শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ খালেদা জিয়াকে বেশি ভোগাচ্ছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

রক্তক্ষরণই সবচেয়ে বড় সমস্যা

হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। চিকিৎসকদের ভাষায়, পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণই খালেদা জিয়াকে বেশি ভোগাচ্ছে। এন্ডোস্কপি, কোলনস্কপি- এ দুটি পরীক্ষা বুধবার রাতে করা হয়েছে। রক্তক্ষরণের সবগুলো সোর্স খুঁজে পাওয়া যায়নি। টেম্পোরারি ব্যবস্থায় রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হচ্ছে। কিছু জমাট রক্ত পরিষ্কার করেছে, এটুকুই। অর্গানগুলো সচল রাখতে চিকিৎসকরা প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। এর বেশি সমন্বিত মাল্টি ফ্যাসিলিটেড চিকিৎসাকেন্দ্র দেশে নেই। তাই যত দ্রম্নত সম্ভব বিদেশে নেওয়ার কথাই বলছেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, গত দুই দিনে তিন দফায় খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি পরীক্ষা করা হয়েছে। সবশেষ বুধবার রাতে করা হয়। দেশের স্বনামধন্য এন্ডোসকপি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর একেএম মোহসিন, সামশুল আরেফিন, নুরুদ্দিন, এফ সিদ্দিকি, শাহাবুদ্দিন ও শেখ শাহাদাৎসহ একটি দল এই পরীক্ষায় জড়িত ছিলেন। তারা নিজেরা বসে আলোচনা করেছেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন।

এর বাইরেও আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে খালেদা জিয়ার। বুধবার তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবারও হাসপাতালের নিচতলায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। এর আগে বুধবার কলোনস্কপি পরীক্ষাসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা করানো হয়। সিটিস্ক্যান করারও কথা রয়েছে। এসব পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর পর্যবেক্ষণ করে মেডিকেল বোর্ড পরবর্তী ব্যবস্থাপত্র দিবেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়া ক্রনিক লিভার ডিজিসের সঙ্গে ক্রনিক কিডনি ডিজিসেও ভুগছেন। লিভারের সমস্যাটা এইবার বেশি হয়েছে। পরিপাকতন্ত্রের রক্তপাত হচ্ছে। কেন খালেদা জিয়ার বারবার রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা নির্ণয় করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বোর্ড। শরীরের খাদ্যনালির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন অর্গানও পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই চিকিৎসক বলেন, আগে থেকেই খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস আথ্রাইটিস রাইট হার্ট ফেলিও'র সমস্যা রয়েছে। দেশের বড় বড় চিকিৎসকরা যৌথভাবে চেষ্টা করছেন। এখন এডভান্স লিভার ডিজিসের সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। মেডিকেল বোর্ড সেগুলোই সুপারিশ করছে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বৃহস্পতিবারও অব্যাহত ছিল। এজন্য তাকে নিয়মিত রক্ত দিতে হচ্ছে। গত সোমবার রাত থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও বৃহস্পতিবার একটু সুস্থবোধ করেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে সামান্য কথা বলেছেন। দুপুরে সামান্য তরল খাবারও গ্রহণ করেছেন। তবে তার শরীর এখনো অনেক দুর্বল। তার দেহে খনিজ অসমতা রয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার অংশ হিসেবে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। খাওয়াদাওয়ার রুচিও কম। খালেদা জিয়ার বর্তমান হিমোগেস্নাবিন ৮.৫০। ডায়াবেটিস ১২-১৩ এর মধ্যে ওঠানামা করছে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক খোঁজখবর নিতে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ছুটে যান। এর মধ্যে নিয়মিত খোঁজখবর নিতে আসা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা নাসের রহমান, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, সুলতানা আহমেদ রয়েছেন। এর বাইরে খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান শিঁথিও নিয়মিতভাবে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে আসেন।

এদিকে উন্নত চিকিৎসায় পরিবারের আবেদনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিগন্যাল পায়নি খালেদা জিয়ার পরিবার। তার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আমরাতো আবেদন করেছি। সরকার যদি একটু নমনীয় হয় আর অনুমতি দেয় তাহলে প্রস্তুতি নিতে পারব। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়াটা খুবই জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে