ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ইসলাম সমর্থন করে না। বরং এ ব্যাপারে ধর্মীয় মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, তারা নিশ্চিত পথভ্রষ্ট বলে উলেস্নখ করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের সূরা আল মায়িদায় ইরশাদ হচ্ছে, 'হে কিতাবধারী! নিজেদের ধর্ম নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি করো না। আর (ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে) তোমাদের আগে যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়ে ও অন্যদের পথভ্রষ্ট করে সহজ-সরল পথচু্যত হয়েছে, তাদের পথ অবলম্বন করো না।' (আয়াত: ৭৭)
সূরা হুদের ১১২ ও ১১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'হে রাসুল! আপনাকে দ্বীনের পথে যেভাবে অবিচল থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আপনি সেভাবে অটল থাকুন। যারা তওবা করে আপনার সঙ্গে রয়েছে এবং ধর্মের বেষ্টনি থেকে বিন্দুমাত্রও দূরে সরে যায়নি, তারাও অবিচল থাকুক। নিঃসন্দেহে আলস্নাহতায়ালা তোমাদের সমস্ত কর্ম পর্যবেক্ষণ করেন। যারা জুলুম করে, তাদের পথে আকৃষ্ট হয়ো না। তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকিও না। না হয় তোমাদের জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে। আলস্নাহ ছাড়া তোমাদের কোনো বন্ধু নেই। আর তোমাদের
তখন কোনো সাহায্যও করা হবে না।'
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার ব্যাপারেও সূরা বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, 'এটি আলস্নাহর নির্ধারিত সীমারেখা। সুতরাং, সেটা অতিক্রম করো না। যারা অতিক্রম করে, তারাই প্রকৃত জালেম (সীমা লঙ্ঘনকারী)।'
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার বিরুদ্ধে হাদিস শরিফেও এসেছে চরম নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা। ইরশাদ হচ্ছে, 'আলস্নাহর দ্বীন (ধর্ম) খুব সহজ। কেউ এই দ্বীনকে কঠিন করে তুললে সেটা তার ওপরই চেপে বসবে। তাই সবসময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করো।' আবু হুরায়রা (রা.); বোখারী।
(তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না)। 'অতীতে ধর্মচর্চা নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করেছে, তারা নিহত ও ধ্বংস হয়েছে। নবীজী (সা.) তিনবার এ কথার পুনরাবৃত্তি করেন।' আব্দুলস্নাহ ইবনে মাসউদ (রা.); মুসলিম।
'তোমরা ধর্মীয় নিগূঢ় বিষয় নিয়ে (আলোচনা করতে পারো, কিন্তু) কখনো তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে না। সাবধান! অতীতে এই তর্ক-বিতর্ক/বাহাস করতে গিয়েই বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে।' মসজিদে নববিতে একদিন কয়েকজন সাহাবিকে তদদির (অর্থাৎ প্রতিটি সৃষ্টির বিকাশ ধারা ও পরিণতির প্রাকৃতিক আইন) নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত অবস্থায় দেখে নবীজী (সা.) এ কথা বলেন। আবু হুরায়রা (রা.); তিরমিজী।
ইসলাম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা প্রসঙ্গে অন্য এক হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো ভালো ও কল্যাণকর প্রক্রিয়া বা নিয়মের প্রচলন করবে, সে তার পুরস্কার পাবে। সে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে, তাদের পুরস্কারও অতিরিক্ত হিসেবে ধারাবাহিকভাবে তার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোনো ক্ষতিকর বা ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া বা নিয়মের প্রচলন করবে, তাদের সমুদয় শাস্তিও উদ্ভাবনকারী ভোগ করবে। আর বদ নিয়মের অনুসরণকারীরাও যথাযথ শাস্তি ভোগ করবে। জাবির ইবনে আবদুলস্নাহ (রা.); মুসলিম।
ধর্মান্ধতা সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে (ধর্মের নামে) অন্যের বিরুদ্ধে অন্যায় করতে সহযোগিতা করাই হচ্ছে ধর্মান্ধতা। ওয়াসিলা ইবনে আল আকসা (রা.); আবু দাউদ, মেশকাত।
দ্বীনের (ধর্ম বিশ্বাস ও নৈতিক বিধি-বিধানের) মধ্যে বেদাত অর্থাৎ চেতনাবিরুদ্ধ নতুন কিছু সংযোজনের যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করবে। আয়েশা (রা.); বোখারী, মুসলিম।
সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার হযরত আলস্নামা নববি (রহ.) 'আল মিনহাজ' গ্রন্থে এবং আলস্নামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) সহিহ মুসলিমের ভূমিকায় উলেস্নখিত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, 'যারা ধর্মের বিষয়াবলিতে ও কাজকর্মে গভীরতা তালাশ কিংবা খুব বেশি কঠোরতা অবলম্বন করে এবং একসময় সীমাতিক্রম করে ফেলে, তারাই মূলত ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িকারী।' (শরহে মুসলিম লিন নববি : ৮/২২১, দিবাজে শরহে মুসলিম : ৬/৩৪)।
এ প্রসঙ্গে আরও ইরশাদ হচ্ছে, 'নিজেদের ওপর এমন কঠোরতা করো না, যাতে তোমাদের ওপরই কঠোরতা করতে হয়। কেননা, একটি সম্প্রদায় নিজেদের ওপর কঠোরতা করার ফলে আলস্নাহতায়ালাও তাদের ওপর কঠোরতা আরোপ করেছিলেন। এসব তাদেরই অবশিষ্ট স্মৃতিচিহ্ন।' (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯০৬, মুসনাদে আবি ইয়া'লা : ৩৬৯৪)।