বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
ফখরুলের জামিন নিয়ে রুল

তখন এত তাড়া দেখালেন, এখন নেই কেন :হাইকোর্ট

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তখন এত তাড়া দেখালেন, এখন নেই কেন :হাইকোর্ট

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগে করা মামলায় জামিন প্রশ্নে রুল শুনানি চলতি সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন দায়েরকারী আইনজীবীর পক্ষে এক আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেন। এর আগে এই আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, 'তখন এত আর্জেন্সি (তাড়া) দেখালেন,

এখন নেই কেন?'

মামলাটিতে গত ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মির্জা ফখরুলের জামিন প্রশ্নে রুল দেন। মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

রুল শুনানির দিন ধার্যের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর আদালতে আরজি জানান মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল শুনানির জন্য ৩ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে। বিষয়টি শুনানির জন্য বেলা ১১টায় সময় ধার্য ছিল।

ক্রম অনুসারে উঠলে আবেদনকারীর পক্ষে একজন আইনজীবী বলেন, 'প্রে ফর নট দিস উইক, পারসনাল ডিফিকাল্টিজ' (চলতি সপ্তাহে না করার জন্য আরজি জানাচ্ছি, ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য)। তখন আদালত এই আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, কার পক্ষে বলছেন? তখন এই আইনজীবী বলেন, আইনজীবী সগীর হোসেনের পক্ষে।

আদালত বলেন, জামিন আবেদন দায়েরকারী আইনজীবী কে? তখন এই আইনজীবী বলেন, সগীর হোসেন। এ সময় আদালত বলেন, 'তখন এত আর্জেন্সি (তাড়া) দেখালেন, এখন নেই কেন?' তখন এই আইনজীবী বলেন, 'পারসনাল ডিফিকাল্টিস' (ব্যক্তিগত অসুবিধা)।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আবদুর রাফেল হলফনামা (রুলের জবাবসংক্রান্ত) দাখিল করেন। পরে আদালত চলতি সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন। আদালত থেকে বের হওয়ার সময় জানতে চাইলে আবেদনকারী এই আইনজীবী বলেন, তার নাম ওয়ালী উদ্দিন।

'আদালত বর্জন' কর্মসূচিতে সাড়া নেই

এদিকে বুধবার বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের 'আদালত বর্জন কর্মসূচি'র তৃতীয় দিবসে ঢাকার উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে প্রায় স্বাভাবিক কাজকর্ম চলে। যদিও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং শীতের কারণে এদিন আদালতে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কম। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজদের অনেকে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাজে ব্যস্ত থাকায় আদালতে বসেননি।

'গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচারের নামে অবিচার বন্ধের দাবি' নিয়ে ১ থেকে ৭ জানুয়ারি আদালত বর্জনের এই কর্মসূচি দিয়েছেন ভোট বর্জন করা দল বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। তবে এ কর্মসূচির ফল নিয়ে আশাবাদী নন খোদ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরাও। তাদের একজন নাম গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, এভাবে আদালত বর্জনের কর্মসূচি দিয়ে 'কোনো লাভ নেই'।

১৯৯০-এর দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আদালত বর্জন কর্মসূচির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'এভাবে আন্দোলন সর্বাত্মক হয় না। আমরা এজলাসে ঢুকে মামলার শুনানিতে অংশ না নিলেও নির্দলীয় আইনজীবদের দিয়ে, কনিষ্ঠ আইনজীবীদের দিয়ে শুনানি করাচ্ছি। তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়াল? ছোট শুনানি তাদের দিয়ে করাচ্ছি আর বড় শুনানরি জন্য তাদের দিয়েই সময় চাইছি। কেমন করে তাহলে আদালত বর্জন হলো?'

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকার আদালতপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ, বিশেষ বিভাগীয় জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালসহ বিভিন্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণসহ অন্যান্য শুনানি চলছে।

ঢাকার ১ নম্বর দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনালের বিচারক মো. রফিকুল ইসলাম চারটি মামলায় সাক্ষ্য শুনেছেন। এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আবু আবদুলস্নাহ ভূঞা বলেন, আদালত বর্জন 'কেউ মানছেন না'।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি মিজানুর রহমান সজল অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলেন, বর্জন কর্মসূচি সফল না হলেও বিএনপি সমর্থক কয়েকশ' আইনজীবী এজলাসে প্রবেশ না করায় স্বাভাবিক দিনের তুলনায় ভিড় কম।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বারের আইনজীবী সমিতির মূল ভবনের সামনে সমাবেশ করেন। সেখানে তাদের কর্মসূচির পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার পর মিছিল করা হয়।

মিছিলটি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত, মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে