শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
জনসভায় শেখ হাসিনা

ভোট বন্ধের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে

'বিএনপি গণতন্ত্রের পথে আসেনি, মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল' 'এবার কেউ বলতে পারবে না যে, দিনের ভোট রাতে হয়েছে' 'বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করেছিল'
যাযাদি রিপোর্ট
  ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল সমাবেশে জাতীয় পতাকা তুলে উপস্থিত জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ফোকাস বাংলা

সব বাধা উপেক্ষা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'অনেকেরই অনেক রকম স্বপ্ন আছে, অনেকেই নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল, ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না আসে সেটা ঠেকাতে চেয়েছিল, তারপরেও ৪১ দশমিক ৮ ভাগ ভোট পড়েছে সাধারণ নির্বাচনে। এটা সোজা কথা না, খুবই বড় কথা। আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে আরেকটি দল তখন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে।' বুধবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এবারের নির্বাচনে কেউ বলতে পারবে না যে, রাতে ভোট দিয়েছে, দিনের ভোট রাতে দিয়েছে, ভোট কারচুপি হয়েছে, তা বলার কোনো ক্ষমতা নেই। অত্যন্ত স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটা আপনারা দেখেছেন। আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন আইন করে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই নির্বাচন কমিশনকে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করতে দিয়েছি। কোনো রকম হস্তক্ষেপ আমরা করিনি, সহযোগিতা করেছি।' আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, 'সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কিছুই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত-যেন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। আমরা কখনো হস্তক্ষেপ করিনি।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করেছিল মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, 'অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসেছে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল সৃষ্টি করে, আর কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে। যার ওপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী, যদিও '৭৫ এর পরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করে। বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করানো হয়। তারা মুক্তি পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন।' শেখ হাসিনা বলেন, '১৯৮১ সালে আমাকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। আমি ফিরে আসি এমন একটি দেশে, যেখানে আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের বিচার করবেন না বলে ইনডেমনিটি জারি করে, তাদেরকে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের চাকরি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের যে দোসর, আলবদর রাজাকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে লুটপাট করেছিল, আমাদের দেশে মা-বোনদের পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল, ক্যাম্পে নিয়ে মাসের পর মাস নির্যাতন করেছিল। সেই সব যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার শুরু জাতির পিতা করেছিলেন। ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় আসে তারা তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী বানায়, প্রধানমন্ত্রী বানায়, তাদেরকে ক্ষমতা বসায়।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একদিকে খুনি, আরেকদিকে যুদ্ধাপরাধী তারাই ক্ষমতায়। সেই অবস্থায় আমি ফিরে আসি। জনগণের ভোট ও ভাত নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে ফিরে আসি। দারিদ্র্যে জর্জরিত ছিল এ দেশের মানুষ, দুর্ভিক্ষ লেগেছিল। জাতির পিতার যে আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন এ দেশে মানুষকে নিয়ে সেটা পূরণ হয়নি। এ দেশে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, কি কি কাজ করা দরকার, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি গড়ে তুলবেন সে ভাষণই তিনি এ জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ ৯ মাস কারাগারে বন্দি, সে মিলওয়ালা জেল, শীতের সময় বরফ, গরমের সময় গরম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কীভাবে রেখেছিল তারা, সঠিকভাবে খাবারও দিত না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, কোনো পত্রিকা কাগজ কোনো কিছুই ছিল না?তার বিরুদ্ধে মামলা এবং ফাঁসির হুকুম, সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে, লন্ডন হয়ে বাংলাদেশের মাটিতে ছুটে এসেছিলেন বাংলার জনগণের সামনে।' তিনি বলেন, '১০ জানুয়ারি এখানেই তিনি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে একটি দেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চিন্তা-পরিকল্পনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ, সেটাই তিনি তুলে ধরেছিলেন।' জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষের কোনো কিছু ছিল না। থাকার ঘর নেই, বাড়ি নেই, তাদের ভবিষ্যৎ নেই, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজেকে উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন।' বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, 'তারা গণতন্ত্রের পথে আসেনি। মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। তাই মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।' বিএনপির আর ভবিষ্যৎ নেই: কাদের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, 'খেলা শেষ, ফাইনাল হয়ে গেছে। ৭ জানুয়ারি কী হলো? বিএনপি একটা ভুয়া দল, এদের আন্দোলন ভুয়া, এদের কর্মসূচি ভুয়া, ওদের ২৮ দফা ভুয়া, এক দফা ভুয়া, ওদের 'বাইডেনের উপদেষ্টা' ভুয়া, ওদের নেতা তারেক ভুয়া। আসল ভুয়া ডাক দেয় লন্ডন থেকে, কেউ শোনে না। তাদের বর্তমান ভুয়া, তাদের আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই, শুধু অন্ধকার।' তিনি বলেন, 'এখন নতুন খেলা। এখন খেলা রাজনীতির খেলা, নির্বাচনের খেলা শেষ পাঁচ বছরের জন্য। এখন খেলা হবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, খেলা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লুটপাট, সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।' বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং পরে তাকে হত্যার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, 'কে বলে বঙ্গবন্ধু তুমি নেই? তুমি আছ বাংলার কৃষকের লাঙ্গলের ফলায়, শ্রমিকের হাতুরির গায়তিতে, তুমি আছ বাংলার মাঝি মালস্নার ভাটিয়ালি গানে।' এর আগে জনসভায় দলে দলে যোগ দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার দুপুরের আগে থেকেই ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সমবেত হন জনসভাস্থলে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাটের গেট, টিএসসি সংলগ্ন গেট, রমনা কালীমন্দিরের গেট, তিন নেতার মাজার গেট দিয়ে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। আর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেট দিয়ে প্রবেশ গেট ভিআইপিদের জন্য রাখা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে