শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা মহামারি

বিশ্বে সংক্রমণ-মৃতু্য ফের ঊর্ধ্বমুখী

এক দিনে করোনায় আক্রান্ত ৩৫ লাখ, মৃতু্য আরও ১০ হাজার সংক্রমণ বাড়লেও বিধিনিষেধ তুলে নিল যুক্তরাজ্য-অস্ট্রিয়া
যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃতু্য ও আক্রান্তে আবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৩৫ লাখে। ফলে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৪০ লাখের ঘর। অন্যদিকে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃতু্য ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট 'ওয়ার্ল্ডোমিটার' থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংবাদসূত্র : এএফপি, ওয়ার্ল্ডোমিটার, রয়টার্স, এপি, বিবিসি

এই সময়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। তালিকায় এরপরই রয়েছে ব্রাজিল, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, আর্জেন্টিনা ও কাজাখস্তানের মতো দেশগুলো।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ হাজার ২২১ জন। অর্থাৎ, আগের দিনের তুলনায় মৃতু্যর সংখ্যা বেড়েছে আট শতাধিক। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৫৬ লাখ ৪৮ হাজার।

একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮ জন। অর্থাৎ, আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন লাখ। এতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৬১ জন এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৭৬২ জন। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত সাত কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার ৪০৪

জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং আট লাখ ৯৮ হাজার ৬৮০ জন মারা গেছেন।

দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৫৭ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৬৯২ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৮০১ জন এবং মৃতু্য হয়েছে তিনি লাখ ২৮ হাজার ১০৫ জনের।

ফ্রান্সে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ২৮ হাজারের বেশি এবং মারা গেছেন ২৫৮ জন। মহামারির শুরু থেকে এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ৫৫৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এক লাখ ২৯ হাজার ৭৪৭ জন মারা গেছেন।

লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃতু্যর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬০৬ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮ জন। অপরদিকে, মহামারির শুরু থেকে এথন পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৫০ জন এবং মৃতু্য হয়েছে ছয় লাখ ২৪ হাজার ৫০৭ জনের।

এদিকে, চীনের রাজধানী বেইজিংয়েও নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তারই মধ্যেই সেখানে শুরু হতে চলেছে ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক। অলিম্পিকের ঠিক আগে যেভাবে সেখানে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে চিন্তায় পড়েছেন কর্মকর্তারা। আদৌ শেষপর্যন্ত অলিম্পিকের আয়োজন করা যাবে কি-না, তা নিয়েও কোনো কোনো মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

উলেস্নখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) করোনাকে 'বৈশ্বিক মহামারি' হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে সংস্থাটি।

করোনা বিধিনিষেধ তুলে নিল

যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রিয়া

এদিকে, যুক্তরাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জন আক্রান্ত এবং ৩৪৬ জনের মৃতু্যর পরও করোনা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে দেশটি। মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা এবং কোভিড পাস এখন আর প্রয়োজন হবে না। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার থেকেই এসব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলছেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রম সফল হওয়া এবং কোভিডের চিকিৎসা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারায় বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কার্যালয়ের মুখপাত্র বলেন, মাস্ক পরার বিষয়টি এখন ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তবে কিছু দোকানি জানিয়েছেন, তারা লোকজনকে মাস্ক পরেই তাদের দোকানে আসতে বলবেন। রেল কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, যাত্রীরা মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন এমনটাই তারা আশা করছেন। তবে সবাই বলছেন, তারা অন্যদের উৎসাহ দেবেন। এ ক্ষেত্রে কাউকে জোর করা হবে না।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন সার্ভিসে মাস্ক বাধ্যতামূলকই থাকবে। একই সঙ্গে তিনি লোকজনকে সঠিক কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সরকার বলছে, ভিড়ের মধ্যে এবং আবদ্ধ স্থানে লোকজনকে মাস্ক পরার পরামর্শ থাকছেই। কোনো প্রতিষ্ঠানে কোভিড পাসের প্রয়োজন হবে কি-না, তা সেই প্রতিষ্ঠানের ওপরই নির্ভর করছে বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্বের অনেক দেশই যখন নতুন করে লকডাউন এবং বিধিনিষেধ জারি করছে, তখন ভিন্ন পথে হাঁটছে যুক্তরাজ্য। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে।

এদিকে, অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহ্যামার জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা তার মন্ত্রিসভাকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন লকডাউন করে রেখে বিশেষ লাভ হবে না। সে কারণেই যারা টিকা নেননি, তাদের জন্য ঘোষিত লকডাউনও তুলে দেওয়া হলো। তবে টিকাহীন ব্যক্তিরা রেস্তোরাঁয় যেতে পারবেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ছাড়া অন্য জায়গায় প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু তারা বাড়ি থেকে বেরতে পারবেন।

চ্যান্সেলর কার্ল জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হচ্ছে, দেশে করোনার সংক্রমণ তখন বাড়ছে। কিন্তু সংক্রমণ বাড়লেও তা ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা ফাঁকা আছে। আইসিইউতেও যথেষ্ট জায়গা আছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, নতুন ঢেউয়ে মানুষ সংক্রমিত হলেও খুব বেশি অসুস্থ হচ্ছেন না। সে কারণেই লকডাউন পুরোপুরি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উলেস্নখ্য, ওমিক্রনের ঢেউয়ে অস্ট্রিয়াই প্রথম কড়া লকডাউনের ঘোষণা করেছিল।

লকডাউন তুলে নিলেও অস্ট্রিয়াই প্রথম দেশ, যারা করোনার টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক বলে আইন পাস করেছে। সাবালক সব ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনার টিকা নিতে হবে। এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভও শুরু হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ সপ্তাহান্তে এর বিরুদ্ধে সমাবেশ করছেন। কিন্তু চ্যান্সেলর জানিয়ে দিয়েছেন, তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরবেন না। টিকা নিতেই হবে। আগামী মাস থেকেই টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের আশা, বিক্ষোভ-সমাবেশ হলেও শেষ পর্যন্ত মানুষ টিকা নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে