শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কের ডামাডোলে শিল্পী সমিতি

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

গত মাসেই দু'জন অভিনেতা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতা বর্তমান প্যানেলের সাইমন সাদিক এবং জয় চৌধুরী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এতে তারা শিল্পী সমিতির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছিলেন তার সারসংক্ষেপ হিসাব অনুযায়ী যা বলতে হয় সেটা হচ্ছে বর্তমান সমিতি স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এখানে কোনো জবাবদিহিতা নেই। নিয়মিত মিটিংয়ের কোনো আয়োজন হয় না। এ রকম নানা টানাপড়েনের মধ্যেই এরপর ঘোষণা দিলেন জায়েদ খানের সঙ্গে একই প্যানেলে আর নির্বাচন না করার কথা অভিনেতা মিশা সওদাগর। তখন বলেছিলেন, 'জায়েদের সঙ্গে নির্বাচন করব কি করব না সেটা মুখ্য নয়। যদি শিল্পীরা চান তাহলে নির্বাচন করব। কার সঙ্গে করব এখনো চূড়ান্ত নয়।' বর্তমানে মিশা সওদাগর অভিনেতা ডিপজলের সঙ্গে যৌথভাবে প্যানেল করার কথা রয়েছে। অন্যদিকে জায়েদ খানও ঘোষণা দিয়েছেন, এবারের শিল্পী সমিতি নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করছেন না। এতে তিনি আরও জানিয়েছেন তার ভাই-বোনেরাই চাচ্ছেন না তিনি আর শিল্পী সমিতি নির্বাচনের অংশগ্রহণ করুন। অর্থাৎ এই শিল্পী সমিতি নিয়ে এখন এমন হতাশা কাজ করছে যে সেটা শিল্পী সমিতির পরিবারকেও জড়িয়ে ফেলেছে। যা বাংলাদেশ শিল্পী সমিতিকে ঘিরে এর আগে কখনোই এমনটি দেখা যায়নি। অথচ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি চলচ্চিত্রের শিল্পীদের কাছে এতদিন একটি প্রাণের সংগঠন হিসেবে ছিল এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। তবে সেই সংগঠন এখন পরিণত হয়েছে চরম বিতর্কিত সংগঠনে। একের পর এক বিতর্ক, নিন্দা-কটুকাটব্য, আলোচনা-সমালোচনা যেন তাকে অক্টোপাশের মতো ঘিরে আছে। কিছুতেই এর পিছু ছাড়ছে না সমিতিকে। আর এই বিতর্ক সবচেয়ে বেশি উগ্র হয়ে উঠতে দেখা গেছে গতবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচন-উত্তর সময়ে। এই সমিতিকে ঘিরে অনেক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ দেখেছে দেশের মানুষ। সমিতির এমন কান্ডকীর্তি নিয়ে উপভোগও করেছে দেশের মানুষ। কীভাবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে টানাহেঁচড়ার মতো বালখিল্য তৎপরতা চলেছে দেখেছে তাও দেশের মানুষ। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে সেই ঘটনা। শিল্পীদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এতসব ঘটনা অবাক করেছে সবাইকে। প্রথম দিকে রায়ে একাধিকবার নিপুণ হেরে গেলেও নাছোড় নিপুণ কিছুতেই হাল না ছেড়ে ফের একের পর এক আপিল করে গেছেন। এক পর্যায়ে দেখা গেছে শেষ পর্যন্ত চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারকেই সাধারণ সম্পাদকের পদটিতে বসতে। তবে এতেও বিতর্ক থামেনি। তবে অনেক সিনিয়র শিল্পীরাও শিল্পী সমিতির কর্মকান্ড নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সময়। ক'দিন আগেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নব্বই দশকের অন্যতম নায়িকা শিল্পী বলেন, কোনো অনুষ্ঠান সকালে হলে তার আমন্ত্রণপত্র বাসায় যায় রাতে। তখন তো যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না। তাছাড়া ফোন করেও কখনো ডাকা হয় না শিল্পীদের। শিল্পী সমিতির শিল্পীরা শুধু সম্মান চায়। কিন্তু অসম্মান পেতে হলে তো সেখান থেকে দূরে থাকাই ভালো। আর শিল্পীদের নির্বাচন হবে সুন্দরভাবে। লাঠিসোটা নিয়ে বসে থাকতে হবে, আদালত পর্যন্ত যেতে হবে। এটা তো কেউ আশা করে না। এদিকে বর্তমান শিল্পী সমিতির সঙ্গে মতের অমিল থাকায় সেখান থেকে ক'দিন আগেই পদত্যাগ করেছেন সমিতির সহ-সভাপতি সাইমন সাদিক। অভিমান থেকে তিনিও এবারের নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচন করবেন না জায়েদ খানও। অবস্থা যখন এই, ঠিক তখন নির্বাচনের আগে শিল্পী সমিতির বনভোজন অনুষ্ঠিত হয় ২ মার্চ। আর সেখান থেকে জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। বনভোজনের মতো আনন্দ আয়োজন থেকে এমন ঘোষণায় অবাক হয়েছেন সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই। বিষয়টি নিশ্চিত করে চলচ্চিত্র পরিষদ নেতা খোরশেদ আলম খসরু জানান, কোনো রূপ সাংগঠনিক দুর্বলতা না পেয়ে জায়েদ খান ব্যক্তিগত আক্রোশ ধারাবাহিকভাবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ সাধারণ সম্পাদকের নামে মিথ্যা, মনগড়া, কুরুচিপূর্ণ কল্পকাহিনী সংবাদ সম্মেলন, ইউটিউব, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় গত ০২/০৪/২০২৩ তারিখে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। এর বিপরীতে জায়েদ খান বলেন, আমি একজন ব্যক্তির আক্রোশের শিকার। শিল্পী সমিতিতে সে নিজের মতো করে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। আমার সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে অন্তত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেটাও করেনি। আমি চিঠিও হাতে পাইনি। তবে আমি আইনিভাবেই সবকিছু মোকাবিলা করব। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এরই মধ্যে চলচ্চিত্রের সিনিয়র শিল্পী মিশা সওদাগর ও ডিপজল নিজেদের প্যানেল ঘোষণা দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে নিপুণ প্যানেল গড়বেন অমিত হাসানকে সভাপতি করে। কারণ বর্তমান সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন নির্বাচন করবেন না। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে শাকিব খানকে সভাপতি করে নির্বাচনে যাওয়ার কথা। তবে শাকিব খান ইতোপূর্বে জানিয়েছেন তিনি কোনো প্যানেল থেকেই সভাপতি হচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, বর্তমান কমিটির অনেকেই এবারের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ পাচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন যায়যায়দিনকে। জানিয়েছেন নিতান্ত অপারগ হয়েই অত্যন্ত দুঃখ ও ভারাক্রান্ত মনে তিনি এই শিল্পী সমিতি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তবে তিনি এও জানিয়েছেন শিল্পী সমিতি যদি চান তাহলে তিনি সমিতির বাইরে থেকেও যতদূর সম্ভব সমিতির কল্যাণে কাজ করে যাবেন। সমিতির আরও অনেকেই তাদের এই প্রাণের সংগঠনটি নিয়ে খুবই হতাশ। কারণ সবার মতের সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলে মনে করেন তারা। এদিকে শিল্পী সমিতির নির্বাচিত সদস্য ও নায়ক জয় চৌধুরী এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, শিল্পী সমিতির নাম চেঞ্জ করে ব্যক্তিগত সমিতি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। অনেকে এমন কথাও বলছেন এক সময় যে শিল্পী সমিতিকে ঘিরে এক অনাবিল আনন্দ-উলস্নাসের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত শিল্পীরা গত বছর থেকে সেটা যেন জাতীয় নির্বাচনের মতো কাড়াকাড়ি-পাড়াপাড়ির পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। এমন বেগতিক অবস্থায় শিল্পী সমিতির একজন সদস্য এবং চলচ্চিত্রের নতুন প্রজন্মের নায়িকা নির্বাচনে দাঁড়াবেন কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'যে অবস্থা দেখতেছি শিল্পী সমিতির- তা দেখে মনে হচ্ছে নিজেও এ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যাই। কিন্তু শিল্পী সমিতির নির্বাচন করে কী লাভ? এতে তো আমি কোনো লাভ দেখি না। যেখানে কোনো লাভই নেই তার পেছনে কেন অযথা সময় ব্যয় করব? বরং নির্বাচন যদি করতেই হয় তাহলে জাতীয় পর্যায়েই নির্বাচন করব।' জানা গেছে, এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কমিশনার হতে যাচ্ছেন খোরশেদ আলম খসরু।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে