুরুর সংস্পর্শ ছাড়া কেবলই অক্ষরবদ্ধ জ্ঞান শিক্ষার্থীর কাছে রসকষহীন জ্ঞাতব্য বিষয় হিসেবে গৃহীত হয় বটে কিন্তু সেই জ্ঞানের কোনো আনন্দ বা প্রাণবন্ততা থাকে না। শিক্ষক বা গুরুর বচন-ভাষণ ও চেহারা দর্শন শিক্ষার্থীর জন্য আবশ্যক। ধর্মীয় বইপুস্তক বা কিতাবাদী পড়ে কেউ কোনোদিন সত্যিকারের ধার্মিক বা আর্দশবান হতে পারে না। উপযুক্ত গুরু বা পথপ্রদর্শকের সংস্পশে থাকলেই কেবল সত্যিকারের ধার্মিক বা আদর্শবান হওয়া সম্ভব।আমাদের চারপাশে অনেক প্রাণী রয়েছে। যেমন- একটি গরুর বাচ্চা জন্মগতভাবেই সেটি গরু, একটি বাঘের বাচ্চা জন্মগতভাবেই সেটি বাঘ, তেমনি একটি কুকুরের বাচ্চা জন্মগতভাবেই কুকুর। কিন্তু মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও মানুষের বেলায় একটি ভিন্ন কথা প্রচলিত রয়েছে। মুরুব্বীরা ছোট্ট শিশু কিংবা শিক্ষার্থীদের আদর করে বলেন মানুষের মত মানুষ হও। তারমানে বিষয়টা কি দাঁড়ায়? মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে থেকে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার পরেও পুনরায় তাকে আবার মানুষ হতে হয়? হ্যাঁ, আর এ কারণেই মানুষকে বলা হয় দ্বিজ। দ্বিজ মানে দুইবার জন্ম।মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়ে আসে মানব দেহ। পরবর্তীতে দেহ এবং আত্মা এ দুটির সংমিশ্রণেই পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে। আত্মার বিকশিত হওয়ার জন্যই দরকার শিক্ষার আর শিক্ষাগুরু ছাড়া শিক্ষা অসম্ভব। এ কারণেই শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানেও সুনাম বদনাম যাই থাকুক, শিক্ষকতাকেই মহান পেশা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। বর্তমানে পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের হাতে মহান শিক্ষাগুরু লাঞ্ছিত হচ্ছেন, যেটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন শিক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে, সে যে বিদ্যাটুকু অর্জন করতেছে, এটা শুধুই তার নিজের। অন্যান্য সম্পদ যেমন কেউ নিতে পারে, বা শেষ হয়ে যেতে পারে,কিন্তু বিদ্যা কেউ নিতে পারে না বা কখনো শেষ হয়ে যায় না। বিদ্যা যিনি অর্জন করেন, এটা কেবল তারই থেকে যায়। অর্জিত বিদ্যা তাকে সারা জীবন এমনকি মৃত্যুর পরেও আলোকিত করে। একজন শিক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে, এই অমূল্য সম্পদ বিদ্যা, আমি যে শিক্ষাগুরুর কাছ থেকে অর্জন করলাম, আমার হাতে সেই মহান শিক্ষাগুরু লাঞ্চিত হওয়া কতটা জঘন্য, কতটা গর্জিত কাজ। যদিও ব্যাতিক্রম দু'একটা ঘটনা কখনো উদাহরণ হতে পারে না, তবুও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, ব্যতিক্রমটা যেন আবার রেওয়াজ না হয়ে যায়। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে 'শিক্ষক-শিক্ষা, শিক্ষা-সভ্যতা ' সভ্যতার বিকাশ, জাতির উন্নয়নে শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।
মশিউর রহমান
ইংরেজি শিক্ষক
আছমত আলী খান ইনস্টিটিউশন
বরিশাল