বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
দিনাজপুরে সর্বনিম্ন ৮ ডিগ্রি

মাঘের শীতে বৃষ্টির হানা ১০ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ

কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ বরিশালে বৈরী আবহাওয়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কনকনে ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ার মধ্যেই বৃহস্পতিবার খুলনায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। মাঘের শীত ও বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাচ্ছে। ছবিটি নগরীর বাস্তুহারা থেকে তোলা -সংগৃহীত

দেশের তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার আরও কমেছে। এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। এদিনও তীব্র কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। মাঘের তীব্র শীতের মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণের কিছু এলাকায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কুয়াশার মধ্যে মাঘের শীতের এই বৃষ্টি বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার অন্তত ১০ জেলার ওপর দিয়ে বইছিল মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

অন্যদিকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। বৃহস্পতিবার নীলফামারীর কোথাও ৯ ডিগ্রি আবারও কোথাও ৮.২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হলেও দিনাজপুরে বন্ধ হয়নি বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ যেসব এলাকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমেছে, সেসব এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বরিশালে বৈরী আবহাওয়ার কারণে

মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও খোলা ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় ঝলমলিয়ে রোদের দেখা মিললেও দুপুরের পরপরই ঘনমেঘে ঢেকে যায় আকাশ। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে কয়েকটি স্থানে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এদিনও রাজধানীতে কমেছে তাপমাত্রা, বেড়েছে শীতের প্রকোপ। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বুধবার ছিল ১৩.১ ডিগ্রি। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮.২ ডিগ্রি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর অঞ্চলের প্রতিটি স্থানেই তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রেকর্ড হয়েছে। এদিন রংপুরের আট জেলায় বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এছাড়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এলাকার মধ্যে ছিল কিশোরগঞ্জ ও নওগাঁ।

ঘন কুয়াশায় রানওয়ে দেখতে না পারায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি বিমান অবতরণ করতে পারেনি। এসব ফ্লাইটের একটি ভারতের মুম্বাইয়ে এবং দুটি কলকাতা ও চট্টগ্রামে অবতরণ করে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তিনটি ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি। ঢাকার আকাশে কয়েকবার চক্কর দিয়ে ফ্লাইটগুলো মুম্বাই, কলকাতা ও চট্টগ্রামে গিয়ে অবতরণ করে। পরে ডাইভার্ট হওয়া ফ্লাইটগুলো সকাল সাড়ে ৯টা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে আসতে শুরু করে। এছাড়া ঘন কুয়াশায় সকালে বেশ কয়েকটি ফ্লাইটের উড্ডয়ন বিলম্বিত হয়।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপের অবস্থান রয়েছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

দেশে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে জানুয়ারি মাসে। এ নিয়ম মেনেই চলতি জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই শীত পড়তে শুরু করে। শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ, সেই সঙ্গে কুয়াশা। মাঝেমধ্যে কিছু এলাকায় রোদের দেখা মিলেছে। তবে জানুয়ারি মাসে এই কুয়াশাকে একেবারে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন না আবহাওয়াবিদরা। তবে তারা বলছেন, আজ শুক্রবার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশা অনেকটা কেটে যাবে।

আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান বলেন, 'দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হওয়ার ফলে শুক্রবার থেকে কুয়াশা কাটতে শুরু করবে। তবে বৃষ্টির পর শীতের তীব্রতা শিগগিরই কমবে না।'

দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, চলতি শীত মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে দিনাজপুরে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে রয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। টাকা ১১ দিন মানুষ ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারছেন না। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলে না এ জেলায়।

ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার প্রকোপে বাজছে শীতজনিত রোগ। তীব্র শীতেও বৃহস্পতিবার দিনাজপুরেও খোলা ছিল বেশিরভাগ স্কুল। তবে বে-সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোকে বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।

আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান জানান, দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী সপ্তাহে রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাতে পারে।

রাজারহাটে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, জেলায় ৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার দুপুরে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও ছিল না তেমন উত্তাপ।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, জেলায় তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক। সে কারণে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস দ্রম্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেন।

