রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে আজ

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু শনিবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা

রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আজ সকাল ১০টায় ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মেলায় সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া এবং ভারতসহ কয়েকটি দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলায় যাতায়াত সুবিধার জন্য গতবারের মতো শাটল বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকবে। কুড়িল বিশ্ব রোড হতে এক্সিবিউশন সেন্টার পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

এদিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আগত দর্শনার্থী বা ভোক্তারা যেন প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ নজরদারি রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মেলায় কোনো ভোক্তা

বা দর্শনার্থী যেন প্রতারিত না হয় সে জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে মেলায় অভিযোগ বাক্স ও হেল্প ডেক্স রাখা হবে। অভিযোগ পেলেই যাচাইবাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এ বছর মেলা প্রাঙ্গণকে দৃষ্টিনন্দন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে সামনে আনার জন্য মেলার প্রবেশদ্বার করা হয়েছে কর্ণফুলী টানেলের আদলে। এক পাশে রূপপুর পরমাণু বিদু্যৎকেন্দ্র ও অপর পাশে বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনালের প্রতিচ্ছবি রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের মূল লক্ষ্য রপ্তানিকে বহুমুখী করার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো। গার্মেন্টেস খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় পণ্যের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করা।'

তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা এখন পাট এবং চামড়া শিল্পের ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছি। এই দুই খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করুক না কেন, আমরা সারা বছর সেটা নিয়ে কাজ করবো।'

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ওর্ যাব নিয়োজিত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মেলা প্রাঙ্গণ ও প্রাঙ্গণের বাইরে নিয়মিত টহল দেবে।

আহসানুল ইসলাম বলেন, মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল ও এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে সঙ্গে সংযুক্ত করতে ফার্মগেট থেকে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে উত্তরা থেকে যারা মেলায় আসবে তারা মেট্রোরেলে এসে ফার্মগেট থেকে বাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সোজা মেলায় চলে আসতে পারেন সেই সুবিধা রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইপিবি) জানিয়েছে, এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ অংশ নেবে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজার খোঁজার লক্ষ্য রয়েছে।

এই নিয়ে পূর্বাচলে স্থায়ী মেলা কমপেস্নক্সে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৪। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে (সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত)।

মেলায় প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে দেশীয় বক্স, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস কিট, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, পস্নাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য।

এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, উন্নত শিল্প সমৃদ্ধ-সোনার বাংলা বিনির্মাণে জাতির পিতার অবদান ও ভাবনা, দেশের উন্নয়ন ইত্যাদিকে প্রক্ষেপণ করে এবারের বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন অধিকতর নান্দনিক, ভাবগাম্ভীর্য ও অর্থপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে।

সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি অস্থায়ী সচিবালয়। দর্শনার্থীদের সব প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য রয়েছে একটি তথ্যকেন্দ্র। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য মেলায় থাকছে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের একাধিক ব্যাংক বুথ। এছাড়া মেলায় থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের সার্ভিস বুথ। মেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্ব রোড হতে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ও কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসের ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলা চলাকালীন এ বাস সার্ভিস চালু থাকবে।

মেলার প্রবেশ টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা (প্রাপ্ত বয়স্ক) এবং শিশুদের (১২ বছরের নিচে) ক্ষেত্রে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীরা তাদের কার্ড প্রদর্শনপূর্বক বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। মেলার টিকিট অনলাইনেও বিক্রয় করা হবে। বিকাশের মাধ্যমেও ডিসকাউন্টে টিকিট বিক্রি করা হবে।

এর আগে শনিবার সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। অনেক স্টল পুরোপুরি গোছানো হলেও কিছু স্টলে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। স্টলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, যেহেতু রোববার থেকে মেলার উদ্বোধন তাই শনিবার রাতের মধ্যেই স্টলের কাজ শেষ করতে চান তারা। হোম টেক্সটাইলের দায়িত্বে থাকা শহিদুল ইসলাম বলেন, 'কাজ অনেকটাই শেষ। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা হতো শেরেবাংলানগরে। কোভিড মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এরপর মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলার আয়োজন করা হয় পূর্বাচলে বিবিসিএফইসিতে। এবার তৃতীয়বারের মতো স্থায়ী ভেনু্য বাংলাদেশ-চীন এক্সিবিউশন সেন্টারে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনের অর্থায়নে পূর্বাচলে স্থায়ী বাণিজ্য মেলা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে