শিক্ষার লক্ষ্য ফল চাওয়া নয় ফলতে চাওয়া এ কথাটি যেন আমরা ভুলেই গেছি। কিভাবে পরীক্ষায় এ পস্নাস পাওয়া যায়, কিভাবে সহজে পাশ করা যায়, পাস করে কিভাবে একটা ভালো চাকরি পাওয়া যায়, এগুলোই আজ শিক্ষার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, অর্থাৎ ফল চাওয়াটাই এখন শিক্ষার মূল লক্ষ্য। এ কারণে ভালো ফলাফল কিভাবে করা যায় সেটাই এখন মুখ্য বিষয়। এটা করার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তুমুল প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ছে। কে কত তার সন্তানের পিছনে খরচ করতে পারে, কত প্রাইভেট টিউশন দেওয়া যেতে পারে, কিভাবে সহজে পাশ করা যায় এই রাস্তা খুঁজতে সবাই ব্যস্ত। এর ফলে শিক্ষার মান, শিক্ষা বাণিজ্য, সার্টিফিকেট বাণিজ্য এবং সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলার বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে। ভালো ফলাফলকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে, খুবই সামান্য একটা অংশ কাংঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সহজ রাস্তা খুঁজে পাস করার কারণে, মেধা সংকুচিত হয়ে পড়ে, ফলাফল স্বরূপ পাশের হার বাড়ছে, মেধাবীদের হার বাড়েনি। ধরুন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে একজন তৃতীয় শ্রেণীর চাকরি করছেন আরেকজন একই ডিগ্রি নিয়ে বিসিএস পাস করে প্রথম শ্রেণীর পদে চাকরি করছেন, এক্ষেত্রে দুজনার সার্টিফিকেট এক হলেও জ্ঞানের পরিধি এক নয়। সুতরাং এটা পরিষ্কার, শুধুমাত্র একটা সার্টিফিকেট একজন মানুষকে বড় করতে পারে না। বড় হতে হলে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, জ্ঞান অর্জনের রাস্তা অতটা সহজ নয়, জ্ঞান অর্জনের রাস্তা কন্টাকীর্ণ। আমরা অভিভাবকরাও সন্তানদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বড় আমলা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এতে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সৃষ্টিশীলতার ওপর কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়ে। আবার কখনো কখনো অভিভাবকের ইচ্ছা পূরণে শিক্ষার্থীরা মরিয়া হয়ে ওঠে। আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের উন্নতির জন্য সবার আগে একজন ভালো মানুষ দরকার, একজন সুনাগরিক দরকার। শুধুমাত্র ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে, আলবার্ট আইনস্টাইন, নিউটনের মতো গুনীজন তৈরি হতো না। আপনার সন্তান ভবিষ্যতে কি হবে সেটা তার নিজের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিন, আপনি শুধু তার সামনে ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরুন। সন্তান একটি পরীক্ষায় খারাপ করলে, তার দ্বারা কিছু হবে না, সব আশা ভরসা শেষ ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তাকে ভর্ৎসনা করা যাবে না। কারণ একজন শিক্ষার্থী ভুল করেই শিখবে, ভুল থেকেই সে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবে। টমাস আলভা এডিশন প্রতিটা ভুল থেকেই নতুন কিছু আবিষ্কার করতেন। বর্তমানে জাতির উন্নতির পথে অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। এর মূল কারণ আমাদের ভীতর নীতি নৈতিকতার চরম সংকট। বড় বড় শিক্ষিত লোকগুলোর দুর্নীতি যখন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়, তখন আমরা লজ্জিত হই, যে জাতির জন্য তিনি কতটা ক্ষতিকর। সুতরাং সার্টিফিকেট অর্জন জরুরী নয়, আগে ভালো মানুষ হওয়া জরুরী। আর যিনি ভাল মানুষ হবেন, তিনি জ্ঞান অর্জনকে প্রাধান্য দিবেন সার্টিফিকেট অর্জনকে নয়। সার্টিফিকেট পুড়ে যায় কিংবা নষ্ট হয়ে যায়, আবার সার্কিটিফিকেট কখনো কখনো কাজে নাও লাগতে পারে কিন্তু অর্জিত জ্ঞান মৃতু্য পর্যন্ত কাজে লাগবে। কারন জ্ঞান কখনো নষ্ট হয় না বরং ব্যাক্তিকে আলোকিত করে, সমাজকে আলোকিত করে, পুরো জাতিকে আলোকিত করে।