প্রযুক্তির দুনিয়ায় বর্তমানে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। শুধু চর্চা নয় বেড়েছে ব্যবহারও। মানব সভ্যতার উন্নয়নে এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে চলছে গবেষণা। আর সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই প্রবেশ ঘটেছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। সেটা ভালো হবে কি মন্দ হবে তা নিয়ে চলছে অনেক বিতর্ক। তবুও এটা নির্দিধায় বলা যায় যে, তথ্য- প্রযুক্তি নির্ভর একটি বিশ্ব আমাদের তৈরি হবে। আর সেই বিশ্বে পদচারণা করবে আজকের দিনের নতুন প্রজন্মরা; আপনার আমার সন্তানরা। সেই বিশ্বে আমাদের সন্তানরা কেমন করবে তা অনেকখানিই নির্ভর করবে তার "ডিজিটাল প্রযুক্তি জ্ঞানের উপর"। তাই বর্তমান বিশ্বের অভিভাবকরা চাচ্ছেন তাদের সন্তানরা যেন ছোট থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর বেসিক কিছু জ্ঞান অর্জন করুক। আজকের দিনে মানুষ বেশিরভাগ সময় মোবাইল এবং কম্পিউটার ব্যবহার করে,কম্পিউটার ও মোবাইলের মধ্যে অ্যাপিস্নকেশন এবং ওয়েবসাইট চালিয়ে থাকে। কিন্তু কিভাবে এই অ্যাপিস্নকেশন এবং ওয়েবসাইটগুলি তৈরি হয় তা অনেকেরই অজানা। তাই আপনাদের জানিয়ে রাখি এগুলি সমস্ত কিছু কোডিং এর সাহায্যে তৈরি করা হয়ে থাকে। কিন্তু কোডিং সম্পর্কে অনেক ব্যক্তিরই ধারণা খুবই কম।
কম্পিউটার কোডিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে কম্পিউটারের প্রোগ্রামগুলি ডিজাইন করা হয়। কম্পিউটারে যে সকল অপারেশন গুলি করা হয়, সেগুলি কম্পিউটার কোডিং এর মাধ্যমে বুঝতে পারে। এর কারণ কম্পিউটার শুধুমাত্র পড়ফরহম ভাষা বোঝে। আমরা যদি কম্পিউটারকে দিয়ে কোন কাজ করাতে চাই, তাহলে কোডিং এর মাধ্যমে কম্পিউটারকে সেটি জানাতে হবে। আজকের দিনে আধুনিক কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সফ্টওয়্যার, গেমস, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, মেশিন লার্নিং, আইওটি, ওয়েবসাইট, অ্যাপস ইত্যাদি সব কিছুর মধ্যেই কোডিং ব্যবহার করা হয়। কোডিং এর সাহায্যে নির্দিষ্ট একটি প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। এই প্রোগ্রামগুলির সাহায্যে কম্পিউটার নির্দিষ্ট কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে। কোডিং কেন শিখতে হবে তার অনেক কারণ আছে, যার কয়েকটি নিম্নে দেওয়া হলো-
১। কোডিং সমস্যা-সমাধানে দক্ষ করে তুলে
২। কোডিং চিন্তা করতে শেখায়
৩। একাডেমিক কর্মক্ষমতা উন্নত করে
৪। কোডিং সৃজনশীলতা বাড়ায়
৫। ভাল কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়ার সম্ভাবনা
৬। সফটওয়্যার শিল্পে চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি
৭। কোডিং শিশুদের গণিত শেখা আনন্দদায়ক করে তুলে
৮। কোডিং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরী করে
৯। কোডিং শিখলে পরবর্তী সময়ে কর্মজীবনে দক্ষতার নতুন মাত্রা যোগ করা যায়।
১০। কোডিং শিখলে পেশাদারদের কাজগুলি স্বয়ংক্রিয় করা যায়, যার ফলে কাজের দক্ষতা
উন্নত হয়।
বিশ্বে ৭০০ টিরও বেশি প্রোগ্রামিং বা কোডিং ভাষা রয়েছে, যেগুলি বিভিন্ন প্রযুক্তি ও কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা হল : ঈ, ঈ++, ঔধাধ, চুঃযড়হ, ঔধাধঝপৎরঢ়ঃ, ঋঙজঞজঅঘ, জ, এড়, জঁনু, ঐঞগখ, ঈঝঝ, চঐচ, গণঝছখ, .ঘঊঞ ইত্যাদি।
তবে কোডিং শেখার জন্য, প্রথমে সহজ ও বহুমুখী ভাষা দিয়ে শুরু করা ভালো। অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (অও) হলো, মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কম্পিউটারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। এটি বিজ্ঞানের জগতে এক অনন্য আবিষ্কার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে, যন্ত্র বা অ্যাপিস্নকেশনকে মানুষের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির আদলে কাজের উপযোগী করা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি। এজন্য তাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক বলা হয়। তারও আগে ১৯৫০ সালে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ অ্যালান টুরিং (অষধহ ঞঁৎরহম) কোনো যন্ত্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার জন্য একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা 'টুরিং টেস্ট' (ঞঁৎরহম ঞবংঃ) নামে পরিচিত। বর্তমান পৃথিবীতে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নেই। তবে উলেস্নখযোগ্য কিছু ক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে শিক্ষা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, শিল্প-কলকারখানা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, যুদ্ধক্ষেত্র, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন, দৈহিক শ্রম, চালকবিহীন বিমান বা গাড়ী চালানো, কোডিং লিখা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফটের সিইও মোস্তফা সুলেমান জানিয়েছেন যে, এবার শুধু কাজই নয়, এআই মানুষের মতোই কথা বলবে এবং আচরণ করবে।
সম্প্রতি জাপান তার দেশের সাটেলাইট টিভিতে সংবাদ উপস্থাপনের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটের প্রয়োগ ঘটিয়েছে যা বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।
\হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়