এদিকে হিম শীতল আবহাওয়া ও কনকনে শীতে কাতর হয়ে আছে মানুষসহ গবাদি পশুগুলো। বাধ্য হয়ে গরম কাপড় ও পাটের বস্তা দিয়ে গবাদি পশুর গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে গত দেড় সপ্তাহে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি কাশিসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, 'জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছি। তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।'

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, 'জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বরিশালে বন্ধ হয়নি প্রাথমিক বিদ্যালয়

এদিকে, তীব্র শীত আর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বৈরী পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বরিশালের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও খোলা ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। ফলে ভোরে শীত উপেক্ষা করে, বৃষ্টিতে ভিজে কোমলমতি শিশুদের স্কুলে আসতে দেখা গেছে। সপ্তাহখানেক ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা কম হলেও যারা আসছে তারা অনেকেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুটি, বাবুগঞ্জ উপজেলার তিনটি, সদর উপজেলার চরামোদ্দি ইউনিয়নের ৫নং গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিটি কর্পোরেশন এলাকার এ কাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোর্ট, রসুলপুর, কাউনিয়া হাজেরা খাতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রয়েছে।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি একেবারে কম। তারপরও অনেক শিক্ষার্থী ভিজে ক্লাসে আসছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ রাখা যেত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা না পাওয়ায় বৈরী আবহাওয়ায়ও খোলা রাখা হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও বিভাগের সব জেলায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল খোলা ছিল বলে বিভাগীয় প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জেলা সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জানান, বৈরী আবহাওয়া হলেও আমারা স্কুল বন্ধের কোনো নির্দেশনা পাইনি। মূলত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।

বিভাগীয় উপ-পরিচালক মিস নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, 'সরকারের নির্দেশনা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু বিভাগের কোথাও ১০ ডিগ্রির নিচে আমরা পাইনি। এজন্য স্কুল বন্ধ করা হয়নি। তারপরও জেলা অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া আছে ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে স্কুল বন্ধ করে দিতে।'

তিনি বলেন, 'বরিশালের কোথাও ৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু আপনারা (সাংবাদিক) গতকালও বলেছেন ভোরে ৯ ডিগ্রির মতো ছিল। অথচ আমরা আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করে পেয়েছি ১০ এর ওপরে। এভাবে হলে তো বিভ্রান্তি ছড়াবে।'

মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন জানিয়েছেন, 'তাপমাত্রা হ্রাস ও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় মাধ্যমিক শ্রেণির সব বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে।'

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহমেদ ও পর্যবেক্ষক হুমায়ূন কবির জানান, 'বুধবার বরিশালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯ ডিগ্রির নিচে নামলে সেটিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তাপমাত্রা রয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর থেকেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আরও বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

শীতে জবুথবু পাহাড়ি জনজীবন

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির ওপর দিয়েও বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। মাঘের তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে পাহাড়ি জনজীবনে। বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দিনের অর্ধেকে গিয়ে সূর্যের দেখা মিললেও কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামসহ জেলা সদরের এলাকাগুলো।

বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শীতের প্রভাবে প্রায় বিপর্যস্ত পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির সাধারণ মানুষের জনজীবন। বিশেষ করে বিভিন্ন উপজেলা ও পাহাড়ি গ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে জেলা সদরের বাজারগুলোতে বিক্রি করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। ঘন কুয়াশার কারণে যারা কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া করেন তাদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জেলা সদর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় যেসব ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করতে কুয়াশার কারণে যাত্রাপথে সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌযান চালকরা।

রাঙামাটি থেকে লংগদু উপজেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এমএল কবীর লঞ্চের চালক ইসমাইল বলেন, 'সকাল ৭টায় আমাদের প্রথম লঞ্চটি রাঙামাটি থেকে ছেড়ে যায়। কিন্তু তখন সূর্য উঠে না আর চারপাশে প্রচুর কুয়াশা থাকে। তাই আমাদের পথ দেখতে কষ্ট হয়। কারণ সকালে জেলেরা মাছ ধরার জন্য হ্রদে জাল ফেলে। কিন্তু দেখা না যাওয়ার কারণে অনেক সময় লঞ্চ জালের উপর দিয়ে গেলে জাল ছিঁড়ে যায়। তাছাড়া কুয়াশার কারণে ছোট নৌকাগুলোও দেখা যায় না। আমরা লাগাতার হর্ন বাজিয়ে চলাচল করছি।'

তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের ওপর। শীতের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে, ধস নেমেছে ক্ষুদ্র দোকানিদের ব্যবসায়।

শহরের শহীদ মিনার এলাকায় বাদাম বিক্রি করতে আসা ইউসুফ আলী বলেন, 'যখন থেকে শীতের তীব্রতা বেড়েছে তখন থেকেই আমাদের ব্যবসা খুব খারাপ। কারণ বিকাল হতে হতেই শীত বাড়তে থাকে, তাই কেউ আর বাইরে থাকতে চায় না।'

ষাটোর্ধ্ব পিঠা বিক্রেতা আজগর মিয়া বলেন, 'যদিও আমি শীতের খাবার পিঠা বিক্রি করি, কিন্তু শীতের কারণেই এখন ব্যবসা একেবারে ঠান্ডা। শীত বেশি বলে মানুষ এখন এদিকে কম আসে আর আমাদের ব্যবসাও কম হয়।'

তবে শীতের কারণে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে বিদেশি ব্র্যান্ডের পুরাতন শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে। ফুটপাত এবং অস্থায়ী বিভিন্ন দোকানে শীতের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ক্রেতাদেরও আগ্রহ রয়েছে কমদামি এই শীতবস্ত্রগুলোতে।

পুরাতন শীতবস্ত্রের দোকানদার আবু তাহের বলেন, 'শুক্রবার থেকে বেশ ভালোই শীত পড়েছে। তাই বর্তমানে আমাদের বেচা বিক্রিও বেশ ভালো। পুরাতন জ্যাকেট আর সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি কম্বল ও বস্ন্যানকেটও ভালোই চলছে।'

রাঙামাটি আবহাওয়া কার্যালয়ের সিনিয়র অবজারভার ক্য চিনু মারমা বলেন, 'সারাদেশের মতো রাঙামাটিতেও খুব ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির ভেতরে আছে এবং আগামী কয়েকদিনও তাপমাত্রা এমনই থাকতে পারে।'

নীলফামারী তাপমাত্রা কমলেও খোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নীলফামারীর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কম থাকলেও নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ডিমলা আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বিচারে এটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

শৈত্যপ্রবাহ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে স্কুল-কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। তবে এ নির্দেশনা মানা হয়নি নীলফামারী জেলায়।

একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এখন পর্যন্ত স্কুল বন্ধের কোনো নির্দেশনা পাননি। তাই স্কুল খোলা রেখেছেন। নির্দেশনা পেলে স্কুল বন্ধ করবেন তারা।

জেলা সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের কিসামত দলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়ালিউল হাসনাত বলেন, 'প্রজ্ঞাপন দেখেছি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে থাকলে স্কুল বন্ধ দেওয়ার কথা। কিন্তু জেলা অফিস থেকে আমরা এখনো এরকম কোনো নির্দেশনা পাইনি তাই স্কুল চলমান রয়েছে।'

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, 'সকাল ৯টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। তবে স্কুল চালুর পর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে এজন্য কোনো স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। আর আমি বন্ধ করার কেউ না সেটা বন্ধ করবে বিভাগীয় উপপরিচালক। তিনি আমাদের ও আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।'

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা খোঁজ রাখছি এবং প্রতিদিন রিপোর্ট দিতে হচ্ছে কত ডিগ্রি পর্যন্ত আছে। বুধবার রাত পর্যন্ত ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সংগ্রহ করেছি। যেহেতু জেলা শহরে কোনো আবহাওয়া অফিস নাই, আছে সৈয়দপুর ও ডিমলায় সেজন্য আমরা মোবাইল অ্যাপসে তাপমাত্রা দেখি। আজকে আবহাওয়া ভালো আছে এজন্য সব স্কুল খোলা রয়েছে।'

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে